Post View : 4
 

বই, বইমেলা ও ফেব্রুয়ারীঃ

আশার পূর্বাভাস

—-

(১)

বই বা বই কেনা নিয়ে নিযে আলোচনা আসলেই যে ক’টি যুগোত্তীর্ণ কথন সামনে চলে আসে, সেগুলোর কয়েকটি প্রথমে স্মরণ করা যাকঃ

‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’

সৈয়দ মুজতবা আলী

‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত- যৌবনা- যদি তেমন বই হয়।”

– ওমর খৈয়াম

 

(২)

কেন বই-ই?

বই তথ্য দেয়, তবে শুধু তথ্যই দেয় না;

বই আনন্দ দেয়, তবে শুধু আনন্দই দেয়না;

বই শুধু জ্ঞানের পরিধিই বাড়ায় না,

বাড়ায় জানার আগ্রহও।

বই শুধু এককালে বাঁচতে নয়, সকল কালে নিজেকে বেড়াতে আনতে সহায়তা করে।

বিজ্ঞান, যুক্তি-প্রযুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব, কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা, নেট বা ইন্টারনেট ইত্যাদি আবিষ্কারের পরও মানুষ বই ছাড়া মানব সভ্যতার উৎকর্ষতা অসম্ভব।

 

(৩)

পড়া মানুষকে দেয় কল্পনা করার শক্তি, স্বপ্ন, সাহস। পড়া বন্দি খাঁচা থেকে মানুষকে মুক্ত করে নিয়ে যায় সুবিশাল আকাশে…

পড়া মানুষকে শেখায় ত্যাগ, শেখায় আত্মত্যাগ।

 

(৪)

প্রতি বছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারীতে শুরু হয় বইমেলা। ঢাকার প্রধান ও বৃহৎ বইমেলার পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরেও নিয়মিত আয়োজন করা হয় বইমেলা। বছরের অন্যান্য সময়েও আয়োজন করা হয় বইমেলা। এ যেন তৃষিত হৃদে প্রাণের সরোবর..

বইমেলায় সবাই বই কিনেনা। কেউ বই দেখে। কেউ আড্ডা দেয়। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, মোবাইল-ইন্টারনেটের দাপটের মাঝেও বিভিন্ন বয়সী, বিশেষত তরুণ প্রজন্ম কিছুটা হলেও বইয়ের সান্নিধ্যে আসা শুরু করেছে…

 

(৫)

তরুণ প্রজন্ম বইমুখী নয়। এমন কথা বলা সহজ। তবে তাদের বই বিমুখ করার কাজে অগ্রজগণ কি দায়ী নয়? মা বাবা যদি সপ্তাহে বা মাসে বা ত্রৈমাসে কিংবা বছরেও যদি একটা বই না পড়েন, তাহলে সন্তান কিভাবে পারিবারিকভাবে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ হবে? সামাজিক আচরণে, আয়োজনে ভালো বই নিয়ে কিঞ্চিত আলোচনা হওয়ার চেয়ে পোশাক, সেলিব্রেটি, গাড়ি বাড়ির নতুন মডেল বা খাওয়ার নানাপদ যতটা স্থান পায়, তার সিকিভাগও যদি বই নিয়ে আলোচনা হয়, তাহলে সব বা তরুণ প্রজন্ম কিছুটা হলেও প্রভাবিত হতো…

 

 

(৬)

নতুন প্রজন্ম বেশ ভালোই বইমুখী হয়েছে। বইমুখী হয়েছে কিশোর, তরুণ, যুবকেরাও। প্রবী্র একশ্রেণির মানুষের বইপড়া দেখে রীতিমতো হিংসা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা “কেউ বই পড়ছেনা” কথাটা যত স্বাচ্ছন্দ্যে বলি, “সেদিন কিছু তরুণকে বই নিয়ে বেশ প্রাণবন্ত আলোচনা করতে দেখে খুব ভালো লাগল” – কথাটা বলতে তেমন জোর পাইনা। মাসে নয়, সপ্তাহে কমপক্ষে একটি বই পড়ে এমন পাঠক আমার পরিচিত সার্কেলেও আছে একাধিক…

 

(৭)

নতুন কবি-লেখক ঔপন্যাসিকদের বহু চেষ্টা স্বপ্ন সাধনার ফসল আসে এ বইমেলায়। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে এ সময়ে বেশি বই আসে, আসে নতুন মলাটে আবদ্ধ হয়ে লেখকের হৃদয়ের কথামালার পসরা।

বইমেলায় বেড়ে চলেছে ‘উপচেপড়া ভীড়’-এর দৃশ্য… বাড়তে থাকবে নবীন-প্রবীণ পাঠকের হাতে বইয়ের সমারোহ..এ আমার আশাবাদ….

 

মোঃ নাজিম উদ্দিন

চট্টগ্রাম।

৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