Warning: Undefined array key "zzz" in /home/shantobro/lekhokbangladesh.com/wp-includes/load.php on line 1268
স্মরণঃ প্রফেসর মোহাম্মদ আলী স্যার — লেখক বাংলাদেশ

স্মরণঃ প্রফেসর মোহাম্মদ আলী স্যার

Jun 24, 2021 | ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-রাজনীতি, লেখক জীবন-জীবনী

স্মরণঃ প্রফেসর মোহাম্মদ আলী স্যার
******

বাংলাদেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদগণের একজন প্রফেসর মোহাম্মদ আলী। কিংবদন্তীতুল্য এ শিক্ষক VC Mohammad Ali স্যার নামে অধিক পরিচিত তিনি।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনাব শফিউল আলম, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব জনাব সম্পদ বড়ুয়াসহ প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গ, অসংখ্য অধ্যক্ষ, অধ্যাপকসহ আলোকিত মানুষ গড়ার এই কারিগর প্রফেসর মোহাম্মদ আলী স্যার সরকারি-বেসরকারি কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৬০ বছর শিক্ষকতা করেন। ছিলেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

স্যারের শিক্ষাজীবন ছিল এক বর্ণাঢ্য ইতাহাসের। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে সম্মানে ১ম শ্রেনীতে ১ম (পোপ গোল্ড মেডেলিস্ট), পরের বছর ১ম শ্রেণীতে মাস্টার্স, ১৯৬০ সালে অক্সফোর্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স অধ্যয়নকারী চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি নিবাসী প্রায় ৮৬ বছরের এই বিদগ্ধ শিক্ষাবিদ সম্পর্কে চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যায়নকালীন সময়ে শ্রদ্বেয় শিক্ষকগণের কাছ থেকে অসংখ্য বার স্যারের সুনাম শুনেছি। শুনেছি স্যারের দক্ষতা, জ্ঞান গভীরতা, প্রগাঢ়তা, অনুপম ব্যক্তিত্বের কথা।

১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করা আলী স্যার পরবর্তীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক এবং উপাচার্য হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮৫-৮৮)
সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (১৯৯০-৯৪)
উপাচার্য, আন্তর্জাতিক ইসলামিক  বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৮-২০০২)
উপাচার্য, নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা (২০০২-০৬)
উপাচার্য, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় (২০১০-১৬)।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রতিষ্টাকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন আলী স্যার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যানসহ অধিকাংশ শিক্ষকই আলী স্যারের ছাত্র ছিলেন।

স্যার ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়, হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জ্ঞানপ্রদীপ, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের দেদীপ্যমান ছাত্র ও অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য, বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত অভিধানের অন্যতম সম্পাদক, এবং চবি ইংরেজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং আমাদের অনেকের জন্য মহত্তম পুরুষ।

স্যার ছিলেন বহু প্রকাশনার সম্পাদক, ছিলেন অনেক প্রতিষ্টান-সদস্য। স্যারের বর্ণাঢ্য জীবনের সঙ্গী ড. খালেদা হানুম ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান।

বিদগ্ধ এ ব্যক্তিত্ব ছিলেন অগাধ পান্ডিত্য আর জ্ঞানের গভীরতার মাঝে হারিয়ে যাওয়া এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। স্যারের সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত ছিলোনা।

চিটাগাং কলেজ ইংলিশ আলমনি এসোসিয়েশনের ২য় পুনর্মিলনী ২০১৭ এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শারিরীক অসুস্থতার কারণ তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। রের রি-ইউনিয়নে থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি বিধায় Chittagong College English Alumni Association (CCEAA) এর পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও স্মারক বই নিয়ে সিনিয়র এলামনি মাটিরাঙ্গা কলেজের ইংরেজির সহ: অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশের সাথে নগরীর চান্দগাঁও এ স্যারের বাসভবনে যাই।  সৌজন্য সাক্ষাত হয়, হয় অনেক আলোচনা, স্মৃতি কথনও। দিনটি ছিলো ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮। আমার শ্রদ্ধেয় স্যারদের স্যার হওয়ায় আমি নিজেকে স্যারের “নাতি-ছাত্র” দাবি করাটা স্যারকে খুব আনন্দ দিয়েছে সেদিন।
মিতভাষী, অতিথিপরায়ণ, নম্র এ ব্যক্তিত্ব মুহুর্তেই যে কারো হৃদয়ে স্থান নিতে বাধ্য। প্রগাঢ় পান্ডিত্যে মানুষ
আর অগাধ জ্ঞান মানুষকে বিনীত সজ্জন ব্যক্তিত্বে পরিণত করে- আলি স্যার তা-ই প্রমাণ করেছেন।

শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ আলী স্যার আর ম্যাডামের বাসায় সেদিনের দীর্ঘ আলাপচারিতা আর আন্তরিক আপ্যায়ন দারুন শিক্ষনীয় স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে আমার জীবনে।
পরের বার আবারো যাওয়ার কথা। কথা ছিলো, স্যারের লেকচার সংরক্ষণের,  কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না।
২৪ জুন ২০২১ সন্ধ্যায় নগরীর একটি হাসপাতালে আনুমানিক ৮৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন দেশের স্বনামধন্য এ শিক্ষাবিদ।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন।
আল্লাহ মরহুমকে জান্নাতে উঁচু স্থান দান করুন। আমিন।

‘আলী ভবন’ এখন যেন শুধুই স্মৃতি।  হাজারো জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে আজ নিয়তির অমোঘ নিয়মে নিবে গেলো জ্ঞানের এ শিখা, এ প্রজ্জ্বলিত বাতিঘর। স্যারের ইন্তেকালের সাথে সাথে এমনকি দীর্ঘ রাত অবধি স্যারের বাসভবনে স্যারের অগণিত শিক্ষার্থি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, শুভানুধ্যায়ীর আগমন প্রমাণ করে কত সযত্নে হৃদয়ের মনিকোটায় তিনি স্থান পেয়েছেন শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে।

তিনি আমাদের যুগের Grammarian, তবে তার চেয়েও অনেক বেশি।

মোহাম্মদ আলি স্যার বেঁচে থাকবেন আজীবন, তাঁর কর্ম আর সৃষ্টিতে, স্বজন-সজ্জনের মাঝে। বহুদিন।

—-
মোঃ নাজিম উদ্দিন
২৫ জুন ২০২১

লেখাটি লিখেছেন

Latest Post

Related Tags