বুক রিভিউঃ লা রোশফুকোর “ম্যাক্সিম”
——————————–
“এ আশ্চর্য বইটি (১৬৬৫) পড়তে পড়তে একুশ শতকের মানুষকে যা স্তম্ভিত করে দেয়, তার এর অমোঘ আধুনিকতা। সময়ের ঢেউকে অতিক্রম করে আবহমান মানুষের প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য এ এক যন্ত্রণাক্ত, নির্জন তপশ্চর্যা, সাড়ে তিনশ বছর পরেও যার মূল্য এতটুকু কমেনি।
ভলতের এই বইয়ের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন সেই শিল্পগুণ যা ফ্রান্সের রুচি তৈরিতে সাহায্য করেছে, ফরাসি মনকে শিখিয়েছে পরিমিতি। শুধু লা ফঁতেন, রুসো, গোয়েটে, কান্ট, শোপেনহাওয়ার, নীৎসে বা আঁন্দ্রে জিদ নয়, এই অন্তর্দৃষ্টিময় সজীব ও সুষম বাক্যগুলি যুগে যুগে সাধারণ মানুষকেও আলোকিত করেছে।”- বইয়ের শুরুতে এমন মুখবন্ধই বলে দেয় বইটির ম্যাক্সিমগুলোর গভীরতা, রেফারেন্সসহ প্রায় ৮৭ পৃষ্টার এ অনুবাদগ্রন্থে লেখকের জীবদ্দশায় প্রকাশিত ম্যাক্সিম এবং খ) লেখকের জীবৎকালে অপ্রকাশিত ম্যাক্সিম। দু’প্রকাশের হলেও লেখকের প্রতিটি ম্যাক্সিম জীবন, জগত, প্রেম, ভালোবাসা, সম্পর্ক, বিশ্বাস, বন্ধুত্ব, প্রলোভন, জীবনাকাঙ্খা ইত্যাদি বিষয়ে দারুন উপস্থাপন।
‘আত্মম্ভরিতা যদি বা আমাদের সদগুণগুলোকে নষ্ট না ও করে, অন্ততপক্ষে সেগুলোকে প্রবলভাবে ধাক্কা দেয়”। (ম্যাক্সিম নংঃ ২৫৪)- এ ম্যাক্সিমে লেখক আত্মম্ভরিতার উপর নিজের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তেমনি অসাধারণ প্রতিভার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল, হিংসুটেরাও তার প্রশংসা করতে বাধ্য হয় (ম্যাক্সিম নং- ৫৯). এখানে প্রকাশ পেয়েছে অপর এক বিষয়বস্তু। মূলতঃ জীবন ও জগতের, মানুষের স্বভাব, আচরণ, চিন্তা-চেতনা, মনস্তত্ব ইত্যাদির প্রতিষ্টিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লেখক তার জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, লব্ধ জ্ঞান, চরিত্রের অনিধাবন ইত্যাদির মাধ্যমে গভীর জ্ঞানের সার সংযোগ উপস্থাপন করেছেন এ ম্যাক্সিমগুলোর মাধ্যমে। “Brevity is the soul of wit”. – William Shakespeare এর বিখ্যাত উক্তি যেন ”ম্যাক্সিম” বইয়ের প্রতিটি পাতায় চিত্রায়িত।
সপ্তদশ শতাব্দির এ লেখক লা রোশফুকোর (১৬১৩-১৬৮০) পাশ্চাত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মোরালিস্ট হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন তার জ্ঞানের গভীরতা, জীবনও জগতের উপর সুদীর্ঘ অনুধাবন ও সচেতন দৃষ্টিভঙ্গির জন্য, আর এ সার্বজনীনতা, গভীর উপলব্ধি ও নিরপেক্ষ প্রকাশভঙ্গীই হয়তো একুশ শতকে এসেও এ ম্যাক্সিমসমূহের গ্রহণযোগ্যতা, আবেদন এবং কার্যকারিতা আরো সময়োপযোগী হিসেবে গৃহীত ও স্বীকৃত হচ্ছে।
“ম্যাক্সিম” কোন গল্প নয়- নয় সারিবদ্ধ কোন নীতিকথা বরং এ দু’য়ের অত্যৎকৃষ্ট সমন্বয় যা পাঠকের সামনে খুব কম শব্দে বিরাট অভিধানের মতোই কাজ করে।
অনুধাবন প্রয়োজনীয় এবং সময়োপযোগী ম্যাক্সিম বাংলাভাষার অনুবাদ করে সকলের কাছে তা সহজপাঠ্য করে গড়ে তুলেছেন- যা সত্যিই প্রশংসনীয় দাবিদার।
লেখকঃ লা রোশফুকোর
বইয়ের নামঃ “ম্যাক্সিম”
প্রকাশনাঃ দে’জ পাবলিশিং: কলকাতা।
অনুবাদক তার দক্ষতা, জ্ঞানের গভীরতা, ভাষার উপর দখল ইত্যাদির মাধ্যমে পাঠকের সামনে সহজ প্রাঞ্জল ভাষায় বইটি উপস্থাপন করেছেন।
বইটি সমৃদ্ধ করুক পাঠকের জ্ঞানগৃহ, পরিপূর্ণ করতে সহায়তা করুক পাঠকের জ্ঞান ভান্ডার। বইটি পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে- আমার বিশ্বাস।
শুভকামনা।
—
মোঃ নাজিম উদ্দিন