দম্ভ ও অহংকারের পতনঃ কিছু ইতিহাস

Nov 18, 2020 | ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-রাজনীতি | 0 comments

View : 171
 

দম্ভ ও অহংকারের চিরন্তন পতনঃ কিছু ইতিহাস

বিস্ময়কর রোম সাম্রাজ্য ইউরোপ, আফ্রিকা ছাপিয়ে এর বিস্তৃতি ছিল এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কিন্তু ৪৭৬ সালে এ সাম্রাজ্যের পতন হয় বাইরে থেকে বিভিন্ন বর্বর গোত্রের আক্রমণ,অর্থনৈতিক পতন, পূর্ব সাম্রাজ্যের উত্থান ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে।

বিস্ময় জাগায় ৬০০ বছরাধিক কালের অটোমান সাম্রাজ্যের পতনও! কী সুবিশাল সাম্রাজ্য! উত্তর আফ্রিকার তিউনিসিয়া, ইউরোপের অস্ট্রিয়ান বর্ডার ও এশিয়ায় রাশিয়া ও ইরান বর্ডার পর্যন্ত সুবিস্তৃত থাকা অটোমান সাম্রাজ্য ছিল বহু ধর্ম, বর্ণ এবং বহু ভাষার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামার যুদ্ধের মাঝেই ৬০০ বছরের অটোমান সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে পতন হয়।

হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর যুগে নমরুদ, হযরত মুসা (আঃ) এর যুগে ফেরআউন, তৎপরবর্তী মহানবীর যুগে আবু লাহাব-আবু জেহেলসহ অনেকে, হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (রঃ) এর সময়ে ইয়াজিদ বাহিনী, মধ্য যুগের বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যবাদ, নিষ্টুর ফেড্রো, কিং জন কিংবা রাজা হেনরি ৮, রাশিয়ান জার ইভান, চেঙ্গিস খান, নব্য যুগে হিটলার বা মুসোলিনী, জোসেফ স্টালিন, লর্ড ক্লাইভ, নবাবযুগের সিরাজউদৌলা, টিপু সুলতান, যুগোশ্লাভিয়ার স্লোভেদান মিলোচোভিচ, জিলফিকার আলী ভুট্টো কিংবা আইয়ুব খান ইত্যাদির কথা ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে এখনো, থাকবেও। দাসপ্রথা, জমিদারপ্রথা কিংবা বর্ণবিরোধের সময়ে উত্থান হওয়া মানুষের পতনের দৃশ্য অনেকের জানা।

অর্থ ও ক্ষমতার অহংকার, দম্ভ ইত্যাদির পর মর্মান্তিক পতনের ইতিহাস জজ্বল্যোমান! অহংকার পতনের মূল- সকল ধর্মেও অহংকার না করার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র আত্মম্ভরিতা ও অহংকার করার জন্য অনেক রাজা বাদশাহর সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়েছে। তবুও মানুষ তার ধন সম্পদ,প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে গর্ব করে। কিন্তু মহান রবের ছাদরঘোষিত ‘অহংকার’ এর কারণে কিংবা
Shakespeare এর ভাষায় “Bubble Reputation” মোহগ্রস্ত হয়ে অবশেষে অনেকেই বিনাশপ্রাপ্ত হয়, অনেকে।

শুধু ইতিহাস কেনো, আমাদের চোখের সামনে-ও এর জলজ্যান্ত উদাহরণ বিদ্যমান আছে। বাঙালি জাতির ত্রাতা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্তপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর হত্যাকারীরা ক্ষমতার দম্ভে দিশেহারা হয়ে ঘোষণা দিয়ে বলেছিলো-‘শেখ মুজিবকে আমরা হত্যা করেছি,পারলে আমাদের বিচার করো’। তাদের বিচারের সূচনাই দীর্ঘদিন শুরু হয়নি। ধরেই নেওয়া হয়েছিল যে হত্যাকারীদের বিচার বোধহয় আর হলোই না!

দীর্ঘদিন পর হলে ও হত্যাকারীদের জীবিতাবস্থায়ই ওদের বিচার আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বিচার হয়েছে। হয়েছে শাস্তি। কোথায় গেল তাদের অহংকার, কোথায় দম্ভ??

আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ক্ষমতা বা অর্থের লোভে থেকে এ সমস্ত ঘটনা দেখেও আমরা বিধিনিষেধগুলো মেনে চলিনা বা কোনোরূপ শিক্ষা গ্রহণ করি না। বিনয়ের নেপথ্যে যে সাফল্যের বারিধারা, তা কি আমরা মানি?

ভুবনে ভুবনে গোপনে গোপনে কাজ ককরে যাওয়া অতীত থেকে কিংবা ইতিহাস থেকে কি আমরা শিক্ষা নেই? আমরা কি ভাবি, একসময় সব অতীত হয়ে যাবে? আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে সব দাম্ভিকের দল; সব পৈশাচিক? শুধুু সৎ কাজ ও মহানুভবতার গান সুর দিয়ে যাবে বহুদিন, বহুদিন….


মোঃ নাজিম উদ্দিন