জুমা দিবসের ভাবনা-১৭:
কেয়ামতের ভয়াবহতা
————————–
পরকাল, পুনরুত্থান, শেষ বিচারের দিনের উপর বিশ্বাস রাখাও ঈমানের অপরিহার্য অংশ। প্রতিটি ব্যক্তির মৃত্যুর মাধ্যমেই শুরু হবে কেয়ামতের পর্ব।
কেয়ামত আরবি শব্দ। অর্থ মহাপ্রলয়, পুনরুত্থান। কেয়ামত দিবসের আরো নাম আছে। যেমন, প্রতিদান দিবস, শেষ বিচারের দিন ইত্যাদি।
কেয়ামতের ১০টি বড় নিদর্শন
মহানবী (সা.) বলেন, ১০টি নিদর্শন যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা দেখতে পাবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। তা হলো১. ধোঁয়া, ২. দাজ্জাল, ২. দাব্বাহ (জমিন থেকে একটি জন্তুর বের হওয়া), ৪. পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, (কেয়ামতের ১০০ বছর আগে মাত্র এক দিনের জন্য পশ্চিম দিক দিয়ে সূর্য উদিত হবে), ৫. হজরত ঈসা (আ.)-এর আগমন, ৬. ইয়াজুজ-মাজুজের আগমন, ৭. পূর্ব দিকের তিনটি ভূমিকম্প, ৮. পশ্চিম দিকে ভূমিকম্প, ৯. আরব উপদ্বীপের ভূমিকম্প, ১০. ইয়েমেন থেকে উত্থিত আগুন, যা মানুষকে তাড়িয়ে সমাবেশের স্থানে নিয়ে যাবে। (সহিহ বুখারি)।
কেয়ামতের দিন হবে খুবই ভয়াবহ ও বিভীষিকাময়। এই ভয়াবহতা যে কত ব্যাপক হবে, তা কল্পনা করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কোরআন মজিদে আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো হবে।’ (সুরা কারিয়াহ : ৪)।
এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পৃথিবী যখন আপন কম্পনে প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে এবং পৃথিবী যখন তার ভারগুলো বের করে দেবে, আর মানুষ বলবে, এর কী হলো? সেদিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে, কারণ তোমার প্রতিপালক তাকে আদেশ করবেন।’ (সুরা জিলজাল : ১-৫)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘যেদিন কেয়ামত উপস্থিত হবে, সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাই থেকে এবং তার মা, তার বাবা, তার স্ত্রী ও সন্তান থেকে। সেদিন তাদের প্রত্যেকের অবস্থা হবে গুরুতর, যা তাকে সম্পূর্ণভাবে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।’ (সুরা আবাসা : ৩৩-৩৭)
কেয়ামতের বিভীষিকা সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো। কেয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার দুগ্ধপোষ্য শিশুর কথা ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী নারী গর্ভপাত করে ফেলবে। আর তুমি মানুষকে দেখবে মাতালের মতো, অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি খুব কঠিন হওয়ায় মানুষের অবস্থা এরূপ হবে।’ (সুরা হজ : ১-২)
সেইদিনের কথা ভেবে কি আজ অন্তর একটুও বিচলিত হয় না?
কোরআনের সূরা ফাতির এর ১৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে,”কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না-যদি সে নিকটবর্তী আত্মীয়ও হয়…”
অতএব, সেই দিনের কথা ভেবে আজকের দিনে নিজের আখের নিজে গুছিয়ে নিন। আজ যাদের জন্য নিজের লাভ লোকসান ভুলে অস্থায়ী দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত আছি, কাল তারা আমাকে- আপনাকে সামান্য পূণ্য দিয়েও সাহায্য করবে না।
সেদিন কিছু মানুষ বলবে- “ইয়া লাইতানি কাদ্দামতুলি হায়াতিই- হায়! যদি আমি নিজের জীবনের জন্য অগ্রিম কিছু প্রেরণ করতাম!”
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।
——————
সংগ্রহ ও সংকলনে~~~~
মোঃ নাজিম উদ্দিন
ডিসেম্বর ৬, ২০২৪
(পুনশ্চঃ “জুমা দিবসের ভাবনা” লেখাগুলো কারো প্রতি ইঙ্গিত করে নয়। প্রায় সব সংকলন করা হয়েছে। নিজের উপলব্ধি ও সংশোধনের জন্য মাত্র)