এককালের প্রাপ্তির আনন্দঃ আজকের উপলব্ধি
———————–
এককালে প্রাপ্তির আনন্দ প্রত্যাশার গন্ডি ছাড়িয়ে যেত, হয়ত প্রত্যাশাই কম ছিল!
একটা বেলুন, নাটাই আর ঘুড়ি, কিছু মার্বেল-
আরো কিছুকাল পর কয়েকজনে মিলে একটা ফুটবল বা ব্যাটমিন্টনের রেগজোড়া কিনতে পারাটাই যেন স্বপ্নজয়!
শৈশবের সাদাকালো দিনগুলোতে রঙিন স্বপ্নে বিভোর আর প্রতিক্ষা থাকত ডিসেম্বর-জানুয়ারীর স্কুল বন্ধের দিনগুলোর জন্য।
গ্রামের মেলার জন্য টাকা জমিয়ে প্রতিক্ষা যেন বার্ষিক রুটিনওয়ার্ক। মেলায় গিয়ে বেলুন/মার্বেল ক্রয়, টাকায় ৪-৫ টা গুলি ছুড়ে বেলুন ফুটানো বা নাগরদোলার শব্দ মনে দোল খায় এখনো। তখনো প্রায়শই অপূর্ণ থাকতো লম্বা বন্ধুক (রাবার/প্লাষ্টিকের তৈরি) ক্রয়ের সাধ!
আবাহনী-মোহামেডান ফুটবল ম্যাচ যেন অনন্যাকর্ষণীয় ও উপভোগ্য। যে দলই জিতুক, পরাজিত দলের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা হত বাড়ির কয়েক ঘরে। ক্রীড়া উত্তেজনায় প্রিয়দল আবাহনীর বিজয়ের মিছিল-চিৎকার যেন এক বড় প্রাপ্তি!
ফসলতোলা মাঠে ক্রিকেটের আবাহনে বড়দের কারণে ব্যাটিং বোলিং এ চান্স হত কম, শুধু ফিল্ডিং এই সার। অনেক সময় প্রত্যাশা- কামনা থাকত নিজ দলের ক্রিজে থাকা উইকেটের পতনের বিনিময়ে হলেও নিজের ব্যাটিং (যেন দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়)!
মাঠে ফসল থাকলে স্কুল মাঠ খালি পাওয়া যেন আরাধ্য; ফুটবল বা ক্রিকেট খেলতে পারার সে কী আনন্দ,সে কী প্রাপ্তি!
বিভিন্ন টুর্নামেন্টের ম্যাচ চলাকালীন গ্রাম থেকে গ্রামান্তর খেলতে বা দেখতে যাওয়ার সে কি এডভেঞ্চার! উপজেলাভিত্তিক বা জোনের ফুটবল টুর্ণামেন্ট যেন এক বিরাট ক্রীড়াযজ্ঞ! ক্রীড়ামোদী বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের দর্শক সমর্থকদের কেন্দ্রবিন্দু তখন জোনের ফুটবল টুর্ণামেন্টের স্কুল সম্মুখস্থ মাঠ।
শহরে বা অন্য উপজেলায় মাঠে তখনো চলতো উপজেলা ফুটবল লীগ, থাকতো জাতীয় দলের ফুটবলারের উপস্থিতি; ১৪-১৫ বছর বয়সে সে সব খেলা দেখার আগ্রহ থাকতো সুউচ্চ; জাতীয় দলের ফুটবলারদের সামনাসামনি দেখা যেন এক রোমাঞ্চ! সে স্মৃতি এখনো জীবন্ত, আনন্দময়।
মোগল পাঠান বা বাঘ পাইর বা ওজু / সোজা পাইর খেলায় মাঠ লাগত না। সবার ‘দাদা’ জাহানার বাপ (বোছা মিয়া), দাদা নজমুল হুদা (নছু মেম্বার), চাচাতো ভাই নাছের প্রমুখ নিয়মিত ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত এ বসে থেকে খেলতে পারা গেইমে। বাদাম তলায় পড়ে থাকা বাদাম প্রায়ই হত খেলার গুটি। বিজয়ে হয়ত বাজি, মিছিল বা প্রাইজমানি থাকতনা, থাকত তৃপ্তির আনন্দ, কিবা হারানোর পর অভিজ্ঞতার ‘ইস’ শব্দাবলী!
আজ খেলাধুলার সময় কই কিশোরদের, কিংবা আগ্রহ? মোবাইল গেইমসে চক্ষুদয় নিমগ্ন যে কৈশোর, সে চোখ আকাশের সুবিশাল দিগন্তে তাকাতেই ব্যথিত হবেই; ফলতঃ গৃহাতুর মনন!
লাভ ক্ষতির হিসেব কষে আজ অনেক কিশোরও। গ্রামে আজকাল ক্রিকেট- ফুটবল হয়, প্রায়শই বাজিতে, টাকা বা প্রাইজমানির আশায়। ফেসবুকে অনেক বন্ধু তাদের, আকাশসংযোগে, কিন্তু, বাস্তবে দেখা সাক্ষাতে বন্ধু তাদের অনেক কম!
বৈষয়িক প্রত্যাশার আধিক্যের এ যুগে মনের আনন্দের আর প্রাপ্তির অপার্থিব আনন্দের অভিজ্ঞতা কয়জনের আছে?
আজকের কিশোর বা যুব সমাজের কাছে বোকামি ঠেকবে কথাগুলো, কিন্তু কিশোরদের নিঃস্বার্থ ক্রীড়া, বড় মাঠে, জনাধিক্যে গোলযোগময় যোগাযোগ ও ভ্রাতৃত্ব নিঃসন্দেহে পিতামাতার দুশ্চিন্তা দূর করবে অনেকাংশে, শারিরীক মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে হবে সহায়ক, নির্দ্বিধায়।
এভাবে এককালে প্রাপ্তির কলস পূরণ করতো আজকের প্রাপ্তির চেয়েও কত কম কিছুতেই! এমন সব বিষয়ে ছিলো সেদিনের প্রশান্তুি, পরিতৃপ্তি যা আজকের দিনে বালকদের কাছে হাস্যকরও মনে হবে নিঃসন্দেহে! আর আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের উপলব্ধিঃ
At times, Less is more!
———–
মোঃ নাজিম উদ্দিন