আল্লাহর জন্য ভালবাসা, আল্লাহর ওয়াস্তে প্রেম
————————————–
“আল ওয়ালা ওয়াল বারা”- ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহর জন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তু বা কাজকে ভালবাসা ও আল্লহর জন্যই কোন ব্যক্তি, বস্তু বা কাজকে ঘৃণা করা। যে কয়টি মুল স্তম্ভের উপর ঈমান গঠিত তার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা’।
আমরা পৃথিবীতে যা করি সবকিছু ভালবাসা ও ঘৃণার ভিত্তিতে হয়ে থাকে।যেমন ধরুন আমরা যদি কারো সাথে বন্ধুত্ব করি এমন কারো সাথে বন্ধুত্ব করি যাদের আমরা ভালবাসি। সবার বক্তব্য আমরা শুনি না। সবাইকে কেয়ার করিনা।তাদের বক্তব্য শুধুমাত্র শুনি যাদের আমরা ভালবাসি।
এই যে উপরোক্ত সকলের প্রতি ভালবাসার জন্য আমরা এত কিছু করি কিন্তু কিসের জন্য এই ভালবাসাটা? অবশ্যই স্বার্থের জন্য।হতে পারে আমার নিজের স্বার্থের জন্য, আমার নিকটবর্তী আত্মীয় কারো জন্য। আল্লাহ পাকের কথা হচ্ছে, ভালবাসতে হবে শুধু আল্লাহর জন্য ঘৃনাও করতে হবে শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহর জন্য বলতে বুঝায় আল্লহ ও তার রাসুল (সঃ) যাতে সন্তুষ্ট তা করা ও যাতে অসন্তুষ্ট তা পরিহার করা।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে কেউ আল্লাহর জন্যই ভালবাসে এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করে এবং (কাউকে কিছু) দিয়ে থাকে আল্লাহর জন্যই এবং (কাউকে কিছু) দেয়া থেকে বিরত থাকেও আল্লাহরই জন্য; তাহলে তার ঈমান পরিপূর্ণ হলো।”
[আবু দাউদ: ৪০৬১, দ্বাদশ খণ্ড, পৃ-২৯১]
হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মানুষের আমলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে ওই ভালোবাসা যা আল্লাহর জন্য হয় এবং ওই শত্রুতা যা আল্লাহর জন্য হয়।
(সুনানে আবু দাউদ : হাদিস ৪৫৯৯)।
আর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায় ? আজ – যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না- আমি তাদের ছায়া দেব। (সহীহ মুসলিম: ৪৬৫৫)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সাত ধরণের মানুষকে আল্লাহ তায়ালা ছায়া দেবেন, এর মধ্যে এমন দুই ব্যক্তি রয়েছে যারা আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পরকে মহব্বত করত। আল্লাহর মহব্বতের ওপরই তারা একত্র হতো, আবার আল্লাহর মহব্বতেই পৃথক হতো।
(সহিহ বুখারি : হাদিস ৬৬০, সহিহ মুসলিম: হাদিস ১০১৩)।
আল্লাহ বলেন, (হে মুহাম্মদ) আপনি বলে দিন- যদি তোমরা আল্লাহর ভালবাসা পেতে চাও তবে আমাকে (নবীকে) অনুসরণ কর। আল্লাহ্ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ্ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ মহাক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।”
(সূরা আলে ইমরান-৩১)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
“যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে”।
আল্লাহ কাদের ভালোবাসেনঃ
১) আল্লাহ সৎ-
কর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন।
[আলে ইমরান ১৩৪ ]
২) আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। [আল-বাক্বারা ১৯৫ ]
৩) অবশ্যই আল্লাহ পরহেজগারদেরকে ভালবাসেন। [আলে ইমরান ৭৬ ]
৪) নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন ভালোবাসেন ।
[সূরা বাকারা ,২০৫]
৫) আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন। [ আত-তাওবা ১০৮ ]
৬) আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন। [আলে ইমরান : ১৫৯]
৭) নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। [মায়িদা : ৪২]
৮) আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। [আলে ইমরান : ১৪৬]
৯) আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। [আল-মুমতাহেনা : ৮]
১০) বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন। [আলে ইমরান : ১৩৪]
১১) আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন। [আত-তাওবা : ৪,৭]
১২) আল্লাহ কাদের ভালোবাসেন না এবং পছন্দ করেন নাঃ
১৩) আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না। [আলে ইমরান : ৩২]
১৪) আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না। [আলে ইমরান : ৫৭]
১৫) আল্লাহ দাম্ভিকদেরকে ভালবাসেন না। [আল-কাছাছ : ৭৬]
১৬) আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না। [আল-কাছাছ : ৭৭]
১৭) নিশ্চয়ই আল্লাহ ধোকাবাজ, প্রতারককে পছন্দ করেন না। [আল- আনফাল : ৫৮]
১৮) নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদে রকে পছন্দ করেন না। [আল- বাক্বারা:১৯০;আল-মায়িদা:৮৭]
১৯) আল্লাহ ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না। [আল-বাক্বারা : ২০৫]
২০) তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না। [আল-আরাফ : ৩১]
২১) আল্লাহ পছন্দ করেন না তাকে, যে বিশ্বাস ঘাতক পাপী হয়। [আন- নাস : ১০৭]
২২) আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না। [আল- হাজ্জ্ব : ৩৮]
বর্ণিল ভালবাসার কল্পনায় রঙিন শহুরে সমাজের বাতায়নে আমার কথাগুলো নিরস ঠেকবে, কিন্তু শাশ্বত নির্ভুল মহাগ্রন্থ আল কোরআনের বাণী অনুসরণের জন্য আল্লাহ আমাদের জ্ঞান দান করুন, এ প্রার্থনা।
আসুন, তাদেরকে ভালোবাসতে শিখি যাদের আল্লাহ ভালবাসেন, তাদেরকে ঘৃণা করতে শিখি যাদের আল্লাহ ভালবাসেন না- এ প্রত্যাশা।
প্রত্যাশা থাকবে, আমরা যেন প্রকৃত ভালবাসার অর্থ বুঝি, অনুধাবন করি।
—————————
(রচনা, সংগ্রহ, সংকলনে
মোঃ নাজিম উদ্দিন)