View : 86
 

  • ঈদ সমাচারঃ গ্রামে, সড়কে, শহরে

(১)
বাংলাদেশে সবচেয়ে আনন্দ উদযাপনের সময়কাল যদি ধরা হয় ঈদুল ফিতর, সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনার সময়ও সম্ভবত এটাই: প্রাণের টানে শেকড়মুখী বা কাজের টানে কর্মস্থল/বাসামুখী মানুষের একাংশ শিকার হয় কিছু নির্ঘুম রাত কাটানো চালক বা অ-চালকের খামখেয়ালিপনা বা ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে নির্মম হতাহতের.. পত্রিকার সংবাদের শিরোনামের ফলো আপ কম, কম সারা বছরব্যাপী এ নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপের।

(২)
সবচেয়ে বেশি দান খয়রাত সাদাকা যাকাত প্রদান হওয়া এ রহমত মাগফিরাত নাজাতের মাসেই সবচেয়ে বেশি গ্রামে বা শেকড়ের পানে ছুটে চলে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকাসহ সবচেয়ে বড় শহরগুলো থেকে.. অনেকে বছরে শুধু ঈদুর ফিতরের সময়েই গ্রাম বা স্থায়ী ঠিকানায় যান। এমন পটভূমিতে ঈদের সময় ১/২ দিন সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয় গ্রামগুলো, গ্রামের সড়কগুলো হয়ে পড়ে স্বল্প সময়ের জন্য সবচেয়ে বেশি যান চলাচলকারী সড়কে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, অন্যান্য সময়ের মতো তেমন কোন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকেনা বিধায় এতো গাড়ির চাপ নিতে পারেনা সড়কগুলো। অনেক জায়গায় দীর্ঘ যানজট থাকে। ইতিবাচক কথা হলো, কিছু এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন বা স্বেচ্ছাসেবী তরুণেরা ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা বা ওভারটেকিং রোধের জন্য স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সহায়তা করে থাকেন। তবে এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান দরকার।

(৩)

সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের আগে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যের সবচেয়ে বেশি মূল্য বাড়ে যে দেশে, সে দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষও সে ইসলাম ধর্মানুসারী ব্যবসায়ীদের একাংশই! সকল ভালো কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি গুণে সওয়াব/প্রতিদান ঘোষিত এ সংযমের মাসে মাসে কি “তাদের” লোভাতুর মনে কোন রেখাপাত করতে পারেনা?

(৪)
যেহেতু শহরে বসবাসকারীর একটা বড় অংশ গ্রামে ঈদ উপলক্ষে চলে যান, সেহেতু শহরে বসবাসরত অপর বা স্থানীয় মানুষজনের অন্যান্য নাগরিক সুবিধায় ব্যাঘাত ঘটে.. ব্যাচেলেরেরা পায়না খাবার হোটেল, অনেক দোকানও থাকে বন্ধ। এরকম হরেক সীমাবদ্ধতা দেখা যায় নগরসমূহে ঈদ উদযাপনকারী মানুষের জীবনে..

(৫)
আধুনিক সমাজে যৌথ পরিবার ভেঙে পড়েছে অনেকাংশে। বন্ধনগুলো হৃদ্যতার চেয়ে সমৃদ্ধতার দিকে মনোযোগী। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, বছরের অন্যান্য সময়ে বড়রা (বিশেষত মা বাবারা) সন্তানদের গ্রামে তেমন নেন না বা নেয়ার সময় পান না। ফলে, সেসব শহুরে শিশু কিশোর তরুণদের সাথে তার সময় বয়সী গ্রামের স্বজন প্রতিবেশিদের সাথে তৈরি হয়না সম্পর্কের ভীত। ফলশ্রুতিতে, প্রতীক্ষিত ঈদের ছুটির সময় মা বাবারা অনেক কিশোর বা তরুণদের গ্রামে নিতে চাইলেও নিতে পারেন না বা গ্রামে গেলেও ঘরে/ উঠোনে বসে মোবাইল নিয়ে নিজে নিজেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে! বিচিত্র! এভাবে কি অন্তঃস্বারহীন হয়ে পড়বে আমাদের সম্পর্কগুলো, সামাজিক প্রতিষ্টানগুলো??


#জিজ্ঞাসিব জনে জনে…

মোঃ নাজিম উদ্দিন
এপ্রিল ১৩, ২০২৪
ঈদুর ফিতরের ৩য় দিন