সমবায় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা।

Jun 3, 2021 | ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-রাজনীতি | 0 comments

View : 190
 

সমবায় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা।
শাহিদা আকতার জাহান।

——-

সমবায় সমিতির ইতিহাস মানবসভ্যতার ইতিহাসের ন্যায় অনেক প্রাচীন। সমবায় সমিতির সাংগঠনিক রূপ প্রতিষ্ঠিত হয় ইউরোপের শিল্পবিপ্লবের কিছু পূর্বেই। ব্রিটিশ ভারতের জেনারেল লর্ড কার্জন সর্বপ্রথম ১৯০৪ সালে সমবায় সমিতি আইন জারি করেন। এই আইনের মাধ্যমেই উপমহাদেশে সমবায় আন্দোলনের অভিযাত্রা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, যেমন সত্য তেমনি সত্য বঙ্গবন্ধুর জনসম্পৃক্ত উন্নয়ন ভাবনা। বঙ্গবন্ধুর এই জনগণমুখী উন্নয়ন ভাবনায় আমরা সমবায়ের উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখতে পাই। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী হত্যা-গণহত্যা র্ধষণ নির্যাতন করে বাংলাদেশকে একটি শ্মশানভূমিতে পরিণত করেছিলো। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে যখন ফিরে আসেন।
তখন সারা দেশ ছিলো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। দেশের এক কোটি মানুষ তখন ভারতে থেকে দেশে এসেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ এবং কোটি কোটি অসহায়গ্রস্ত সহায়সম্বলহীন মানুষকে পুনর্বাসন করা অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসা ধ্বংসপ্রাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনরায় চালু করা, বন্ধ হয়ে যাওয়া মিল-কারখানা,শিক্ষা পতিষ্টান চালু করা, অর্থনৈতিক,সামাজিক ব্যবস্হা সহ সদ্যস্বাধীন দেশকে গড়ে তোলার কঠিন দায়িত্বভার গ্রহণ করে, সদ্য যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে সমবায়ের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর মতে”দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’।দশের লাঠি একের বোঝা এই প্রবাদ বাক্যে সমবায় বা একতার প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত হয়েছে।

একতার মধ্যে জাতির মুক্তি জনগণের মুক্তি ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এক কথায় সমবায়ের মূলকথা হচ্ছে একতাই বল। নিজের অস্তিত্ব, পার্থক্যকে উপেক্ষা করে, অন্যের মনের সঙ্গে এক হয়ে যাওয়ার নামই একতা। একতাবদ্ধ থাকলে যতই কঠিন কাজ হোক মনে সাহস থাকে, শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং জীবনের কঠিন সাফল্য অনিবার্য হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের সমবায় আন্দোলন একটি সমৃদ্ধ এবং দীর্ঘ ঐতিহাসিক পথপরিক্রমা রয়েছে। নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নেগড়া সমবায়কে অগ্রসর হতে হয়েছে। সমবায় শুধু একটি উন্নয়ন দর্শনই নয়, এটি উন্নয়ন সমৃদ্ধি আর্থসামাজিক আন্দোলনও বটে। জাতীয় সংহতি বা একতা জাতিকে শক্তিশালী করে তোলে, উন্নতি ও সমৃদ্ধির শিখরে নিয়ে যায়। সভ্যতার অগ্রগতির পেছনেও কাজ করছে একতাবোধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনে পাণে বিশ্বাস করতেন সমবায় হলো একটি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র, সুশাসন, আন্দোলন,উৎপাদন চেতনা ও আদর্শ। দেশের বিপুলসংখ্যক গ্রামীণ জনগণ, যারা দরিদ্র, হতদরিদ্র অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষত তাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সমবায়কে একমাত্র অবলম্বন হিসেবে বঙ্গবন্ধু প্রথম চিহ্নিত করেছিলেন। স্বাধীন বিধ্বস্ত দেশকে গঠণ করার লক্ষ্যে তিনি সুগভীর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন।তাঁর কর্মপরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে এলো সম্ভাবনাময় এ দেশের প্রকৃতিই এদেশের উর্বর মাটি,পরিবেশ,মানুষ, নদী,খাল বিল জলাশয় সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই এ সম্পদগুলোকে যথার্থ কাজে লাগাতে এক পর্যায়ে গ্রহণ করলেন সমবায়ভিত্তিক কর্মযজ্ঞ।
নিম্নে আন্তর্জাতিক সমবায়ের মূলনীতিসমূহ আলোচনা করা হলো ১. অবাধ ও স্বতঃপ্রবৃত্ত সদস্যপদ,
২. গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা,
৩. সমিতির তহবিলে সদস্যদের অংশগ্রহণের পরিমাণ যাই হোক না কেন, তাদের সবারই অধিকার সমান থাকবে,
৪. উদ্বৃত্ত অংশে সব সদস্যেরই অধিকার থাকবে,
৫. সমিতির সদস্যগণকে নিয়মিতভাবে সমবায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা,
৬. সদস্যদের পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতার স্পৃহা জাগরূক রাখা। গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন আনাই ছিলো বঙ্গবন্ধুর সমবায় উন্নয়নের দর্শন ও পরিকল্পনার নির্যাস। গরিব-দুঃখী, শোষিত কৃষক-জনতার মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ‘বাধ্যতামূলক বহুমুখী গ্রাম সমবায়’ কর্মসূচি গ্রহণ করেন।

