কোরআন থেকে নেয়া -০২
আজকের বিষয়ঃ অপচয়, কৃপণতা ও মিতব্যয়িতা নিয়ে কোরআন কী বলে?
—————-
Waste not, want not- অপচয় করিনা, অভাবে পড়োনা – কথাটি বিভিন্ন ভাষায় বর্ণিত, প্রচারিত, প্রচলিত। অপচয় করলে হয়তো কিছু ধন কমবে, কিন্তু অঢেল ধন থাকা সত্ত্বেও অভাবে পড়তে হবে কেন? প্রশ্নটা জটিল।
যেকোন হালাল কাজে চাহিদার বেশি খরচ করাকে অপচয় বলা হয়, কুরআনের ভাষায় যা ‘ইসরাফ’ বলা পরিচিত। তাইতো কুরআনে অপচয়কে শয়তানের কাজ বলা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
অপচয় ও অপব্যয়ের কয়েকটি মৌলিক কারণ হলোঃ
১. দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা
২. পারিবারিক প্রভাব
৩. অপচয়কারীদের সাহচর্য
৪. পরিচিতি ও খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা
৫. বাস্তব জীবনের প্রয়োজন সম্পর্কে উদাসীনতা
৬. ক্বিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা সম্পর্কে উদাসীনতা, কারণ, অপব্যয় হারাম উপার্জনে উদ্বুদ্ধ করে : হারাম উপার্জন অধপতনের কারণ।
কোরআনে বিভিন্নভাবে বিভিন্নবার
অপচয় ও মিতব্যয়িতা নিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং শেখানো হয়েছে কীভাবে কৃপণতা ও অপচয় বাদ দিয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা যায়।
প্রথমতঃ আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘এবং তোমরা আহার করো ও পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা আ’রাফ : আয়াত ৩১)
দ্বিতীয়ত, অপচয়কারীদের সাথে কৃপণদেরও তিরষ্কৃত করা হয়েছে।
মূলত অপচয় মানুষের সহজাত অভ্যাসে প্রভাব ফেলে। মানুষে স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হয়। অপচয়কারী শয়তানের পথ অনুসরণ করে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৭)।।
অন্যদিকে, কৃপণতার কারণে মানুষ নিজের অতি প্রয়োজনীয় খরচও করেন না। এ সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর দেয়া ধন-সম্পদের বেলায় কৃপণতা প্রদর্শন করে তারা যেন এ ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত না থাকে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যে সম্পদের বেলায় তারা কৃপণতা প্রদর্শন করেছে সে সম্পদ কিয়ামতের দিন তাদের গলায় হার রূপে পরিয়ে দেয়া হবে।’ -সূরা আল ইমরান: ১৮০।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায়,
অহংকার ও লোকদেখানো খরচ, বিলাসিতাসহ অন্যায় কাজে ব্যয় এবং এমন যাবতীয় ব্যয় যা মানুষের ধন-সম্পদ ভুল পথে নিয়োজিত করে, তা সত্যিকারঅর্থে আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির জন্য শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত ইত্যাদির পাশাপাশি মুসলমানদের আল্লাহর পথে দান করার সাধারণ নির্দেশ দিয়ে ইসলাম।
মুসলমানকে দানশীল, উদার হৃদয়, সহানুভূতিশীল ও মানব দরদী হতে হবে।
মধ্যপন্থা সর্বোত্তম পন্থা। আল্লাহ তায়ালা কৃপণদের পছন্দ করেন না, তেমনি অপচয়কারীদেরও পছন্দ করেন না। তাহলে দাড়ায়, অপচয় ও কৃপণতা ত্যাগ করার অর্থ হলো মধ্যপন্থা অবলম্বন।
আল্লাহ বলেন, ‘তুমি একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না, আর একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’
(সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৯)
অন্যত্র পথনির্দেশনা এসেছেঃ
‘এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপচয় করে না, কাপর্ণ্যও করে না বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়। ‘
(সূরা ফোরকান : আয়াত ৬৭)।
আল্লাহ আমাদের মিতব্যয়িতার শিক্ষা গ্রহণ করে দানে অভ্যস্ত হয়ে কৃপণতা ও অপচয় থেকে মুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন।
আমিন।
—
মোঃ নাজিম উদ্দিন
জুলাই ২৭, ২০২২