আজকের ভাবনা
জীবন থেকে একেকটি বছর, মাস, দিন, ঘন্টা চলে যাওয়া যেন শীতের শুষ্কতায় বৃক্ষরাজি থেকে পত্র-পল্লবের ঝরে পড়ার মতো! তফাৎ এই, বসন্তাগমনে আবারো পত্র-পল্লব সৃজিত হয়, কিন্তু জীবনবৃক্ষের বয়ে যাওয়া সময় আর ফেরেনা। কখনো না।
মহাকালের তুলনায় অতিক্ষুদ্র, খুব অনিশ্চিত এ মুহুর্তসমূহকে বহুগুণে গুরুত্ব দিতে পারার মাঝে আসে সার্থকতা, যথার্থতা। আর বছর মাস দিনের প্রতিখন্ডরূপে এ জীবন-মুহুর্তের অবসান মানে ধীরে ধীরে চিরপ্রস্থানের নামান্তর। আগমন আর প্রস্থানের মাঝের সময়টুকুর অর্ধেকের মতোই নিদ্রা-পানাহারে চলে যায়, প্রয়োজনীভাবেই। বাকি অংশটুকু যে যত ভালোভাবে সদ্ব্যবহার করতে পারেন, সে ততই সফল, সার্থক; দু’দুনিয়ায়ই।
এ সার্থকতা আবার আপেক্ষিক। নভোচারীর সার্থকতা নব নভোমন্ডল পরিভ্রমণে, ডুবুরির কাছে সার্থকতা মানে জল-তলের অনাবিষ্কৃত তলানী থেকে বের করা আনা জীবনের জীবনীশক্তি।
আবার পরিব্রাজক মাত্রই নব নব দেশ, স্থান আবিষ্কারেই সফলতা ভাবেন, ভাস্কো দা গামা, হিউয়েন সাং, ইবনে বতুতা, শেখ সাদীগণ এক্ষেত্রে সফল। বিদ্যুষী গণ জ্ঞানার্জনে, কৃষাণ ফলোৎপাদনে, সাধক সাধনায়, বৈজ্ঞানিক নব নব উদ্ভাবনে আর প্রকৃত ধার্মিক পরকালীন ধনার্জনে নিয়ত মশগুল থাকে। অন্যদিকে, বৈষয়িক ভাবনায় সদা নিমজ্জিত ব্যক্তিগণের কাজে আগের কাজগুলো বোকামি ঠেকবে! তারা অযুত নিযুত, সম্পদ, ঐশ্বর্যের দিকে তাদের দৌড়ঝাপ। অন্যদিকে তাকানোর সময় বা মনোযোগই বা কই?
এই শশব্যস্ত জীবনে যারা গ্রাম থেকে
শহরে এসে, অস্তিত্বের লড়াইয়ে যোগ দিয়েছি কৈশোরে, তাদের জন্য জীবন বেশ চ্যালেঞ্জের, রোমাঞ্চেরও, তবে রোমান্টিকতার নয়। দিন মাস শেষে কখন যে বছর চলে যায়, সেদিকে কতক্ষণ খেয়াল থাকে? তবুও জীবনের সাথে, মন-মননের সাথে যারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তারা স্নেহ, ভালোবাসার বাঁধনে আবদ্ধ করেন আমাদের বাউন্ডুলে কর্মঘন্টাকে। আজও তেমনই হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্টানে যোগ দেয়ার পর বুঝলাম, বছরের শেষ কর্মদিবস (৩০ ডিসেম্বর) কোন ক্ষণে চলে যায়, তা বুঝার সুযোগ থাকেনা। জন্মদিন তো দূর ছাই!
এতদসত্ত্বেও, অতিক্ষুদ্র এ মানুষটির এ দিবসটি খুব কাছের কিছু মানুষ সবসময় মনে রাখেন।। দু যুগ আগে মোবাইল ফোন, এক যুগ আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আগমনে সহজতর হয়েছে এতকাল দূরে থাকা বন্ধু, স্বজনদের সাথে রিকানেক্ট হওয়া, তাদের জন্যও সহজতর হয়েছে এ দিনটি মনে রাখা, স্মরণ করা, শুভেচ্ছা জানানো। ফলে প্রিয় বন্ধু, পরিবার, স্বজনদের স্নেহ, ভালোবাসার বর্ধিষ্ণু হার নিজের জন্য প্রেরণার ঢালি হয়ে আসে সুশোভিত রূপে।
আর এর ফলে আরো অনেকদিন বেঁচে থাকার আকাঙ্খা ছাপিয়ে যায় জীবন থেকে একটি বছর হারানোর বেদনাকে; প্রেরণার ঢেউয়ে ভেসে যায় হতাশা, বার্ধক্যের যত ঝিমিয়ে পড়া কোষকে!
তেমনি এক দিনে আজ আপনাদের ভালোবাসা-স্নেহের বাঁধনে আবদ্ধ হয়ে কৃতজ্ঞচিত্ত প্রকাশ করছি, ধন্যবাদ জানাই ঠিক রাত ১২ টায় কেক নিয়ে সারপ্রাইজ জানানোর জন্য, সামনা সামনি, মুঠোফোনে, ম্যাসেঞ্জারে কল দিয়ে, ম্যাসেজ দিয়ে, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। আপনাদের এ ভালোবাসা এ অধমকে বহুদূর যাবার প্রেরণার সারথি। দোয়া করবেন, যে ক’দিন বাঁচি, যেন উত্তম কাজে নিয়োজিত করার সামর্থ্য দেন মহান রাব্বুল আলামিন।
প্রতি মুহুর্তেই শিখছি, প্রতি সম্পর্কেও। কীভাবে কাছের জন দূরে সরে যায়, কীভাবে দূরে থেকেও কাছে থাকা যায়- এ তিক্তমধুর জ্ঞান জীবন থেকে নেয়া; কেন নিজের জন্য কিছু করার সাথে সাথে অন্যের জন্য ভাবা দরকার- তা শেখা জরুরী হলেও পুরোপুরি আত্মস্থ করতে পারিনি, জানিনা কতদিনে পারবো!
তবুও আশাবাদ রাখি, সুন্দর আগামী, ‘মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন’ যেন সত্যিকার অর্থে জীবন্ত হয়, সে ভাবনা জিইয়ে রাখি, নিত্য। যেন ‘worthy of existing, of believing and of living’ হতে পারি, বাকিপথটুকু।
অনেক ধন্যবাদ।
————-
নাজিম
৩০ ডিসেম্বর ২০২০