এ কর্মসূচির মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো হলো নিম্নরূপঃ
১. পাঁচ শত থেকে এক হাজার পরিবার সমন্বয়ে গ্রাম সমবায় গঠন। ২. এসব পরিবারের সব কৃষিজমি সমবায়ের অধীনে ন্যস্তকরণ।
৩. প্রতিটি গ্রাম সমবায় পরিচালনার জন্য সমবায় সভ্যদের ভোটে একটি নির্বাচিত পরিষদ গঠন।
৪. মালিক-কৃষক ও ভূমিহীন কৃষক-মজদুর সমবায়ের কাজের জন্য নগদ পারিশ্রমিক পাবেন।
৫. সমবায় ক্ষেতখামারে ও অন্যভাবে উৎপাদিত ফসল সমান তিন ভাগে ভাগ করে ভূমি মালিক, ভূমিহীন কৃষক-মজদুর বা সমবায় ও সরকারের মধ্যে বিতরণ।
৬. সরকার সমবায়ের কৃষি উৎপাদন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যাবতীয় উপকরণ বা সাজসরঞ্জাম স্বল্প মূল্যে বা ঋণে বা বিনা মূল্যে সমবায়কে প্রদান করবে।
৭. সমবায় সভ্যদের যৌথ চাঁদা বা শেয়ারে গঠিত মূলধনে এবং সরকারের মূলধন ও ঋণে প্রতিটি সমবায়ের অধীনে নানা কুটির শিল্প ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।
৮. সরকার ধর্মগোলায় রক্ষিত সম্পদের মধ্য থেকে একটি অংশ নিয়ে নেবে, বাকি অংশ সমবায়ের নানা দুর্যোগ ও প্রয়োজন মোকাবেলার জন্য জমা থাকবে।
৯. সরকার গ্রাম সমবায় এলাকার আইন-শৃঙ্খলা, রাস্তাঘাট, অন্যান্য যোগাযোগব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, সেচ, সার, বীজ, কীটনাশক, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজ করবে। ১০. সমবায় তার সভ্যদের প্রদানকৃত শেয়ার মূলধন ও সরকারের ঋণ বা অংশগ্রহণের ভিত্তিতে যেকোনো ব্যবসা-বাণিজ্য ও ছোটখাটো কলকারখানা স্বাধীনভাবে পরিচালনা করতে পারবে।
১১. প্রতিটি গ্রাম সমবায় উৎপাদন ও প্রশাসনিক ইউনিটরূপে গড়ে উঠবে। ১২. প্রতিটি গ্রাম সমবায় সমন্বয়ে একটি করে ‘আঞ্চলিক সমবায় কার্যালয়’ গড়ে উঠতে পারে, তবে থানা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হবে গ্রাম সমবায়গুলোর কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই কর্মসূচি ছিলো বাধ্যতামূলক বহুমুখী গ্রাম সমবায়ের একটি যুগান্তকারী বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। এই কর্মসূচিগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের উৎপাদন ও বণ্টনব্যবস্থা তথা সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক পরিমণ্ডলে অনেকগুলো পরিবর্তন আসতো।

