আমাদের নিয়ন্ত্রণে পৃথিবী, না পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণে আমরা?
—
সারাদিন যান্ত্রিকতা পার করে আমরা যখন নিজের, সত্যিকারের নিজের জন্য কিছু খুঁজি, তখনো আমাদের ভরসা কি সেই যন্ত্রই?
নাকি অন্যকিছু?
আর্থিক না আত্মিক? জৈবিক না দৈহিক? তাত্ত্বিক না তাথ্যিক?
নিজেদের চাওয়া পাওয়া, বাসনা, কামনার ছোট ছোট তটিনীপুঞ্জ কোন পথে, কোন মোহনায় মিলিত হয়, তা নির্ধারণ করতে বয়সের ভেলা পার হতে হয়। অবশ্য অনেকে বয়স পার হলেও তা অনুধাবন করতে পারেনা, বা চেষ্টাও করেনা।
ছোটবেলায় English প্রথম পত্রে সম্ভবত ৬ষ্ঠ বা ৭ম শ্রেণিতে পড়েছিলাম, Growing up Physically, Growing up Mentally ইত্যাদি.. যার মূল প্রতিপাদ্য ছিলো, অনেকে বয়সের কারণে শারিরীক বৃদ্ধি হলেও মানসিক বা মনস্ত্বাত্তিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে উঠতে পারেনা। Maturity is everything.. এ riddle বয়সের নয়, বাপু, এটা অনুধাবনের।
The world is too much with us; late and soon,
Getting and spending, we lay waste our powers;—
Little we see in Nature that is ours;
William Wordsworth এর এ সনেট অনেক তাৎপর্যময়। পৃথিবী আসলেই অনেকাংশে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে দিনে দিনে। আমাদের মধ্যকার বিস্ময়কর ক্ষমতা, potentials, আমাদের অবস্তুগত সামর্থ্য-শৌর্য আমরা ধীরে ধীরে, তিলে তিলে ক্ষয় করছি শুধু কিছু আর্থিক বা বস্তুগত অর্জনের জন্য.. আমি, আপনি, প্রায় সকলেই….
সব বাদ দিলে আমরা কিছু প্রশ্নের উত্তর সহজে দিতে পারবোও না: সর্বশেষ কখন অবাক হয়ে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত দেখেছি? গরুর ফুটফুটে বাছুরের বাঁধহীন দুরন্তপনা, ছাগলছানার দৌড়ঝাঁপ, পুকুরঘাটে বসে কয়েকটা পাথর ছুঁড়ে দিয়ে আনমনে বসে থেকে গাছের ছায়ায় নিজের অলস বিকাল কাটানো, নদীর ধারে কোন কারণ ছাড়া বসে সময় কাটানো, গ্রামের রাস্তার ধারে বসে বিষয় শিরোনামহীন আড্ডায় মেতে উঠে পার করা পূর্বাহ্নের সময়- এসব কি মনে আছে? মনে পড়ে? কিংবা অনেকের মতো, আপনারও মনে হয়, এসব করার কী দরকার? এত অলস সময় কই? এসব তো বোকাদের কাজ!
WH Davies যেমনটি বলেছেন,
“What is this life if, full of care, we have no time to stand and stare?
কী সে জীবন! এত পার্থিব, এতো ক্লান্তিময়! অথচ আমাদের ‘মানুষ’ কত বিস্ময়ের নাম! জীবন কত আশ্চর্যজনক উপহার!
“What a piece of work is man, How noble in reason,
how infinite in faculty,
In form and moving how express and admirable,
In action how like an Angel,
In apprehension how like a god, The beauty of the world, The paragon of animals.”
যেমনটি বলেছেন William Shakespeare তাঁর Hamlet নাটকে…
কিন্তু, এ বিশাল মানুষ, বিষয় বৈভবের টানে বা কঠিন করে বললে, লোভে, এ বেড়াজাল বা কৃত্রিম কয়েদখানায় বাস করে নিজেদের wonderful potentiality বিনষ্ট বা অপব্যবহার করে আসছে!
আদিম যুগ থেকে মানুষের চেষ্টা ছিলো প্রাণীর উপর, বস্তুর উপর, পৃথিবীর উত্তর দক্ষিণ মেরুর সব কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ আনা; মানুষ সক্ষমও হয়েছে অনেকটা: জ্বালিয়েছে আগুন, বণ্য জন্তুকে শাকল পড়িয়েছে। অথচ, আর কয়েক সহস্রাব্দ পর এসে মানুষ নিজেরাই বন্দি হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর চাকচিক্যের অদৃশ্য, অথচ মায়াময় বেড়াজালে….বেলাশেষে এ ফানুস ফুটে যায়! Nothing is permanent but change..
আমরা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ করি, যতটুকু সম্ভব, তবে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণে যেন আমরা পিষ্ট হয়ে না যাই…..
—
মোঃ নাজিম উদ্দিন
অক্টোবর ৮, ২০২১