সাইকেল থেকে নেমে সম্মান প্রদর্শনঃ ছেলেবেলার শিষ্টাচার
সাইকেল চড়ে বাজারে বা কোথাও যাওয়ার সময় মুরুব্বি এবং বয়সে বড়দের দেখে সাইকেল থেকে নেমে যেতে হবে- এ ছিলো স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম। এ মুরুব্বি বা বয়সে বড়দের দলে শুধুমাত্র নিজের পরিবার বা বাড়ির কেউ থাকতেন, তা নয়। বয়োজ্যেষ্ঠ যে কাউকে দেখলেই একটু আগে থেকে নেমে সালাম দেয়ার আদব মেনে চলতে হতো কিশোরদের।
যদি দৈবক্রমে অপরিচিত মনে হওয়া কোন বয়োজ্যেষ্ঠ বা সিনিয়র দেখে নেমে সালাম দেয়া না হতো, তাহলে টেনশন হতো, পেছন থেকে কেউ এ দৃশ্য দেখে পরিবারের বা বাড়ির কোন সদস্যকে জানিয়ে দিচ্ছেন কি না।
বলে রাখা ভালো, পারিবারিক বা সামাজিক শিক্ষায় “প্রশ্রয় দেয়া”র প্রবণতা ছিলো না তখন। পুকুরে বেশিক্ষণ সাঁতরানো, সন্ধ্যার পরও খেলার মাঠে থাকা ইত্যাদি করলেই বড়দের শাসনের মু্খোমুখি হতে হতো। অনেক সময় বাড়ি বা সমাজের বড়জন কাউকে ডেকে আনা হতো। ডেকে আনা হবেো শুনলেই সে কাজ থেকে বিরত থাকা হতো আমাদের।
সাইকেলে চালিয়ে যাওয়ার সময় সিনিয়রদের দেখে নামতে পা তুললেই সিনিয়রগণের অনেকেই বলতেন, “আরে থাক থাক, নামতে হবে না। পড়ে যাবি। ” তবে এ নিষেধের মধ্যে ছিলো সিনিয়রদের সন্তুষ্টি, দোয়া এবং স্নেহভরা ভালোবাসা।
খুব ছোটবেলায় মাঝে মাঝে বিরক্তও হতাম এই ভেবে যে, এক কিলোমিটার পথ সাইকেলে চড়ে যেতে যদি ৫/৭ জন মুরুব্বির দেখা হয়, তাহলে হেঁটে যাওয়া আর সাইকেলে চড়া সমান সময় লাগবে।
বেশি সমস্যা হতো তখন যখন পেছনে ক্যারিয়ারে কেউ বসা থাকতো। নামতে হলে তাকেও নামতে হতো।
তবে কিছুটা বড়বেলায় বুঝেছি, এরই মধ্যে নিহিত ছিলো সামাজিক শিক্ষা ও শিষ্টাচার। যে শিষ্টাচার ও ব্যবহারবিধির কারণে সন্ধ্যায় বাজারে যাওয়া, চায়ের দোকানে বসাো সেলুনে অপ্রয়োজনে বসা, সন্ধ্যার পর পড়াশোনা না করে ঘুরাঘুরি ইত্যাদিতে ছিলো ভীষণ রকমের নিষেধাজ্ঞাম আর এসব নিষেধাজ্ঞাই আমাদের সুশৃঙ্খল পথচলার মাধ্যমে ভালো মানুষ হওয়ার প্রশিক্ষণ দিতো।
আজ গ্রামবাংলা মোটর বাইকে পরিপূর্ণ। তবে অনেকের কাছে সাইকেল দেখা যায়। আমাদের মতো যারা গ্রামে বড়ো হয়েছে, তাদের কাছে সাইকেল শুধু যানবাহন নয়, অনেক কিছু। সাইকেল একটি আবেগ। একটি ভালোবাসা। তাছাড়া, মোবাইল প্রযুক্তিবিহীন সেসব সময়ে নিজের, বন্ধুর বা স্বজনের সাইকেল থাকা মানে বাড়ির অন্য কারো প্রয়োজন মেটাতেও সহায়ক হতো।
আমাদের সেই মধুর শৈশবে সাইকেল থেকে নেমে অপরকে সম্মান করার মাঝে নিহিত ছিলো বড়দের সম্মান করার প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ।
–
মোঃ নাজিম উদ্দিন
জুন ১৩, ২০২২
(ছবিটা এক বন্ধুর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)