ছেলেবেলা : সেকাল একালঃ
আমাদের খেলাধুলা
আমাদের ছেলেবেলাগুলো কাটতো উল্লাস, উচ্ছাসে, প্রাণোচ্ছাসে, প্রাণবন্ত নিঃশ্বাসে। এসব দিনগুলোতে পড়ার চেয়ে দুষ্টুমি, স্কুলের চেয়ে মাঠ, পড়াশুনার চেয়ে খেলাধুলাই প্রাধান্য পেতো বেশি।
তখন মমনে হতো, বইয়ে ষড়ঋতু আর বাস্তবে তিন ঋতুর বাংলাদেশ। প্রচন্ড গরমের গ্রীষ্ম শেষে আসে বর্ষা আর এ বর্ষা প্রায় ৪/৫/৬ মাস ব্যাপী চলতো। এর পর কনকনে শীতের আগমন।
বর্ষায় আমাদের শৈশব ছিলো প্রাণবন্ত। সব স্থানে পূর্ণতা। পুকুরে পূর্ণ পানিতে, মাঠ ঘাট যেন রূপ নিতো নদী-সাগরের।।। সড়কে পানি থাকতো প্রায় সবসময়।
ঘণ ঘোর বর্ষা চলতো আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন মাসজুড়ে। তবে আশ্বিনের শেষ থেকে মাঝে মাঝে বা থেমে থেমে বৃষ্ট চলতো বেশ কয়েকমাস।
আমাদের খেলার মাঠ শুকাতো আর ভিজতো। নাছোড়বান্দার কিশোরদলকে তো আর ঘরে বসিয়ে রাখা যায়না!
এ সময়ে ক্রিকেট নামেনা। মাঠজুড়ে ফুটবলের দুর্দান্ত দাপট। কাঁদা আর পানি, পাইন্ন্যা খেলার হাতছানি- এ যেন সয়ে যায় বাঙালী মনের সাথে, প্রাণের সাথে।
কাঁদা মাটিতে ফুটবল ছিল দারুন উপভোগ্য। পিছলা মাছে বলে লাথি দেয়ার পর কত ফুটবলার আছাড় খেয়ে চিৎপটাং হয়ে যায়- তার ইয়ত্ত্বা নেই!
ধবধবে সাদা চামড়ার ফুটবলার মুহুর্তেই আফ্রিকান খেলোয়ারের চেহারা ধারণ করে!!!
খেলা শেষে বাড়ির পুকুরে ঝাঁপ দেয়ার জন্য ছুটে আসতো সবাই। যেন সব কাঁদা পুকুরে ফেলে নিজেদের পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলে! সন্ধ্যার এ গোসল-সাঁতার দারুন আরামদায়ক। তবে মুরুব্বি, বড় জনেরা মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে অজু করতে আসলে কিশোরদের শুনতে হতো ভর্ৎসনাো বকুনি।
এসবে ছিলোনা বিরক্তি, কোন বিন্দুমাত্র প্রতিবাদও। ছিল শাসনের প্রতি আনুগত্য, বড়দের প্রতি অকুন্ঠ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।
একালের ছেলেবেলায় অফুরন্ত প্রাচুর্য দেখা যায়, দেখা যায় প্রচুর পড়ার চাপ, বকুনির ছাপ, ব্যস্ততার উত্তাপ, প্রযুক্তির প্রভাব, তবে সব ক্ষেত্রে নেই সেই অবাধ উচ্ছাস, প্রাণোচ্ছাস।
কিশোরেরা ফিরে পাক প্রাণের প্রাচুর্য। ভালো থাকুক দুরন্ত কিশোরেরা।
—
মোঃ নাজিম উদ্দিন
সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২১