তার কয়েকটি হলোঃ
ক) গ্রামে পাড়ায়- মহল্লায় সমবায় কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে এলাকার সকল কৃষিজমি সমবায়ের ওপর ন্যস্ত থাকতো এলাকার কৃষক-কিষানি সমবায়ের সদস্য হয়ে সবাই মিলে চাষাবাদ করত পারতো। এই পদ্ধতিতে বর্গাপ্রথা, মজুদদার প্রথা উঠে যেত।
খ) উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শাররীক শ্রম দেওয়ার জন্য সবাইকে যেমন পারিশ্রমিক দেওয়া হতো। তেমনি অন্যদিকে উৎপাদিত সকল ফসল সমান তিন ভাগে জমির মালিকসহ কৃষি শ্রমিক বা ভূমিহীন ও সমবায় বা সরকারের মাঝে সমান ভাগে ভাগ করা হতো। এ অবস্থা পতিষ্টিত হলে কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব শুরু হতো। এর ফলে ব্যাপক জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে পরিবর্তন হতো।
গ) ফসলের উদ্বৃতাংশ বিদেশে রপ্তানি করে কৃষি ও শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করে দেশকে শিল্পায়িত করা সহজতর হতো।
ঘ) দেশে অনেক আগেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উদ্ধেদ্ব থাকতো
ঙ) বিধিবদ্ধ পুঁজিতে বেসরকারি উদ্যোগে বা ব্যক্তিমালিকানায় ছোটখাটো শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা ও অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যকে উৎসাহ প্রদান করা হতো।
চ) ব্যক্তিমালিকানা যাতে তাদের শ্রমিকদের ও দ্রব্যসামগ্রীর ক্রেতা সাধারণকে শোষণ করতে না পারে, সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো।
ছ) গ্রাম সমবায়ই হতো প্রশাসনের প্রাথমিক ও মূল ভিত্তি।
জ) গ্রাম সমবায়ের সার্বিক ক্ষমতা থাকত জনসাধারণের ওপর। এর ফলে নেতৃত্বের বিকাশসহ জনগণের ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত হতো।
ঝ) সমবায়ের অধীনে ভূমির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা হতো। ফলে উৎপাদনশীলতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেত।
ঞ) শুধু উৎপাদন নয়, সুষ্ট বণ্টন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়ও গুণগত পরিবর্তন আসতো। সার্বিক দিক বিবেচনা করে সমবায় ভিত্তিক সমাজ পুরাপুরি ভাবে বিনির্মাণ করতে পারলে ‘টেকসই উন্নয়ন’ নিশ্চিত হতো।

