প্রিয় জ্যোতিষ বড়ুয়া স্যারঃ বেঁচে থাকুন বহুদিন
—
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জ্যোতিষ বড়ুয়াঃ আমাদের স্কুল জীবনের স্মৃতিময়, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্টান মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমান মোহাম্মদপুর স্কুল এন্ড কলেজ) এর শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, সুদক্ষ প্রশাসক, দীর্ঘকালের সুযোগ্য শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের প্রিয় এক কৃতী শিক্ষকের নাম। বর্তমানে তিনি রাউজান ডাবুয়া তারাচরণ শ্যামাচরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
রাউজান আর্যমৈত্রেয় ইনস্টিটিউশন থেকে প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে জানুয়ারী ১৯৯২ সালে মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে এক রোমাঞ্চ, ভীতি ও উত্তেজনার অনুষঙ্গে যে কয়েকজন শিক্ষককে শিক্ষক মিলনায়তনে প্রথম সালাম করলাম, তাঁদের মধ্যে প্রিয় স্বপন স্যার অন্যতম। সে ভয়ে দুরুদুরু মুহুর্তে আরো যে ক’জন উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা হলেন আমার শ্রদ্ধেয় দাদা আহমদুর রহমান, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বাবু অনিল কৃঞ্চ দাশ (তৎকালীন প্রধান শিক্ষক), শ্রদ্ধেয় সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রয়াত স্বপন কুমার, মাওলানা ইসহাক, বাবু সন্তোষ চক্রবর্তী, মাওলানা কাজী আবদুস সালাম, মনসুর স্যার, হেলাল স্যার, নাজিমুল হোসেন হিরো, নুরুল আলম স্যার, মইনুল স্যার, ফিরোজ স্যার প্রমুখ। এ ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে “উচ্চ” বিদ্যালয়ে উড্ডয়ন যেন অজানা যাত্রাপথে রোমাঞ্চের উৎসরণের শুরুর অংশ।
তখন স্কুলের অবকাঠামোগত উৎকর্ষতা ততটা চোখে পড়ার মতো ছিলো না। তবে বিদ্যালয়ের মাঠ ছি্রর বরাবরের মতোই আজকের মতোই দৃষ্টিনন্দন, সুবিশাল। নতুন স্কুল, নতুন শ্রেণিকক্ষ, নতুন পরিবেশে আমাদের বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের নীচ তলার সর্ব দক্ষিণের কক্ষে আমরা ৬ষ্ট শ্রেণির ক্লাশ শুরু করলাম।
একে একে পরিচিত হলাম সব শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের সাথে। বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যময়, বিশেষ পঠনশৈলীর শিক্ষকদের আলাদা দৃষ্টিতে দেখা শুরু করলাম; আর এ বিশেষ ও স্বতন্ত্র পঠনশৈলী, বাচনভঙ্গি, গুরুগাম্ভির্য, সবল পাঠদান, জবাবদিহিতা ও আন্তরিকতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে বছর খানেকের মধ্যেই নিজের মন-মননে আলাদা স্থান দখল করলেন যে সকল শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, জ্যোতিষ স্যার তাঁদের অন্যতম।
তখনকার সময়ে সম্মানিত শিক্ষকগণ একাধিক বিষয়ে পাঠদানে সক্ষম, সুদক্ষ ছিলেন। জ্যোতিষ স্যারও বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি, ভুগোলসহ গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে পাঠদান করতেন অত্যন্ত সাবলীল সহজ ভাষায়।
নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে নিদারুন পরিশ্রমই না করতেন তিনি! তবে সবচেয়ে স্মরণীয় ব্যাপারটি ঘটতো সাময়িক বা বার্ষিক পরীক্ষার সময়ে। স্কুল ভবনের দোতলায় কক্ষগুলোর মাঝখানে ছিল বেড়া বা বোর্ডের ডিভাইডার। পরীক্ষার সময় একেক কক্ষে একেক শিক্ষক দায়িত্বে থাকতেন। কোন সময় দায়িত্বরত শিক্ষকের চোখের আড়ালে পরীক্ষার্থীরা পাশের জন থেকে দেখার খুব চতুর চেষ্টা করতো বৈ কী! এ সুযোগটা সুকৌশলে বন্ধ করতেন কঠোর নিয়মের সুদক্ষ জ্যোতিষ স্যার। পাশের জন থেকে দেখে বা ছোট চিরকুট থেকে দেখে লেখার সময় আচমকা জ্যোতিষ স্যারের হাতে নাতে ধরতেন: ঘটনার আকস্মিকতায় ধৃত শিক্ষার্থি যেমন বিস্মিত, কক্ষে দায়িত্বরত শিক্ষকও রাগান্বিত হতেন; ইতোমধ্যে পাশের রুম থেকে ডিভাইডারের মাঝে ছোট ছিদ্র দিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়েই অসদুপায় অবলম্বনকারীর ব্যাপারে নিশ্চিত হতেন তিনি। এ ঘটনা নিয়মিত হতে থাকলে পুরো স্কুলের সকলেই অন্তত পরীক্ষার হলে অসদুপায় অবলম্বনের বিষয়টা সাহস করতো না!
এসএসসি পরীক্ষার পর মাঝে মাঝে স্কুলে যেতাম। স্যারের সাথে দেখা করতাম। স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিতেন জ্যোতিষ স্যারসহ শ্রদ্ধেয় সকল স্যারেরা। পরবর্তীতে তিনি আরো অধিকতর দায়িত্ব নিয়ে রাউজান ডাবুয়া তারাচরণ শ্যামাচরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং অদ্যাবধি সেখানে কর্মরত আছেন।
স্যারের বাসা চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট থাকাকালীন মাঝেমাঝে দেখা হতো। স্যার সবার খোঁজ খবর নেন, দোয়া করেন। গর্বিত এবং আনন্দিত হন আমাদের সাফল্যের সংবাদে।
একনিষ্ট, কর্মঠ ভ্রমণপিয়াসি এবং পরিশ্রমী শ্রদ্ধেয় জ্যোতিষ বড়ুয়া স্যার আরো বহুদিন জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করুন প্রান্তিক জনপদে, রাউজানের শিক্ষার্থিদের, সুস্থতায় দীর্ঘায়ু লাভ করুন- এ প্রত্যাশা, এ কামনা নিরন্তর।
**********************
মোঃ নাজিম উদ্দিন
২৫-০৯-২০২০