‘গোমতীর তীরে পাতার কুটিরে’ঃ গোমতী পাড়ে কিছুক্ষণ
‘গোমতীর তীরে পাতার কুটিরে/
আজও সে পথ চাহে সাঁঝে/
আজও মধুর বাঁশরী বাজে। ‘
এটি বিখ্যাত একটি নজরুলগীতি।
গোমতী নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।
জানা যায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুর এলাকা থেকে গোমতী নদীর উৎপত্তিস্থল। নদীটি ভারতের পাহাড়ি এলাকার সোনামুড়া হয়ে কুমিল্লা জেলার কটক বাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। নদীর দুই পাড়ে ৮২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এক সময়ের খরস্রোতা গোমতী নদীর প্লাবন থেকে রক্ষা পেতে নদীর দুইপাশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়।
নদীর তীরে গড়ে উঠেছে শহর-বন্দর। বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা, শীতলক্ষ্যার তীরে নারায়ণগঞ্জ, গোমতীর তীরে কুমিল্লা, কর্ণফুলীর তীরে চট্টগ্রাম। এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে।
শিল্প-সাহিত্য-গানে নদীর বিপুল বিস্তার। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এর মতো কালজয়ী উপন্যাস, পরে যা থেকে কালজয়ী সিনেমাও হয়েছে।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিশ্ব ঘুরেছেন, কিন্তু তার হৃদয়জুড়ে কপোতাক্ষ নদ। নজরুল শূন্য হৃদয় বিসর্জন দিতে চান পদ্মার ঢেউয়ে, তাঁর প্রেয়সী অপেক্ষা করে, ‘গোমতীর তীরে পাতার কুটিরে।’ রবীন্দ্রনাথ বজরায় পদ্মার বুকে ভেসে রচনা করেছেন অমর সব কাব্য। বাংলাদেশে কবিতা লিখেছেন, কিন্তু তাতে নদীর ছোঁয়া নেই- এমন খুঁজে পাওয়া ভার। নদী মিশে আছে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে, অর্থনীতিতে, ধর্মে।
ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশে নদী ছিল হাজারের ওপরে। ষাটের দশকেও ছিল ৭৫০টি নদী। গত ৫০ বছরে কমেছে ৫২০টি। এখন বাংলাদেশে মূল নদীর সংখ্যা ২৩০টি। এই হারে কমতে থাকলে নদীমাতৃক কোন এক অপ্রত্যাশিত সময়ে নদীর সংখ্যা কমে যেতে পারে আশঙ্কাজনকভাবে।
ইনশা ও তার মাকে যখন গোমতি নদীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলাম, তখন এত কথা বলতে পারিনি। পরে গুগলে তথ্য ঘেটে সব জেনে প্রীত হলাম। গোমতী বিলাসে কিছুক্ষণ, গোমতী পাড়ে কিছুক্ষণ কাটিয়ে দুপুরটা বেশ হৃদ্য, সমৃদ্ধ হলাম।
ছবির চেয়ে বেশি সুন্দর এ গোমতী নদীর ধীরে বয়ে চলা স্রোত কেড়ে নিলো মনটা। সবুজ ঘাসে নদীর পাড়ের এ সময় জীবনে যত বেশি হয়, তত মঙ্গল। যদিও ‘The world’s too much with us…’
অনিন্দ্য প্রকৃতির বহতা, ঐতিহাসিক গোমতী নদীর পাড়ের সময়টা ফিরে আসুক বহুবার।
—
মোঃ নাজিম উদ্দিন
ডিসেম্বর ১৬, ২০২২