বিদগ্ধ অধ্যাপক ও অতিরিক্ত সচিব (অবঃ) একেএম শামসুল আলম স্যারের সাথে কিছু সময়
অধ্যাপক এ,কে,এম শামসুল আলম স্যার ইংরেজী বিভাগে আমাদের সম্মানিত স্যারদের স্যারঃ
চট্টগ্রাম কলেজে ইংরেজী বিভাগে অধ্যয়নকালীন সম্মানিত স্যারদের মুখে শ্রদ্ধেয় তাদের পূর্বসূরি অধ্যাপকমন্ডলীদের মধ্যে অধ্যাপক শের মোহাম্মদ স্যার, ছোবহান স্যার, রনজিত কুমার চক্রবর্তী স্যার, আবু আহমদ স্যার, রশিদুল্লাহ স্যার,শামসুল আলম স্যার, আবুল কালাম স্যার, পুর্ণেন্দু স্যার, এস,সি পল স্যার, শামসুজ্জামান খান স্যারগণের নাম শুনেননি এমন শিক্ষার্থী কমই পাওয়া যাবে। এদের অনেকেই ইতিমধ্যেই চলে পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। ক্লাশে বা অন্য কোন সভা বা ফোরামে আমাদের সম্মানিত স্যারদের আলোচনায় কোন না কোন ভাবে উনাদের নাম চলে আসতো, সামনে রাখা রোল মডেলের মত।
অধ্যয়নকালে মনের সচেতন কর্ণারে শ্রদ্ধাভরে “দাদা স্যারদের” স্থান থাকতো সবসময়। গত এপ্রিল ০১, ২০১৭ Chittagong College English Alumni Association (CCEAA) কর্তৃক চট্টগ্রাম কলেজের ইংরেজী বিভাগের শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক প্রয়াত রনজিত কুমার চক্রবর্তী স্যারের আসন্ন স্মরণ সভা উপলক্ষে CCEAA কার্যকরী পরিষদ এর প্রস্তুতি সভা শেষে অধ্যাপক মোঃ আবুল হাসান (বর্তমান অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ) স্যারের প্রস্তাবে আসন্ন স্মরণ সভায় প্রস্তাবিত অতিথি হিসেবে দাওয়াত দেয়ার জন্য রনজিত স্যারের সমসাময়িক সহকর্মী legendary অধ্যাপক (এবং অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়) একেএম শামসুল আলম স্যারের বাসভবনে গেলে জ্ঞানের ভারে নুয়ে পড়া বিনয়ী বিদগ্ধ শামসুল আলম স্যারের সাথে ঘন্টার অধিক সময়কাল কীভাবে চলে গেল, বুঝতেই পারলাম না।
সাথে অধ্যক্ষ মোঃ আবুল হাসান স্যার ছাড়াও ইংরেজী বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলাম শামসুল আলম স্যারের ছাত্র জনাব মির কাশেম (সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বন্দর কর্মকর্তা), প্রদীপ দাশ (সহঃ অধ্যাপক, মাটিরাঙ্গা সরকারি কলেজ), নিশাত হাসিনা শিরিন (সহঃ অধ্যাপক, নিলুফার কায়সার কলেজ), জসিম উদ্দিন আহমমদ চৌধুরী (বিএসআরএম স্টীল এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা)।
শুভ্র দাড়ি, দীর্ঘকায় সুন্দর এ ৭৫-৭৬ বছর বয়স্ক ‘তরুণের’ দীর্ঘক্ষণের অবিরত শৈল্পিক কথাবার্তা, আপ্যায়নে যে শব্দগুলো উঠে এসেছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো integrity, necessity of non- colourness of teachers, expansion of knowledge, squeezing of knowledge to non-knowledge, forgetfulness, honor of teachers, ইত্যাদি।
কর্মজীবনে সাতকানিয়া কলেজ, চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম আর্ট কলেজসহ বিভিন্ন সরকারী কলেজর অধ্যক্ষ ও অধ্যাপক হিসেবে কাজ করার পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়া বহুবিদ অভিজ্ঞতার এ সাক্ষী বর্ণনা করলেন, professional jealousy, integrity, personality ইতাদির তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা।
প্রচারবিমুখ এ শিক্ষাবিদের আলোচনায় জানতে পারলাম বর্তমান সেনাপ্রধানসহ অনেক উচ্চপদস্থ ছাত্র-ছাত্রী, রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমদসহ অনেক প্রতিষ্টিত সহপাঠী থাকার পরও সততার সাথে পেশাজীবন পার করার সরল, কিন্ত সুকঠিন স্তরগুলোর ঘন্টাসমূহ, মুহুর্তসমূহ।
স্যার শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলেন, প্রাক্তন অধ্যাপক ও অধ্যক্ষসমূহের মধ্যে শ্রদ্ধেয় মোজাফফর স্যার, আবদুস সবুর স্যার, ডঃ মোজাম্মেল স্যার, অধ্যাপক সিরাজউদ্দৌলা, মমতাজ উদ্দিন স্যার প্রমুখ সফল second to none দের কথা!
ব্যক্তিগত জীবনে কমপক্ষে ১৩ বার হজ্জ্বব্রত পালনকারী ধর্মপরায়ণ এ ব্যক্তিত্বের কথায় উঠে আসল-
কোথায় জীবনের সার্থকতা,
জীবনের বিভিন্ন স্তরে কীভাবে নিজের কাজ ও পারিশ্রমিককে justify করতে হয়,
কীভাবে শক্তিধর সময়ের মানুষ দিনশেষে নিথর অজগরের মত শুধু only to listen স্তরে পৌঁছে যায়,
কীভাবে যৌবনের ক্রমবর্ধিঞ্চু স্মরণশক্তি, ধীশক্তি ইত্যাদি জীবনের শেষবয়সে শিশুকালের মত knowledge to non-knowledge এ যাত্রারম্ভ করে!
বৈষয়িক বস্তুবাদের প্রাধান্যে ‘ব্যস্ত’ আমাদের এ মরীচিকার সময়গুলোতে বিদগ্ধ অধ্যাপক একেএম শামসুল আলম স্যারের সাথে কিছুক্ষণের এ সময় যেন জীবনের ডায়েরির এক দুর্লভ পৃষ্টা, বিরল অর্জন।
বয়সের ভারে নুয়ে পরা এককালের প্রকৃত জ্ঞানের এই বাগ্মী ফেরিওয়ালা, সুদক্ষ প্রশাসক, অধ্যাপক এ,কে,এম শামসুল আলম স্যার দীর্ঘজীবি হোন, সুস্বাস্থ্যে, এ কামনা করি।
জ্ঞানের জগতে আলোকিত এ ফেরিওয়ালাদের আলোর বিচ্ছুরণ হোক প্রতিনিয়ত, জ্যোতির্ময় হোক সাহচর্যে ধন্যদের জীবন।
—
মোঃ নাজিম উদ্দিন
nazim3852@gmail.com
এপ্রিল ০১, ২০১৭