সমবায়ের নীতি অনুসারে যার জমি তারই থাকবে, কেবল সকলে একত্রে কাজ করবে ও উৎপাদিত ফসল প্রত্যেকের জমি অনুপাতে ভাগ করে নেবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে ভূমির খন্ডবিখন্ডতা হ্রাস পাবে এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা সম্ভব হওয়ায় উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। ইতিহাস সমবায় আন্দোলনের অনেক পুরনো। তথ্যমতে, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০৪ সালে প্রথম কোঅপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটিজ অ্যাক্ট সর্বপ্রথম জারি করা হয়। এর পর থেকে সারা ভারতে সমবায় আন্দোলন বিকাশ লাভ করতে থাকে। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে সমবায় আন্দোলন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সমবায়ের এ অপরিসীম গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার সামনে বলেছেন ‘আমারা দেশে নতুন সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি, আমি গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে। ভুল করবেন না। আমি আপনাদের জমি নেব না। ভয় পাবেন না যে জমি নিয়ে যাব তা নয়। পাঁচ বছরের প্ল্যান- এ বাংলাদেশের ৬৫ হাজার গ্রামে একটি কো-অপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে কো-অপারেটিভ– এ জমির মালিকের জমি থাকবে। এগুলি বহুমুখী কো-অপারেটিভ হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে, ফার্টিলাইজার যাবে তাদের কাছে, টেস্ট রিলিফ যাবে তাদের কাছে। ওয়ার্কস প্রোগ্রাম যাবে তাদের কাছে। আস্তে আস্তে ইউনিয়ন কাউন্সিল টাউটদেরকে বিদায় দেয়া হবে তা না হলে দেশকে বাঁচানো যাবে না। এই জন্যই ভিলেজ কো-অপারেটিভ হবে। আমি ঘোষণা করছি আজকে যে, পাঁচ-বছরের প্লানে প্রত্যেকটি গ্রামে পাঁচশত থেকে হাজার ফ্যামিলি পর্যন্ত নিয়ে কম্পালসারী কো-অপারেটিভ হবে। আপনার জমির ফসল আপনি নেবেন, অংশ যাবে কো-অপারেটিভের হাতে, অংশ যাবে গভর্নমেণ্টের হাতে। দেশকে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে পত্যয়ে বঙ্গবন্ধু দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যে, মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক, সম্পদের সুষম বণ্টন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার গুরুত্বে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১৩ (খ) অনুচ্ছেদে দেশের উৎপাদন যন্ত্র, উৎপাদন ব্যবস্থা ও বণ্টন প্রণালিগুলোর মালিকানার ক্ষেত্রে সমবায়ী মালিকানাকে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় মালিকানা খাত হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। তিনি শুধুমাত্র সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েই সমবায়কে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি গ্রাম উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং শোষিত নির্যাতিত মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার করার জন্য দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সমতা ভিত্তিক উন্নয়ন দর্শনের আওতায় সমবায়কে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে সুযোগ করে দিয়েছিলেন।বঙ্গবন্ধু বলেন,” কো-অপারেটিভ একটা করে স্যাম্পল করে আমরা অগ্রসর হব। ইনশাআল্লাহ তারপর আর কোনো অসুবিধা হবে না। একবার যদি একটা ডিস্ট্রিক্টে কো-অপারেটিভে মানুষ দেখে যে, এই দেশের মানুষের এই উপকার হয়েছে, তাহলে আপনাদের আর কষ্ট করতে হবে না। তারা নিজেরাই এসে বলবে, আমাদের এটা করে দাও- আমাদের করে দাও। কাজের জন্য আসতে হবে ময়দানে। আপনাদের কাজ করে শিখতে হবে। সেই জন্য আমার কো-অপারেটিভ যদি কাজ করে শিখতে চান, যদি ভবিষ্যৎ অন্ধকার করতে না চান, তাহলে আমার কো-অপারেটিভ সাকসেসফুল করুন।
২০১৮ সাল থেকে ১৯ সালে ভারতে ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ ডেইরি ফেডারেশন অভ ইন্ডিয়া লি. সমবায়ের একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত। ২০১৮ থেকে ১৯ সালে অর্থবছরে এই ফেডারেশনের ২৯.৭২ কোটি মার্কিন ডলার লেনদেন হয়েছে। ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করে ২৭টি রাজ্য, ২১৮ টি জেলা দুগ্ধ ইউনিয়ন, ১ লক্ষ ৭৭ হাজার গ্রাম দুগ্ধ সমিতি, ১ কোটি ৬৩ লক্ষ দুগ্ধ খামারিদের নিয়ে এই ডেইরি ফেডারেশন বর্তমানে কাযক্রম পরিচালনা করছে। এই ফেডারেশন বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘি, পনীর, মাখন, দুগ্ধ, হে পাউডার, গুড়োদুধ, টেট্রাপেকে দুগ্ধ বাজারজাতকরণ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর
