আজ বিশ্ব প্রবীণ দিবস: প্রবীণদের নিয়ে নবীন ভাবনা
—–
“তুমি এগুলো বুঝবে না”..
‘ওসব তোমাকে বুঝানো যাবে না’ ..
সেকেলে, কম জ্ঞানসম্পন্ন কিংবা অযোগ্য বলে যাদের আমরা তরুণ বা যুবা অবজ্ঞা করি, তারা মূলত আমাদের জ্ঞান কাননের বটবৃক্ষ। উন্নত বিশ্বে প্রবীণদের মূল্যায়ন হয় বেশি। প্রবীণদের প্রতি সে সম্মান ও অধিকার নিশ্চিতে জাতিসংঘ প্রতিবছর ১লা অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালন করে ।
প্রবীণ মানুষগুলো সমাজের সম্পদ: কিন্তু আমরা ভাবি অন্যটা; সাদা-শুভ্র দাড়ি আর সাদা কাপড়ের ব্যক্তিকে আপনি যতই বোকা মনে করেন, জীবনের মাইলেজ আপনার চেয়ে তার অনেক বেশি, জ্ঞান-অভিজ্ঞতাও। প্রবীণদের আল্লাহ তায়ালাও সম্মান করেছেন; তারা যখন আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ লজ্জিত হয়ে তাদের আবদার পূরণ করেন।
গ্রামে যাদের শৈশব-কৈশোর কেটেছে, তারা জানেন, সকাল আর বিকেল প্রবীণদের সাথে দারুন সময়ের কথা, মজার গল্প আর অনেক ক্ষেত্রে, একসাথে বুদ্ধি-নির্ভর বসে খেলা যায় তেমন ক্রীড়ার অভিজ্ঞতা। শীতের সকালে খড়-কুটুতে আগুনের কুন্ডলী করে গা গরম করার দৃশ্য যেনো নিয়মিত চিত্র। এই প্রবীণকেই দেখবেন কনকনে শীতেও ফজরের আজানের সাথে সাথে মসজিদে যেতে, প্রাতঃভ্রমন সামাজিক অনুষ্টানে আন্তরিক ভূমিকা রাখতে; বিকেলে রোদে বাড়ির কিছু সামনের বৈঠকখানায় বা বাঁশের ব্যাংকুতে বসে আড্ডায়, সন্ধ্যায় বাজারের বন্ধুবর সওদাগর বা চায়ের দোকানে যেতে, বিড়ি বা হুক্কা টানার গন্ধ থাকবেই, কিংবা পান খেয়ে ঠোঁট লাল হওয়ার দৃশ্য যেন নিয়ত অভ্যাস! বাটা সেন্ডেল, হাতে আট শিকের কাঠের হাতলের লম্বা ছাতা বা কারো লাঠি, সাদা লুঙ্গি পাঞ্জাবী কিংবা সাদা শার্ট, সাদা-লাল রংয়ের হাজী পাঞ্জাবী ইত্যাদি যেন প্রবীণ হতে হলে থাকতেই হয়, অন্তত আমরা তা ধরে নিতাম!
গ্রামে ছোটবেলায় পেয়েছি অনেক প্রবীণদের সান্নিধ্য, অধিকাংশ দাদা সম্পর্কের; বেশির ভাগই না ফেরার দেশে, মরহুম যেন সবার নামের আগে বসাতেই হয়!
