ঈদ ভাবনা: কিছু সেকাল সেকেলে নয়!
(১)
বছরের
শ্রেষ্ঠ মাস রমজানের সিয়াম সাধনার পর ঈদুর ফিতরের আনন্দময় আসে। ওইদিন রোজা রাখাও নিষেধ করেছে ইসলাম। তবে ধর্মীয় সংজ্ঞায়, সংক্ষেপে-
‘ঈদ তারা জন্য না যে নতুন জামায় প্রীত,
ঈদ তার জন্য, যে ঐ দিনের ভয়ে ভীত।’
তরপরও সামাজিক ও ঐতিহ্যগত বিবেচনায় এই ঈদ (উল ফিতর) নিছক ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের বাইরেও একটা মেলবন্ধন তৈরির অনুপম দিবস। যেমনটা নজরুলের সেই ঐতিহাসিক গানে ফুটে উঠেছে:
“…আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন, হাত মেলাও হাতে,/তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ। …”
বিদ্বেষ ভুলে প্রেম, পার্থক্য ভূলে সাম্য-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার শিক্ষা দেয় এই ঈদ।
(২)
আমর যারা গ্রামে বড় হয়েছি, তাদের মধ্যে যারা দারিদ্র্য, সংকট অভাবে যাদের শৈশব কৈশোর পাড় করেছি, তারা সামান্য একটু নতুন জামা পেলেই স্বর্গসুখ পেতাম:
ঈদের আগের রাতে ‘আজিয়্যে রোজা হালিয়্যে ঈদ… ” এসব শ্লোক,
ঈদের সকালে দলবেঁধে তকবির দিয়ে ঈদগাহে নাসাজ পড়তে যাওয়া,
ঘন্টা বেসিস সাইকেল ভাড়া করে নিজের ও বাড়ির অন্য বন্ধুদের আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ১/২ টাকা সালামি পেলেই যেন অফুরন্ত প্রাপ্তি,
ছোট “ভিউ কার্ড” বা ঈদ কার্ড ছাড়া যেন চলতোই না,
বাড়ির সামনে কলাপাতার ছাউনি দিয়ে চকলেট আচারের অস্থায়ী দোকান,
বেলুন বা ম্যাচের কাঠি দিয়ে ছোট আতশবাজি ফোটানোর আনন্দ,
৫/১০ জনের গ্রুপ করে সবার ঘরে বেড়াতে যাওয়া, নতুন বাহারি টুপি কেনা, আরেকটু বড়বেলায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, আবাহনি মোহামেডান বা বিয়েতা আবিয়েতা (married vs unmarried) ফুটবল ম্যাচ বয়ে আনতো অনাবিল আনন্দ।
ঈদের ২/৩য় দিন দূরের আত্মীয়ের বাড়ি বেড়ানো সব শেষ করার পর কতো সালামি পেয়েছি, তা নিয়ে চলতো বাহাস!
মোবাইল ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় হারিয়ে গিয়েছে সেসব অফলাইন আনন্দের অনেকগুলো! যেন গ্রামও আগের মতো নেই!
(৩)
সমাজ
আজ বৈষম্যে ভরে যাচ্ছে, আর এ দোষ সমাজের নয়, সমাজের মানুষের একাংশের। শেকড়ের পানে সবাই ছুটি গ্রামে, কিন্তু সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে নিজেরা সামাজিক ঐতিহ্য মানছিনা,
প্রায় সব মসজিদেই ঈদের জামাত হয়, আত্মীয় বাড়ি যাওয়াটা নির্ভর করছে আত্মীয়ের ধন-সম্পদের অবস্থা বুঝে: নির্দিষ্ট গ্রুপের মানুষ ছাড়া অন্য কারো বাড়িতে যাওয়াও যেন কিছু ‘ধনী’র মানসম্মানে লাগে!
ছোটবড় সবাই যেখানে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত, তখন খেলার মাঠ ফাঁকাই থাকছে, নেই কোন খেলা বা প্রতিযোগিতা…
আর, অতিরিক্ত বাইকের প্রভাবে কেউ ২/৩ মিনিটের দূরত্বেও যেনো হেঁটে যাচ্ছে না! সময়ই বা কই?
(৪)
এমন ঈদ
কি আমাদের ভুলিয়ে দিচ্ছে সেসব অফলাইন আনন্দ, স্মৃতিময় শৈশব বা কৈশোর- নজরুলের সেই ‘লাইনটা’ আা কিছুটা আবেদন হারিয়েছে!
“তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন্ আসমানি তাগিদ”।।
সংকট, অস্থিতিশীলতা ভুলে তবুও ঈদ আসুক আনন্দের পসরা নিয়ে, অনাবিল প্রশান্তি নিয়ে..
ঈদ মোবারক..
—
মো: নাজিম উদ্দিন
২ এপ্রিল ২০২৫