আদর্শিক চেতনার আলোকে বিশ্বাস করতেন বাংলার মেহনতি জনগণ একদিন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনদর্শন ছিল-এদেশের গণমানুষের সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি যার নিয়ামক ভূমিকায় থাকবে জনগণ। তাই বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন-ভাবনায় আমরা সমবায়ের উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখতে পাই। ১৯৭২ সালে জাপানের জেন-নোহ হচ্ছে কৃষি সমবায় সমিতিসমূহের একটি ফেডারেশন যাত্রা শুরু করে সারাদেশে ৯৪৫টি সমবায় ইউনিয়নের মাধ্যমে পরিচালিত এই ফেডারেশনের বর্তমান মূলধনের পরিমান ১০৮ কোটি মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক টার্নওভারের পরিমান ৪৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। জেন-নোহ’র ব্যবসাসমূহের মধ্যে রয়েছে চালসহ দানাশস্য উৎপাদন, টাটকা ফলমুল ও শাকসব্জি উৎপাদন, কৃষি ব্যবসা কার্যক্রম, কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ, প্রাণিসম্পদ উৎপাদন কার্যক্রম, ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ ও গুনগতমানসম্পন্ন দ্রব্যাদি সরবরাহ, কৃষিজাত পণ্য রপ্তানী কার্যক্রম ইত্যাদি। জাপানের সমবায় বর্তমানে ৩৬০০০ সমবায় সংগঠন, ৮০ মিলিয়ন সদস্য এবং ৬ লক্ষ ৪০ হাজার কর্মচারির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীন সোনার বাংলার গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি পরাধীণ বাংলাকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তাই তিনি বজকন্ঠে বলেছিলেন, ‘আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্যঃ “বাংলার মানুষ যেন পেট ভরে খেতে পায়, পরনে কাপড় পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয়।’ সে কারণেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য নিয়ে পবিত্র সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে, কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।’ আবার সংবিধানের ১৯(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষমসুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে। বাংলাদেশ সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে বহু প্রতিষ্ঠান তাদের লক্ষ্য অর্জনে পৌঁছাতে পেয়েছে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর বিপুলভাবে উপকৃত হয়েছে। এর উদাহরণ হিসাবে বলা যায়” দ্য চিটাগং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড। এই সমবায়ী প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ ৬৯ বছরের সফল অগ্রযাত্রার কর্মকাণ্ডের জন্য ২০১৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জাতীয় সমবায় পুরস্কারে ভূষিত করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতৃক গ্রামাঞ্চলের বাধ্যতামুলক উৎপাদনমুখী সমবায়ের কথা উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২ নভেম্বর ২০১৯ সমবায় দিবসে বলেছেন,” সমবায়ের সদস্যবৃন্দ যে সব পণ্য উৎপাদন করছে সেগুলো শিল্প কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে যদি প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে পারে তাহলে গ্রাম বাংলা আর অবহেলিত থাকবে না। দেশের কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে সমবায়ের যোগসূত্র স্থাপন করা গেলে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে। চাষোপযোগী কোনো জমি অনাবাদি থাকবে না। দেশের উন্নয়নে যুব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মাটি, জল, বায়ু ও পরিবেশের সমন্বয়ে সমবায় ভিত্তিক উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই। সমবায়ের মূল চেতনা হলো সম্মিলিত উদ্যোগ। একার পক্ষে যে কাজ করা সম্ভব নয় তা সম্মিলিত উদ্যোগে সহজে করা যায়।
১৯৭২ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন কর্তৃক আয়োজিত সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ ও আদর্শকে ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে প্রণীত কৃষি নীতিতে কৃষি সমবায় ব্যবস্থাপনাকে অধিকতর গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সেই আলোকে কৃষি নীতি ২০১৮ এর ১৬ অনুচ্ছেদে কৃষি সমবায়কে গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। ১৬.১ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘ভূমির মালিকানা অক্ষুন্ন রেখে প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র উৎপাদনকারী ও উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে স্বপ্রণোদিত সমবায় বা গ্রুপভিত্তিক কৃষি উৎপাদনকে উৎসাহ ও সহযোগীতা প্রদান করা’। ১৬.৪ উপ-অনুচ্ছেদে সমবায়ভিত্তিক বিপণন ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করে বলা হয়েছে ‘কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে সমবায়ভিত্তিক বিপণনকে সহযোগীতা ও উৎসাহ প্রদান করা।

