শঙ্কিত কারাগার
———————
এখানে বেঁচে নেই শরৎচন্দ্রের সেই ‘মহেশ’,
দুঃখের গল্পটা এখনো বহু গফুর, আমিনার,
থামেনি এখানে সামন্তপ্রথা, শোষণ শাসনের রক্তচক্ষু,
থেমে আছে শুধু নজরুলের সাম্যের গান, শ্রাব্য কাব্য!
১৮৮৬ এর শিকাগোর ‘হে মার্কেট’ এ স্মৃতির ‘মে দিবস’,
এখানে একদিনের ১লা মে’র পর সে বিস্মৃত!
এখনো আলোর দীপ্তির ভীড়ে ‘হার্ট অব ডার্কনেজ’
ধ্বসেপড়া রানাপ্লাজার সহস্র নিস্তেজ দেহ
কিংবা রুপগঞ্জে জুস কারখানায় গত অগ্নিকান্ড,
আগুনের কালো ধোঁয়ায় অদৃশ্য কবিতার পূর্ণিমা!
অর্ধশতাধিক ঘর্মাক্ত শ্রমিকের পোড়া মৃতদেহ!
এখানে একদিন শুধু স্মরণে থাকে শবের ছবি
বাতাসে গন্ধ ছড়াবে বলে উদ্ধার হয় লাশ, স্মৃতিও!
এখানে এখনো যাদের ঘর্ম-রক্তে ভবন দাড়ায়
তারাই চাপা পড়ে ভবন তলায়, জীবনপাড়ায়
এখানে শিশুরা বলী হয় আফ্রিকার ডার্ক চকলেট
কিংবা সাবেক উটের জকি হিসেবে ব্যবহৃত শিশু!
এখানে মাটির নীচে চাপা পড়ে শিশু বা শ্রমিক অধিকার!
এখানে শোষণের মাঝে শ্রমের শঙ্কিত কারাগার;
এখানে বিস্মৃত আজ নজরুলের সাম্যের অধিকার!
এখানে সংবাদ শিরোনাম ভুলে যায়
শ্রমঅধিকার!
একদিন নামমাত্র দুঃখপ্রকাশ, স্বরূপে চাটুকার!
পশ্চিমা ফুটবল বা ক্রিকেটের স্কোর এখানে মুখস্থ,
বাঙালী মনে রাখেনা মৃত শ্রমিকের সংখ্যা!
এখানে বিচিত্র চিত্রে বসতি, প্রোফাইলে ‘সাম্য, সমতা’!
বুলি আওরাই যদিও মানুষের, ভুলে যাই মানবতা।
—
মোঃ নাজিম উদ্দিন
জুলাই ১০, ২০২১
(বাংলাদেশের নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে অগ্নিকান্ডে নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা)