প্রিয় নাজিমুল হোছাইন হিরো স্যারঃ বেঁচে থাকুন বহুদিন

Jul 25, 2021 | গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস | 0 comments

প্রিয় নাজিমুল হোছাইন হিরো স্যারঃ বেঁচে থাকুন বহুদিন

——–

শ্রদ্ধেয় শিক্ষক নাজিমুল হোছাইন হিরো স্যারঃ আমাদের স্কুল জীবনের অন্যতম বাতিঘর, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্টান মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমান মোহাম্মদপুর স্কুল এন্ড কলেজ) এর দীর্ঘকালের সুযোগ্য শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের খুবই প্রিয় এক কৃতী শিক্ষকের নাম। বর্তমানে তিনি অবসরকালীন জীবন
যাপন করছেন।

রাউজান আর্যমৈত্রেয় ইনস্টিটিউশন থেকে প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে জানুয়ারী ১৯৯২ সালে ঐতিহ্যবাহী মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে এক রোমাঞ্চ, ভীতি ও উত্তেজনার অনুষঙ্গে, ভয়ে দুরুদুরু মুহুর্তে যে ক’জন উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা হলেন আমার শ্রদ্ধেয় দাদা মরহুম আহমদুর রহমান, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বাবু অনিল কৃঞ্চ দাশ (তৎকালীন প্রধান শিক্ষক), শ্রদ্ধেয় সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রয়াত স্বপন কুমার, মরহুম মাওলানা ইসহাক, বাবু সন্তোষ চক্রবর্তী, মাওলানা কাজী আবদুস সালাম, নুরুল আলম স্যার, নাজিমুল হোছাইন হিরো স্যার প্রমুখ।

তখন স্কুলের অবকাঠামোগত উৎকর্ষতা ততটা চোখে পড়ার মতো ছিলো না। তবে বিদ্যালয়ের মাঠ ছিল বরাবরের মতোই দৃষ্টিনন্দন, সুবিশাল। নতুন স্কুল, নতুন শ্রেণিকক্ষ, নতুন পরিবেশে আমাদের বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের নীচ তলার সর্ব দক্ষিণের কক্ষে আমরা ৬ষ্ট শ্রেণির ক্লাশ শুরু করলাম।

একে একে পরিচিত হলাম সব শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের সাথে। বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যময়, বিশেষ পঠনশৈলীর শিক্ষকদের আলাদা দৃষ্টিতে দেখা শুরু করলাম; আর এ বিশেষ ও স্বতন্ত্র পঠনশৈলী, বাচনভঙ্গি, সবল পাঠদান ও আন্তরিকতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে বছর খানেকের মধ্যেই নিজের মন-মননে আলাদা স্থান দখল করলেন সকল শ্রদ্ধেয় শিক্ষক। আলাদা বৈশিষ্ট্যে, স্বতন্ত্র মহিমায়।

তখনকার সময়ে সম্মানিত শিক্ষকগণ একাধিক বিষয়ে পাঠদানে সক্ষম, সুদক্ষ ছিলেন। হিরো স্যার আমাদের কখনো সামাজিক বিজ্ঞান, বাংলা ও কখনো ভুগোল পড়াতেন। স্যারের পাঠদান ছিলো অতি সাবলীল সহজ ভাষায়।

রাউজান সুলতানপুরের বাড়ি থেকে প্রায় সময় বাই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতেন হিরো স্যার। ক্লাসে।ঢুকেই কিছু সাধারণ, কিন্তু নিজস্ব বচন স্যারকে মনে রাখার জন্য যথেষ্ট : যেমন, “এই লেহো, লেহো (লিখো, লিখো)। ক্লাসে লিখাতেন প্রায় সবসময়। মাঝে মাঝে বিচিত্র মুখভঙ্গি দিতেন আর আমরা কেউ হাসলেই রম্যরসকে ঢেকে গম্ভীর ভাব করে বলতেন, “নোআঁইস্সু, হাঁদিবে” (হাসিওনা, কাঁদতে।হবে কিন্তু!) কিংবা “হইল্ল্যা গইল্ল্যা?” (কেমন করেছো?) ইত্যাদি।

সহজ সারল্যে, মিষ্টভাষা আর হাস্যোজ্জ্বল হিরো স্যার যেন তাঁর পড়ানো বিষয়গুলোর মতোই সাবলীল বা  east going ছিলেন। শিক্ষার্থিদের বেশ সহজ করে দিতেন অনেক ক্ষেত্রেই। তবে অনিয়ম বা পড়া আদায়ে ব্যর্থ হলে স্যারের বেত্রাঘাত খায়নি তেমন শিক্ষার্থি কম থাকবে।

এসএসসি পরীক্ষার পর মাঝে মাঝে স্কুলে যেতাম, যাই। স্যারের সাথে দেখা হতো। স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিতেন স্যার। কুশলাদি জিজ্ঞাসা করতেন দেখা হলেই।

আমরা স্কুলজীবন শেষ করার কয়েকবছর পর স্যার সরকারি চাকুরির বয়সসীমা শেষ হলে অবসরে যান। স্যারের সহধর্মিণীও রাউজান ছালামতউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক ছিলেন।

আমাদের শিক্ষা জীবনের অন্যতম বাতিঘর, শ্রদ্ধেয় নাজিমুল হোসাইন হিরো স্যারদের জন্য আমরা শিক্ষার্থিরা তেমন কিছুই করতে পারিনি। গ্রামের সে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীেকে প্রায় তিন যুগ সময়  জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে গিয়েছেন তাঁরা, তখনকার সকল সীমাবদ্ধতা, সংকটের মধ্যেও।  আজকের দিনে গ্রামসমূহে কোন মহতি আয়োজন বা অনুষ্টানে আমরা যদি স্কুল আমাদের শিক্ষকগণকে যদি অতিথি বা সম্মানিত আলোচকের আসনে আসীন করতে পারি, শুনতে পারি তাদের জীবন ও কর্মের কথা, তখন কিছুটা সার্থক হবে আমাদের শ্রদ্ধাবাণী।

নাজিমুল হোসাইন হিরো স্যারসহ সকল শিক্ষকগণের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা, কামনা করি সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু।
প্রত্যাশা করি আনন্দময় জীবন।

**********************
মোঃ নাজিম উদ্দিন
২৫ জুলাই ২০২১

লেখাটি লিখেছেন