১৬.৭ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘কোন জমি পতিত বা অনাবাদি না রেখে অনিবাসি ও অনুপস্থিত জমির মালিকদের কৃষি উপযোগী জমি সমবায় ব্যবস্থায় চাষের আওতায় এনে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার জাতকরণে উদ্বুদ্ধ করা এবং সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য হতে অর্জিত লভ্যাংশ জমির মালিক, কৃষি শ্রমিক ও সমবায়ের মধ্যে যৌক্তিক হারে বিভাজনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থ সংরক্ষণ করা।’ ২০২০ সালে ১৩ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্য ভাষণের বলেছিলেন,”এই দুঃসময়ে আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা শুধু সচল রাখা নয়, আরও জোরদার করতে হবে। সামনের দিনগুলিতে যাতে কোন প্রকার খাদ্য সঙ্কট না হয়, সেজন্য আমাদের একখন্ড জমিও ফেলে রাখা চলবে না।’
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য রয়েছে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধি দেশের কাতারে পৌঁছে যাওয়া।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিলেন উন্নাত- সমৃদ্ধ, ক্ষুধা- দারিদ্র্যমুক্ত সমাজব্যবস্হা। আজ আমাদের যা কিছু উন্নয়ন অর্জন, উত্তরণ, সমৃদ্ধি তার ভিত্তিমূলে রয়েছে বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের লালিতস্বপ্ন উন্নয়ন ভাবনা। তার আন্দোলন, সংগ্রাম-চেতনা ভাবধারা আবেগমথিত সম্মিলিত প্রয়াসের অর্জন সাবলীল প্রকাশ ঘটে সোনার বাংলাদেশ করার।
বঙ্গবন্ধুর সমবায় আন্দোলন, সমবায় ভাবনা ও উন্নয়ন দর্শন একান্তই প্রাসঙ্গিক।

