প্রিয় অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার রুদ্র স্যারঃ এক আলোকিত শিক্ষাগুরুর স্মরণ

Aug 25, 2021 | নতুন কিছু | 0 comments

প্রিয় অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার রুদ্র স্যারঃ এক আলোকিত শিক্ষাগুরুর স্মরণ

অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার রুদ্রঃ চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রাউজান সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এর শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের  সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান। কলেজের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থিগণসহ সকল শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষক এবং সাদাসিদে জীবনের প্রতিকৃতি, আলোকিত শিক্ষকের নাম।

১৯৯৭ সালে রাউজান কলেজে ভর্তি হয়ে স্কুলের কঠোর নিয়মনীতি থেকে অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর পরিসরে আমাদের পদার্পণ যেন রোমাঞ্চের প্রারম্ভ ছিলো। তবে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে একাদশ শ্রেণিতে বাণিজ্যের অচেনা রাজ্য শুরু থেকে বেশ সিরিয়াস বানিয়ে দিলো আমাদের। আর যেসব বিষয়ের জন্য ‘বাণিজ্য-ভীতি’ গভীরতর ছিলো, হিসাববিজ্ঞান তাদের অন্যতম। অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার রুদ্র স্যার আর অধ্যাপক সুকুমার স্যার ছিলেন এ বিষয়ে আমাদের দুই শিক্ষক। ধীরে ধীরে পরিচিত গতে লাগলাম সবার সাথে।

দোতলার নির্দিষ্ট ক্লাসরুমে প্রথম দিনের হিসাববিজ্ঞান ক্লাসের স্মৃতি তেমন মনে নেই। তবে নিজস্ব পঠন শৈলী, দারুন ব্যক্তিত্ব, সাবলীল উপস্থাপন, মাথা কিছুট নীচু করে, বিশেষ পদ্ধতির চলাফেরা সহজেই আলাদা করে দিলো অধ্যাপক রুদ্র স্যারকে।

চুলে তেল, আঁচড়ানো চুল, প্রায় সাদা বা লাইট শার্ট, পকেটে কলম, সামনে সোজা পকেট রেখে বিশেষ ধরণের ফরমাল প্যান্ট- এসব যেন স্যারের নিজস্বতা, স্বতন্ত্র চলনশৈলী। নতুন বিষয় একাদশ-হিসাববিজ্ঞানের কঠিন পাঠ অতি সহজে বুঝিয়ে দিতে পারার বিরল গুণের অধিকারি
রুদ্র স্যারের ইংরেজি জ্ঞান

আন্তরিকতা, সারল্যের চাদরে গভীর জ্ঞানের আচ্ছাদনের এক মোহনীয় ভঙ্গি ছিলো স্যারের। কোন শিক্ষার্থির কোন প্রশ্নবানে হতেন না বিরক্ত।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য, বাচনভঙ্গি, গুরুগাম্ভির্য, সবল পাঠদান, জবাবদিহিতা ও আন্তরিকতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে বছর কিছুদিনের মধ্যেই নিজের মন-মননে আলাদা স্থান দখল করলেন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক রুদ্র স্যার। সারের সময়নিষ্ঠা ছিলো অসাধারণ।

দ্বাদশ শ্রেণিতে সকালের ব্যাচে প্রাইভেট পড়তাম স্যারের কাছে। কলেজ গেইটের বিপরীতে তৎকালীন স্টুডিও পিয়ালীর পাশে স্যারের নির্ধারিত কক্ষ ছিলো।
কোন মাসে প্রাইভেট ফি দিতে পারতাম, কোন মাসে পারতামও না। তবে এ নিয়ে স্যার কোনদিন আমাকে কিছু বলতেন না, বরং খুব ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রেরণা দিতেন সবসময়।

ইংরেজি শেখার ব্যাপারে স্যারের বিশেষ তাগাদা থাকতো। একদিন কলেজ মসজিদ গলিতে স্যারের সাথে দেখা। বললাম অনার্সে ভর্তি হলাম। ইংরেজিতে। মুচকি হাসলেন। খুশি হলেন বুঝলাম। বললেন, প্রতিদিন ৫ টা ইংরেজি শব্দের বাংলা অর্থ মুখস্থ করবে বা শিখবে। আমি বললাম, জ্বি স্যার। স্যার বললেন, প্রতিদিন ৫ টা মানে, মাসে ১৫০ টা। বছরে ১৮০০ টা।। আরো বললেন, নতুন বিষয়ে জ্ঞান রাখবে। সব বিষয়ে। স্যারের নির্দেশমতো প্রতিদিন ৫ টা শব্দের অর্থ হয়তো শিখতে পারিনি, তবে প্রতিদিন না হলেও নিয়মিত নতুন বিষয়ে জানার আগ্রহ চিরসবুজ আছে, সেটাই সান্ত্বনা।

কলেজের শিক্ষক পরিষদে উচ্চ পদ পাওয়া বা নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়ে স্যারের নির্লিপ্ততা ছিলো চোখে পড়ার মতো। কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়াকালীন সময়ে কলেজে যেতাম মাঝে মাঝে। স্যারের সাথে দেখা হতো। কথা হতো। ধীরে ধীরে বয়োবৃদ্ধ হলেন। গত ৪/৫ বছর আগে এক বন্ধুর কাছে জানলাম, স্যার আর নেই। কতটুকু খারাপ লেগেছে সেদিন তা হয়তো পূর্ণরূপে লেখা সম্ভব নয়, তবে স্যার আমার, আমাদের, শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে চির জাগরুক থাকবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।

আজ আমরা সবাই যে যার পেশাগত, সাংসারিক কর্মব্যস্ততায় সে প্রিয় রুদ্র স্যারের পরিবারের খোঁজ নেয়ার ফুসরত পাই না কখনো। মূল পড়াশুনার ভিত্তি তৈরি করে দেয়া রুদ্র স্যারেরা হয়তো মরণোত্তর সম্মাননা পাবেন না,
কিন্তু আমরা বিদ্যা লাভ ধন্য শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন প্রিয় অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার রুদ্র স্যার।

স্যারের আত্মার শান্তি কামনা করি।

*******
মোঃ নাজিম উদ্দিন
(স্যারের ছাত্র)
উচ্চ মাধ্যমিক (বাণিজ্য)-
১৯৯৭-৯৮ ব্যাচ
রাউজান সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। চট্টগ্রাম।
আগষ্ট ২৫, ২০২১

(সংযুক্ত ছবি ২০১৩ সালে অনুষ্টিত রাউজান কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তি স্মারক থেক সংগৃহীত)

লেখাটি লিখেছেন