Post View : 14
 

‘Home is where the heart is’

——-
রবীন্দ্রনাথ তার “একটি শিশির বিন্দু” কবিতায় লিখেছেন,
“দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শিষের উপর
একটি শিশির বিন্দু।”

জীবন, জীবিকা, তাগিদ, তাগাদার জন্য নাড়ি ছিঁড়ে, মা বাবা দাদা দাদীর স্মৃতি বিজড়িত মাটির ছোট ঘর, নিজের শৈশব বিজড়িত অধুনা বিলীন-বিদ্যুৎবিহীন, অভাব অনটনের বাড়ি ফেলে শুরু করেছিলাম অবিরাম পথচলা- তার অন্ত নেই, যদিও অন্তর সবসময় ফিরে চলে মাটির ঘরে টিনের শব্দে বৃষ্টির শব্দের আবাহনে!

আমাদের মতো যাদের আনন্দ বিল-মাঠ-ঘাটে দৌড়ছুট, যাদের প্রশান্তি বাদাম তলায় বাঙ্কু বা টুলে বিছানায় বা উপরে আকাশ নিচে মাটির আইলকে বালিশ বানিয়ে স্বস্তির বিকাল উপভোগ, অবাধ নদী বা দিগন্তজোড়া বিলে দৌড়ে দৌড়ে যারা নিজেদের ম্যাকগাইভার, টারজান বা হারকিউলিস ভেবে বড় হয়েছে, তাদের কাছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নান্দনিক ইনটেরিয়র করা ১০০ বা ২০০ বর্গফুটের অফিসকক্ষ কখনো দিতে পারেনা সত্যিকারের প্রশান্তি..

তবুও জীবিকার তাগিদে ব্যস্ততা দেযনা অবসর: প্রকৃত প্রকৃতির সৌন্দর্য ক্ষণিকের জন্য বিস্মৃত, যেমনটি Wordsworth বলেছেন:
“The world is too much with us; late and soon,
Getting and spending, we lay waste our powers;—
Little we see in Nature that is ours;”

মাঝে মাঝে স্বস্তি সৌন্দর্য উপভোগে ছুটে চলি সমুদ্র, পাহাড় বা হিমাচলে! চোখ ভরে দেখি, মন ভরে উপভোগ করি, তবে অন্তর দিয়ে উপলব্ধি কি সম্ভব? হয়তো না।

ইমরুল সাহেদ ভাইয়ের ভাষায়:
“এতসব সৌন্দর্য দেখে আসার পরেও যখন নিজের মাটি ছুঁয়ে দেখতে পারি, তখন Judy Garland এর ভাষায় আপনা আপনি মুখে ফুঁটে বেরিয়ে আসে-
“There’s no place like home.”

নিজের জন্মভূমির চেয়ে শান্তির, নিজের মাতৃভূমির চেয়ে সুন্দর আর কিছুই নেই। সমস্ত পৃথিবী একদিকে, নিজের জন্মভূমির তুলনা অন্যদিকে। ”

এসবের মাঝে যখনই সময় পাই, গ্রামে যাই, তখনই নতুনরূপে ধরা দেয় প্রাণের আলয়, বাড়ি, ঘাট, উঠোন, পুকুর, বিল, বাজার, কবরস্থান, মসজিদ, ধানের মাঠ, গ্রামের ওপাশে ছোট নদী, ঘাটে বাঁধা নৌকা, ক্লান্ত কৃষাণ মাঝি ইত্যাদি।।।

এসবে ভরে উঠে হৃদয়, গেয়ে উঠে গুনগুনি সুরঃ বেসুরা কন্ঠও বলে উঠে::

“আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন, আমি বাংলায় বাঁধি সুর
আমি এই বাংলার মায়া ভরা পথে, হেঁটেছি এতটা দূর…””


নাজিম
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