সংগ্রামী চেতনার আলোকে বঙ্গবন্ধু মনে করতেন, সমবায় একটি মানবকল্যাণ ও মানবকল্যাণমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন পদ্ধতি। যার মাধ্যমে মানুষের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব। ২০১২ সালকে আন্তর্জাতিক সমবায় বর্ষ হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন তাঁর বাণীতে বলেছিলেন, ‘সমবায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দেয় যে অর্থনৈতিক মুনাফা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা একই সঙ্গে অর্জন সম্ভব।’ বঙ্গবন্ধু মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন সমবায় সমিতি কোনো সাধারণ প্রতিষ্ঠান নয়, এটি এমন একটি জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে আছে গণতন্ত্র, অর্থনীতি, সম্মিলিত কর্মপ্র্রচেষ্টা, উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ, সদস্যদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির প্রয়াস; সর্বোপরি সদস্যদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন।
যশোরে এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘কৃষক ভাইয়েরা সমবায় খামার করো’ সূত্র :দৈনিক ইত্তেফাক, ৩ এপ্রিল ১৯৭২।

কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর এক সভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সমবায়ের ভিত্তিতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করুন।’ সূত্র :দৈনিক ইত্তেফাক, ২৭ এপ্রিল ১৯৭২। বর্তমানের জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত খাদ্য চাহিদা, কৃষি শ্রমিকের অপ্রতুলতা ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, অব্যবহৃত পতিত কৃষি জমি উৎপাদনের বাইরে পড়ে থাকা-এসব সমস্যার কথা আগেই বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু ‘গ্রাম সমবায় সমিতি’র পরিকল্পনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলেন দেশের প্রতিটি গ্রামে সমবায় সমিতি গঠন করা হবে। তিনি গণমুখী সমবায় আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনেক গভীরে প্রোথিত ছিলো। ছিল সুদূরপ্রসারী চিন্তাসমৃদ্ধ। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে তিনি বলেছিলেন,”বাংলাদেশ আমার স্বপ্ন, ধ্যান, ধারণা ও আরাধনার ধন। তিনি ছিলেন বাঙালির শোষিত-নিষ্পেষিত-নির্যাতিত- নিপিড়িত অত্যাচারিত মুক্তিকামী মানুষের মুক্তিদূত । মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখ তাঁর মন কাঁদতো। তাই তিনি মনের গভীর থেকে আন্তরিক বিশ্বাসে উচ্চারণ করেছেন ‘বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত। শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। আমার কণ্ঠ শোষিতের মুক্তির জন্য চিরকাল সোচ্চার থাকবে। ২০১৮ সালে জাতীয় কৃষি নীতি প্রণয়ন করেছে সেখানে কৃষি সমবায়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কৃষি সমবায়ের গুরুত্ব আরোপ করে নীতিমালায় বেশ কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা নিম্নরূপ—১৬.১- ভূমির মালিকানা অক্ষুণ্ন রেখে প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে স্বপ্রণোদিত সমবায় ভিত্তিক কৃষি উৎপাদনকে উৎসাহ এবং সহযোগিতা প্রদান।
– ১৬.২- সম্প্রসারণ সেবা গ্রহণ ও সমবায়ভিত্তিক উৎপাদন, কৃষি যন্ত্র ব্যবহার, বিশেষভাবে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ, ঋণ এবং উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা;
– – ১৬.৩- লাভজনক ফসল উৎপাদন এবং সেচ ও খামার যান্ত্রিকীকরণ কর্মকাণ্ডে সমবায়ভিত্তিক উদ্যোগকে অগ্রাধিকার প্রদান করা;
– ১৬.৪- কৃষি পণ্যের নায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে সমবায়ভিত্তিক বিপণনকে সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদান করা;
– ১৬.৫- কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনা, সমবায় সমিতিগুলোকে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ, আয়বর্ধন, সম্প্রসারণসেবা প্রাপ্তি, উপকরণ সংগ্রহ এবং ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা প্রদান করা;
– ১৬.৬- সমবায়ভিত্তিক কৃষিপণ্য উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিপণনে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা;
– ১৬.৭- কোনো জমি পতিত বা অনাবাদি না রেখে অধিবাসী ও অনুপস্থিত জমির মালিকদের কৃষি উপযোগী জমি সমবায় ব্যবস্থায় চাষের আওতায় এনে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজারজাতকরণে উদ্বুদ্ধ করা এবং সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য হতে অর্জিত লভ্যাংশ জমির মালিক, কৃষিশ্রমিক ও সমবায়-এর মধ্যে যৌক্তিক হারে বিভাজনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থ সংরক্ষণ।
কৃষকের স্বার্থ রক্ষার জন্য ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে বঙ্গবন্ধু কৃষি সমবায়ের ওপর যেভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও সমানভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বারবার বলে যাচ্ছেন, দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, সাথে সাথে তিনি উৎপাদন বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। কৃষিক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১৩ বছরে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে,। তার পর ও যদি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষিকে যদি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় কৃষকের সম্ভাবনার দ্বার আরো উন্মোচিত হবে।
(চলবে..)

[লেখকঃ শাহিদা আকতার জাহান
সদস্য, জেলা পরিষদ, চট্টগ্রাম।
নির্বাহী সদস্য, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ।
সিনিয়র সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ।
সভাপতি, চট্টগ্রাম দুঃস্থ কল্যাণ সংস্থা এবং
“বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা ও বিশ্বভাবনা” এবং “অপ্রতিরোধ্য শেখ হাসিনা” গ্রন্থদ্বয়ের রচয়িতা।

পুনশ্চঃ লেখকের তথ্য ও লেখনশৈলী অপরিবর্তিত রেখেই প্রকাশিত হয়েছে]