স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?”

Mar 25, 2024 | ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-রাজনীতি, গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস, নতুন কিছু | 0 comments

Post View : 7
 

‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,

কে বাঁচিতে চায়?”

———-
(১)
স্বাধীনতা কি শুধুই স্বাধীন দেশে বসবাস করা? রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জাজেক রুশো বলেছেন, ‘Man is born free, but everywhere he is in chains”. স্বাধীনতা যেমন স্বেচ্ছাচারিতা নয়, তেমনি উদার বাঁধহীন জীবনযাত্রাও নয়, বৈ কী!
নিয়মের বেড়াজালে থেকে মানুষ নাগরিক হিসেবে তার জীবনযাপন প্রায়ই শৃঙ্খলিত করে ফেলেছে! এর দু’মুখী প্রভাবই আছে।

প্রকৃত স্বাধীনতা কিসে? চিন্তা, কর্ম ও বাক্যের সমন্বয়ে যদি মানুষের পরিধি হয়, তাহলে বলা যায়, রাষ্ট্র শুধু মাত্র কর্মের, ক্ষেত্রবিশেষে বাক্যের নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু চিন্তাধারার উপর তেমন শৃঙ্খল কি পড়ানো যায়?
মুক্ত চিন্তা। অবাধ ভাবনা?

মুক্তচিন্তার গলাটা অনেকসময় টিপে দেয়া হয়, যদি সমসাময়িক সময়ে কারো বৈষয়িক স্বার্থে হানা হয় আঘাত-প্রতিঘাত! কিন্তু ‘প্রকৃত’ স্বাধীনতা কই?
ভাবের অবাধ স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতার অভাবে সমাজ-দেহের বিভিন্ন অঙ্গ আজ ব্যাধিগ্রস্ত। ভাবনার খোলা আকাশ যখন কথিত প্রযুক্তি, সৃষ্ট সভ্যতাযন্ত্র কিংবা বৈষয়িক তাড়নার যাঁতাকলে পিষ্ট, তখন প্রকৃত ‘ঐশ্বর্য’ অনেকদূর…

(২)
যে স্বাধীনতার প্রভাবে এক শ্রেণী কোন প্রতিবাদ ছাড়াই অন্যায় করে উল্লাস করে, সে স্বাধীনতা কি চেয়েছিলেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধাগণ?
যে স্বাধীনতায় শিক্ষক অবরুদ্ধ থাকে আর “কথিত” কতিপয় ছাত্র রাজত্ব করে নির্লজ্জভাবে, সেটাই কি ২৬ মার্চের স্বাধীনতা?
যে স্বাধীনতায় উশৃংখল কিশোর গ্যাঙের হাতে মেধাবী মুখ বা সিনিয়র সিটিজেন নির্যাতিত হয় বিনাবিচারে, যে সমাজে ‘দুষ্কৃতকারী’ অবাধ স্বাধীনতা পায় আর জনসাধারণ থাকে জিম্মি, সে স্বাধীনতার সার্থকতা কিসে?
যখন অভুক্ত মা আত্মহননের পথ বেছে নেয়, ঋণগ্রস্ত কৃষক বেছে নেয় নিজেক শেষ করে দেয়ার মিশন, তখন কোন স্বাধীনতার জয়ধ্বনি করি আমরা?

যে স্বাধীনতা রাজনৈতিক প্রভাবে দুষ্ট কিছু মানুষের হাতে তুলে দিতে পারে শাসন, শৃঙ্খলা ও এমনকি মিনি বিচারিক ক্ষমতা, সে স্বাধীনতা আমজনতার জন্য কি বা বয়ে আনতে পারে?

(৩)
যে সমাজে কলম সুক্ষ্ম পাহারার অধীনে, কন্ঠ অঘোষিত বন্ধুকনলের সামনে, বাক্য যেথা রুদ্ধ, ‘চিত্ত যেথা’ ভয়যুক্ত, নিচু ‘যেথা শির’, সে স্বাধীনতা কোন স্বাধীনতার প্রতিশব্দ?.
যে স্বাধীনতা ‘কৃষকের মুখে ফসলের হাসি’ দেয়ার কথা ছিলো, সে স্বাধীনতা কি আদৌ হাসি এনে দিতে পেরেছে?
যে সমাজ এখনো অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারেনি, পারেনি ৩৯% “কিছুই না করা” যুবসমাজকে ব্যস্ত রাখতে, সে সমাজে স্বাধীনতা বা স্বাধীনতা দিবস কি আবেদন রাখবে?
সে স্বাধীনতা কি পেরেছে কি “যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা” নিশ্চিত করতে?

(৪)
স্বাধীনতার ৫৩/৫৪ বছর পর ‘কী দেখার কথা কী দেখছি?’ কী শোনার কথা কি শুনছি?’
শুধু এক ‘শ্রেণির’ সুবিধাভোগী মানুষের জন্য একচ্ছত্র স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যদি স্বাধীনতার মানে হয়, তাহলে সে স্বাধীনতার কোন সার্থকতা নেই, নেই পূর্ণাঙ্গতা…

তখন সংখ্যাগরিষ্ট শ্রেণী এক ধরণের পরাধীনতার নিরবতা বা নিদ্রায় আচ্ছাদিত রাখে নিজেদের মন মনন।

“আমার কি দরকার?’ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয় মান সম্মান বাঁচানোর ভয়ে বা লোকলজ্জার আড়ালে রাখে চাইতে চাইতে মানুষের ‘অনুভূতির অঙ্গগুলো ভোঁতা ‘ হয়ে আসে একসময়…

(৫)
তবুও ২৫ মার্চের কালোরাতের কথা মনে পড়লে প্রতিবাদে, রাগ ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্বাধীনতাপ্রেমির মন..
তবু ২৬ মার্চ এলেই মনে পড়ে, এই সেই ক্ষণ, যেক্ষণে প্রায় ২শ বছরের শৃঙ্খলমুক্তির সংগ্রাম যেন পেয়েছে পূর্ণাঙ্গতা, ‘স্বাধীনতা’…
তবু চিৎকার দিয়ে উঠি, বলি কবি শামসুর রাহমানের মতোঃ
‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
………..
…………
নতুন নিশান উডিয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।”

(৬)
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে মুক্তিযুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন, সম্ভ্রমহানি হয়েছে যাদের, সম্পদ ও অঙ্গহানী হয়েছে যাদের, তাদের প্রতি
দোয়া,
ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা…

স্বাধীনতা হোক সবার জন্য, দল,মত, নির্বিশেষে সকলেরই যেন উপভোগ করতে পারে এ স্বাধীনতা, এ বিজয…

“স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায়?
দাসত্ব-শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায়।”
রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়

স্বাধীনতা দিবসের সংগ্রামী শুভেচ্ছা..

নাজিম
২৬ মার্চ ২০২৪