ব্যক্তিজীবন থেকে সমাজজীবনঃ নীরব সেবক, নীরব হিতৈষী
একদিন “সালাম” দেওয়া বা এর প্রচলন নিয়ে কিছু সংগৃহীত তথ্য ও কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানানোর সুযোগ হয়েছিল, সবার জন্যে। সমাজে কিছু ভাল অভ্যাসে, কিছু ভাল আমল সর্বস্তরে সবসময় সমান তালে প্রচলন সহজ না হলেও অনেক ব্যক্তি আছেন, যাদের কাছে ভাল কাজের চর্চা বা অভ্যাস যেন প্রতিযোগিতার মত।
তাদের কারণেই হয়ত এখনো সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাড়িয়ে আছে অ
আমাদের পারিপার্শ্ব, সমাজ, রাষ্ট্র বা বিশ্ব, সারা পৃথিবী।
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে মসজিদের মিনার থেকে ইজানের ধ্বনি শুনে যারা শয্যাত্যাগ করে, তাদের জন্য এটা নিত্য অভ্যাস; কোনদিন অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাদ গেলে তা তাদের মনোক্ষুণ্ণের কারণ হয়। এমনও ব্যক্তিকে দেখেছি, মোয়াজ্জিন আসার পূর্বেই পৌছে যান মসজিদে, সময় হলে নিজেই আজান দিয়ে থাকতেন। আমাদের গ্রামের দাদা-শ্রেণীর সেসব একজন মুরুব্বীকে তার সহধর্মিণী একবার জিজ্ঞাস করলেন, এত ভোরে মসজিদে গিয়ে আজান দেয়ার কী দরকার? আজান দেওয়ার প্রচুর প্রতিদান/সওয়াবের কথা বলা হলে তার কর্ত্রী বলেন, তাহলে নিয়োগকৃত মোয়াজ্জিনকে মাসিক বেতনের ভিত্তিতে রাখার দরকার কি ছিল? তিনিওতো সওয়াব পান! রম্যময় প্রশ্নবানে জর্জরাত হলেও নিজের ভাল অভ্যাসে নিয়ত চর্চারত ছিলেন তারা। এখনও আছেন, অনেকে। থাকবেনও।
অনেক বলেও বাবা-মা-শিক্ষক কিছু ছেলেকে সালাম দেয়ার অভ্যাস করাতে পারেন না। ব্যতিক্রম অনেক। পথে চলার পথে গ্রামের সড়কে না চিনেও অনেককে সালাম দেয়, অনেক কিশোর-যুবা। একজন যুবককে চিনি যে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ জনকে সালাম দিবেনই। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি গণনা কর কিভাবে? সে বলে, দিনে দুই তিনবার হিসেব করে নিশ্চিত করি; বড় কিংবা ছোট – যেকোন বয়সীদের সালাম দেয় সে। যে সন্তুষ্টি চিত্ত তার মধ্যে বিরাজমান থাকে – তা শুধু সে-ই উপলব্ধি করতে পারে..অনেকে ফোন শুরু করলেই যত জরুরী- গুরুত্বপূর্ণ কথাই হোক না কেন- আসসালামু আলাইকুম দ্বারা কল শুরু করবেই…
সড়কে প্রচুর জ্যাম বা গাড়ির জট। এক পাশে সহস্র গাড়ির সারি, অপর পাশে দেখবেন, কিছু ত্রি-চতু-চক্রযান পাশ কাটিয়ে (wrong side এ) যাবেই। ফলে, জ্যামের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান। এ অবস্থায়ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কিছু মোটরবাইকের সম্মানিত চালক দেখবেন, সুস্থিরভাবে অপেক্ষমান থাকে। তেমনও চালক (মালিকসহ, যে বা যারা চালান) দেখি যারা রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করলে অন্যের চলাচলের অসুবিধা হবে ভেবে অনেক দূরে খুব খালি জায়গায় গাড়ি রেখে, নিজে কষ্ট করে হেঁটে কাজ সারেন। অন্ধকার স্বার্থপর মানসিকতার লোকের ভীড়ে এরাই দেশের অালোকবর্তিকা।
প্রতিবছর ঈদের দিন খুব ভোরে গ্রামের বাড়ির লম্বা রাস্তাটা মরহুম বাদশা দাদা নিজ উদ্যোগে পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা নিতেন- আগত মেহমানগণ কী ভাববেন, তা ভেবে। বাড়ির যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠান- কিংবা বিয়ের কথাবার্তা, আকদ,বিয়ের অনুষ্টান, কারো জানাজা কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনে শহরে বাসা বাড়ি হলেও প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার পারি দিয়ে উপস্থিত থাকেন বাড়ির সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ বেশ কিছু ব্যক্তিগণ।
শত অজুহাতের যুগে তেমন মানুষদের আন্তরিকতায় সমাজ এখনো “সমাজ” আছে।
নিরবে নিভৃতে কারো প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনে অনুরোধ পাওয়ামাত্রই গোপনে সহায়তা করার মানুৃষও আছেন অনেক। কলেজ বা বিদ্যালয়ের যে শিক্ষককে খুব পয়সা-চিনেন মনে করেন, প্রতিব্যাচে স্যারের আয় কত জানার কৌতুহলে ক্যালকুলেটর চাপেন সবান্ধব – খবর নিয়ে দেখুন, প্রতি ব্যাচে কতজনকে তিনি ফ্রি-তে পড়ান। রাউজান কলেজের অর্থনীতির প্রয়াত অধ্যাপক মৃদুল চক্রবর্তী স্যারের ব্যাপারে জানতাম, নিজের বেতনের এক অংশ প্রতিমাসে বই বিতরণ, কাউকে সাহায্যদান করে বাকি নির্দিষ্ট অংশে কৃচ্ছ্রসাধনা করে চলতেন। তেমনি এক বিদগ্ধ বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ জামাল নজরুল ইসলামের কথা জানি, জীবদ্দশায় নিজের আয়ের সিংহভাগ দার করে দিয়ে খুব সাদাসিদে জীবন যাপন করতেন।
অনেক অতি মিতব্যয়ীকে সব ক্ষেত্রে খরচে আপনার ভাষায় “কিপটামি” করেন- তাদের মত দু’একজন কে চিনবেন, যারা যৌথভাবে একটা এতিমখানা চালান, বাড়ি থেকে অনেক দূরে, লোকচক্ষুর আড়ালে। অনেক দানকারী রিয়া হোয়ার ভয়ে অনেক দূরে অবস্থিত মসজিদে দান করেন। নিজে কোনদিন সেখানে যানও না।
আমাদের সমাজে কিছু মানুষ প্রতিনিয়ত নিজেদের খুব ভাল অভ্যাসে সমাজের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত- পাশের মানুষকে সহায়তা করা বা তার অসুবিধে না হয় এমন কাজে লিপ্ত না থাকার ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকেন- সমাজকে করেন আলোকিত, সুন্দর। প্রচারসর্বস্ব সমাজে প্রচারবিমুখ সেসব সমাজহিতৈষীদের অভিবাদন, শুভকামনা।
সত্যই-
“The real heroes are those whom the world knows not..”
মোঃ নাজিম উদ্দিন
২২/০৩/২০১৮
nazim3852@gmai