দাদা হজরত আব্দুল জলিল মো: মহিউল ইসলাম (রা:) এর জীবদ্দশার স্মৃতি তেমন স্পষ্ট নয়; কিন্তু কীর্তিমানের মৃত্যু নেই; জ্ঞানে-মানে-রুহানিয়তে তিনি জীবনের মননে গৃথীত; রাউজান বাসস্ট্যান্ডের নাম “মদের মহল” থেকে “জলিল নগর” যেন শ্রদ্ধা-স্মারক।
দাদা সালাম সাহেব ছিলেন বাস্তবমুখী, গম্ভীর, পরিপাটি ব্যক্তিত্বের ধারক বাহক। সাবেক এই বন্দর কর্মকর্তা অন্যতম সফল এক মোহাম্মদ পুর বাসী স্বজন।
তার দুই মরহুম ভাইয়ের মধ্যে সোবহান দাদা থেকে শিখেছি, কিভাবে বড় ছোট সবার আপন হতে হয়; নুরুল ইসলাম দাদা ছিলেন অনেক চুপচাপ স্বভাবের একজন।
বাদশা দাদা ছিলেন রম্য বাদশা; যার রম্য-গল্প, উপস্তিত বুদ্ধি আর চপলতা
নিয়ে তৈরী করা যাবে এক উপন্যাস।
দারুন নামের অধিকারী বাদশা দাদার বাকি ভাই-রাজা, সারাং, ফোরক ইত্যাদি শব্দগত নৈপুণ্যে মনে আছে এখনো। এদিকে, দলিলুর রহমান, ওলিউর রহমান দাদারা ছিলেন কর্মঠ, সাংসারিক মানুষ। ষ্টীল মিলের সাবেক হিসাব কর্মকর্তা গোলাপুর রহমান জেঠা আর কাদের চাচার সাথে অনেক স্মৃতি, অনেক কথা..
পাশের বাড়ির প্রিয় দাদাদের সান্নিধ্য এখনো মিস করি- বিশেষত, বোচা দাদা ছিলেন এক সংগ্রামী টানাটানির সংসারে তৃপ্তির হাসি দেয়া পরহেজগার মানুষ। এত অভাবেও কিভাবে সহাস্যে সবার সাথে সব অভাব ভুলে থাকা যায়- তা দেখেছি পুত্রহীন, কর্মপটু এই দাদার কাছে। মঙ্গল পাঠান, বাঘ-পাইর, হাত গাতথী
খেলেই পারদর্শী এই দাদার কাছে শিখেছি কৃষিকাজের অনেক টেকনিকও। তার ভাই নুরুল হুদা ও বর্তমানে মোহাম্মদ পুর স্কুলের সহ: প্রধান শিক্ষক আজাদ চাচার বাবা নাজমুল হুদা (সাবেক মেম্বার) ছিলেন বিকেলে বাদমতলে আনন্দ আড্ডার মূল বক্তা; যোগ দিতে এনদ চাচার ছেলে কাউছার, নাসিরও। বেইগ্য দাদাকে কৃষিকাজে বিজ্ঞ দাদাও বলা যায়। সিরাজ দাদা, রুহুল আহমদ, আবু তালেব দাদারা ছিলেন পরম প্রিয়।
মুনাফ বাড়ির নুরুল ইসলাম দাদা ছিলেন মিতভাষী। সুলতান দাদা (গান্ধী সুলতান নামে খ্যাত) ছিলেন সমাজের সফল সর্দার। এরকম অনেকের কথা কলেবর বৃদ্ধি করে আরেকদিন না হয় হবে। নুরুল আবসার দাদা আমার দাদা আহমাদুর রহমানের সহকর্মী ছিলেন পুলিশ বিভাগে। দীর্ঘকায় সুন্দর গড়নের আবসার দাদার দীর্ঘ হায়াৎ প্রার্থনা করি।
জীবনের অধ্যায় অনেক আগেই চুকিয়ে পরপারে অনেকেই।
জীবনে তাদের অভিজ্ঞতার অনেক কথা গল্পের ভাষায় কিংবা প্রবচনের ভাষায় শুনেছি এখন কিছু কিছু বুঝিও।
সুস্থজীবন যাপনের জন্য তাদের বার্ধক্যকে সম্মানজনকভাবে কাটানোর ব্যবস্থা করা প্রতিটি সন্তানদের দায়িত্ব হওয়া উচিত। কারণ তাদের বাদ দিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
তাদের জীবনের শেষ সময়টা যেন পরিবারেই কেটেছে বেশিরভাগ। ৭০/৮০ বছর গড়ে আয়ুষ্কাল পাওয়া সেসব শ্রদ্ধেয় প্রবীণদের যেকোন বিষয়ে আগ্রহ দেখতাম প্রচন্ড। সমাজে একতা আনয়নে তাদের আন্তরিকতা ছিল প্রগাঢ়।।
আজ সকল প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। মরহুমের মাগফেরাত কামনা করছি। সাথে সাথে সমাজে প্রবীণদের সাথে নবীনেরা অন্তত কিছু সময় কাটাবে, এই আশা করছি।
————-
মোঃ নাজিম উদ্দিন
০১-১০-২০১৮