দাদা ও দাদার পাঠানো চিঠিঃ দুটি কথা

Apr 20, 2024 | ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-রাজনীতি, গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস | 0 comments

Post View : 24
 

দাদা ও দাদার পাঠানো চিঠিঃ দুটি কথা

দাদা আহমদুর রহমান কর্তৃক ১৯৫৭ সালে তাঁর পিতা আনসুর আলীকে লেখা চিঠি
——
আমার দাদাঃ
আমার দাদা মরহুম আহমদর রহমান পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ বিভাগে চাকুরি করতেন। ১৯৮১-৮২ সালের দিকে অবসরে যান। ১৯৯৭ সালে ইন্তেকাল করেন, আমার এসএসসি ফলাফল প্রকাশের মাস খানেক পর।

জীবনের প্রথম ১৬ বছর দাদাকে যতটুকু দেখেছি, তিনি একজন কর্মবীর, সময়নিষ্ঠ, পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন।।
দেখিনি কোন কাজকে কখনো ছোট বলে জানতে- কে কী বলবে- এ লোকলজ্জা ছিলোনা। শৈশব কৈশোরে যারা দাদা দাদীর আদর স্নেহ পায়নি, তারা সত্যিই দুর্ভাগা।
আল্লাহ আমার দাদাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন, আমিন।

#দাদার চিঠি নিয়ে দুটি কথাঃ
আজ থেকে ৬০/৭০ বছর আগের কথা৷ দাদা ১৯৫০ এর দশকে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ বিভাগে চাকুরিতে অংশ নেন। তখনকার টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা খুব নাজুক ছিল। জরুরী প্রয়োজনে অতি অল্প শব্দের টেলিগ্রাফ ব্যবহার হতো বলে শুনেছি। প্রধানতম মাধ্যম ছিলো চিঠি আদান প্রধান। আকর্ষণ তখন মোবাইল বা ফোন রিং নোটিফিকেশনে নয়, ছিলো পোস্ট অফিসে, বা পোস্ট মাস্টার, রানারদের!
দাদী এবং বাবার কাছে জেনেছি, আমার দাদা সরকারি চাকুরির চিরায়ত নিয়মে বদলি হতেন বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা জেলাসমূহে বেশিদিন ছিলেন। দাদার পাঠানো চিঠিতে যেসব ঠিকানা থাকতো, দাদীর যেসব ঠিকানা প্রায় মুখস্থই থাকতো। দাদীর মুখে এসব ঠিকানা (পোস্ট অফিসের নামসহ) শুনে হাসি পেতো, তবে বিস্মিতও হতাম।।

দাদার ব্যবহৃত পু্লিশের ক্যাপ, লাঠি, বেল্ট,জুতা ইত্যাদি একসময় আমাদের সংরক্ষণে ছিলো। দাদার পাঠানো অনেক চিঠিই আমার মরহুম বাবা সংরক্ষণ করতেন। তেমনি একটি চিঠি আজ পুরানো কাগজের মাঝে পেয়ে যারপরনাই স্মৃতিকাতর হলাম।
৮ মে ১৯৫৭ সালের দাদা মরহুম আহমদুর রহমান তার শ্রদ্ধেয় পিতা আনসুর আলীকে পাঠানো সেই চিঠির কিছু শব্দ পুরোপুরি বুঝতে সক্ষম না হলেও যা বুঝতে পেরেছি তার মধ্যে আছে বাবা মা, ভাই-বোন, পরিবার ও বাড়ির সকলের খোঁজ নেয়া,চাষের খবর নেয়া, নতুন চাকুরির কথা, চিঠি পেয়ে উত্তর দেয়ার অনুরোধ ইত্যাদি। আমার মেয়েসহ পরিবারের সকলকে পড়ে শুনালাম।
কুমিল্লা পুলিশ লাইন থেকে আজ থেকে প্রায় ৬৭ বছর আগে পাঠানো এমন বিরল চিঠির স্মৃতি বন্ধু-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করার তাগিদও অনুভব করলাম।

—————
মোঃ নাজিম উদ্দিন
২০-০৪-২০২৪
(সংগ্রহে থাকা ১৯৫৭ সালে দাদার পাঠানো চিঠি)