একদিন তুমিই হবে অচেনা!

—-
এক স্বর্গভূম হতে তার আগমন। তারও আগে ছিলো মাতৃজটরে। তারও আগে রূহজগতে।

পৃথিবীর আলো বাতাস সে আপন করে নেয়। ধীরে ধীরে সে বড় হয়।
প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা, সুখ-দুঃখের বৈচিত্রময় এ ধরার বাসিন্দা হয় সে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পৃথিবীর সাথে তার হৃদ্যতার আরো সুদৃঢ় হয়, হয় সুপ্রতিষ্ঠিত।
ছেলেখেলা পর করে কৈশোরের মন পৌঁছাতে থাকে যৌবনের চূড়ায়।

সে ভাবে, এ-ই বুঝি তার জগত। এ-ই বুঝি তার স্থায়ী নিবাস! আহা মায়া!
আহা মায়াজাল!
এ মায়াজালে আটকে পড়তে থাকে তার শক্তিময় যৌবন, অভিজ্ঞতাময় বার্ধক্যও। ধন-সম্পদের পাহাড় গড়তে ব্যস্ত থাকা মানুষ একসময় ভুলেই যায় সে অমোঘ বাণী:

“আমি বিধান দিয়েছি যে, মৃত্যু সব সময় তোমাদের মাঝে অবস্থান করবে।
(সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৬০)

মানুষ এ ও ভুলে যায় যে, তার পরীক্ষার সময় হঠাৎ শেষ হয়ে যাবে। এখানে অটোপাশ করার সুযোগ নেই, নেই সৃজনশীল সিলেবাসে নিজের সক্ষমতা প্রমাণের। এ পরীক্ষার সিলেবাস আগেই দিয়ে দেয়া হয়েছে, তার জন্মেরও বহুকাল আগেই।
পবিত্র কোরআনে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে:
“হে মানুষ! আমিই জীবন দান করি। আমিই মৃত্যু ঘটাই। আমার কাছেই সবাইকে ফিরে আসতে হবে। যেদিন জমিন বিদীর্ণ হবে এবং মৃত্যুরা উত্থিত হয়ে ছুটতে থাকবে, তখন তাদের সমবেত করা খুব সহজ একটি কাজ।’
(সূরা কাফ, আয়াত ৪৩-৪৪)

অতপর সে ভুলে যায়, তাকে সামনাসামনি কাটগড়ায় দাঁড় করানো হবে:

“আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেছেন। তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। আবার তিনিই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন। তারপরও মানুষ অতি-অকৃতজ্ঞ!’
(সূরা হজ, আয়াত ৬৬)।

মহা বিশ্বের অযুত মিলিয়ন গ্রহ নক্ষত্রের মাঝে “পৃথিবী” নামের মাঝারি একটি গ্রহের এক তৃতীয়াংশের কিছু বাসযোগ্য স্থলে বাস করে মানুষ নিজেদের রাজা, মহারাজা ভাবতে পারে সত্য; কিংবা এই পার্থিব জীবনের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে আমরা এই জীবনের সং‌ক্ষিপ্ততা ভুলে অনেক দিন বেঁচে থাকার মোহময় স্বপ্নে বিভোর থাকতে পারি; কিন্তু সত্যিকারের বিদগ্ধ সাধকগণ কিন্তু আসল জগতের, আসল বাড়িতে ফিরে যাওয়ার বিধান অমোঘ। যেতে হবেই। আজ বা কাল।

“রাজেউন” (ফিরে যাওয়া) শব্দ ডজনেরও অধিকবার পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করে এই আদি অনাদি সব কিছুর একচ্ছত্র মালিক যে আসল বাড়ির কথা বলেছেন, তার পানে ছুটে যাওয়ার মাঝে এই দুনিয়ার জীবন কত স্বল্প তা বুঝার জন্য জন্মের পর আজান আর সে আজানের নামাজ ইন্তেকালের পর জানাজার নামাজ সম্পাদনই যথেষ্ট।

এ মৃত্যু যখন সংঘটিত হবে, তার পর পরই পরিবর্তন হবে নাম। প্রথমে লাশ। লাশ নামের স্থায়ীত্ব কয়েকঘন্টা। তারপর স্থায়ীভাবে নামের আগে ”মরহুম” বা মৃত ইত্যাদি।
আজ সে যে বাড়িতে থাকে, ঘুমায়, কাল অন্যজন সেটার মালিক হয়! এভাবে একসময় এমন মানু্ষ সে বাড়ির মালিক হয়, যা আজকের মানুষ কল্পনাও করতে পারেনা! সে নিজেও জানেনা আজ থেকে কয়েকশত বছর আগে কে এ বাড়ির মালিক ছিলো!
আর ধরে নিলাম, মৃত্যুর ১/২ শত বছর পর আজকের মানুষ যদি ফিরেও আসে এ দুনিয়ায়, তোমার প্রাসাদে যে ঘুমায়, সে তোমাকে চিনবেনা! এ আঙিনা তোমার আর নয়, নয় এ ঘর বাড়ি!
শুধু নিজের কর্ম ও কল্যাণকর কাজ ছাড়া কিছুই সাথে থাকবেনা যেদিন, সে দিনের কথা কি মনে পড়ে আদৌ?

তবুও আমি ভাবি, এ জগত আমার চিরদিনের!
এ জীবন আমার বহুদিনের!!
জগতটা আজ চিরচেনা
একদিন তুমিই হবে অচেনা!
হায়! জীবন!


মোঃ নাজিম উদ্দিন
জানুয়ারী ২০, ২০২২

লেখাটি লিখেছেন