সাহিত্য-কথনঃ সেকাল একাল- পর্ব-১
(১)
বিশ্বখ্যাত কবি-নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ার Hamlet নাটকের এক অংশে বলেছেন, Have more than you show, speak less than you know”. এ যুগে এ কথা স্ট্যাটাসে দিয়ে বিদগ্ধ সাজা যায়, তবে তার উল্টোটা না হলে বাঁচা যায়? তাই হরদম চলছে,
”show more than you know
speak more than you know”!!
এতেই আখের মঙ্গলময়!বিশ্বখ্যাত কবি-নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ার Hamlet নাটকের এক অংশে বলেছেন, Have more than you show, speak less than you know”. এ যুগে এ কথা স্ট্যাটাসে দিয়ে বিদগ্ধ সাজা যায়, তবে তার উল্টোটা না হলে বাঁচা যায়? তাই হরদম চলছে,
”show more than you know
speak more than you know”!!
এতেই আখের মঙ্গলময়!
(২)
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর চৈতালি কবিতায় বলেছেন,
“দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা!..”
আর এখন, অঘাট ঘাট না হলে,
গ্রাম শহর না হলে, অরন্যে রোদন না হলে, উলুবনে মুক্তো না ছড়ালে, ‘লৌহ লোস্ট্র কাষ্ঠ প্রস্তর’ স্পর্শিত না হলে শুধু মাটির সোঁদা গন্ধ দিয়ে কি জীবন চলে? না, শহরায়ন আর সভ্যতায়নের প্রতাপ আর চাপে ‘বাপ বাপ’ করে অরণ্য পালিয়ে যাচ্ছে নিত্য, এটা তিক্ত, তবে এটাই সত্য। ল ইট পাথর লোহার নগরে ‘অরণ্য’ আজ গেঁয়ো সেকেলে অতিথির মতো, যে কি না কাপড়ের পুঁটলি বগলচাপা দিয়ে শহরে আসে, শহুরে হতে, নগরে এসে নাগরিক হতে।
তাই “As You Like It” নাটকে অরণ্য সৌন্দর্য নিয়ে যে গর্বভরে শেক্সপিয়ার বলেছিলেন,
Under the greenwood tree
Who loves to lie with me,
And turn his merry note
Unto the sweet bird’s throat,
Come hither, come hither, come hither:
Here shall he see
No enemy
But winter and rough weather.”
– সে গ্রীণউড আজ শুধু দুটি প্রাকৃতিক শক্তির উপস্থিতিতেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়, আছে বন উজাড় কমিটি, আছে খাস দখল উপকমিটি, আশ্রয়ণ (ধ্বংস) কমিটি- কত কী!
(৩) বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলাম ”দারিদ্র” কবিতায় বলেন,
হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্।
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কন্টক-মুকুট শোভা।-দিয়াছ, তাপস,
অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;
উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,
বীণা মোর শাপে তব হ’ল তরবার!
আর আজ? দারিদ্র্য এ অভিশাপ। এ দারিদ্র্য এখন কি মহান করে? এ দারিদ্র্য কি সম্মান, শোভা বর্ধনে না বর্জনে? ‘অসংকোচ প্রকাশের’ কোন সাহস কি কস্মিনকালেও দেয় এ পোস্ট-মডার্ন দারিদ্র্য? দৃশ্যতঃ সর্বক্ষেত্রে “বিগ নো”..
দারিদ্র্যের জন্য কৃষক সন্তান পারেনা পড়াশুনার পূর্ণ সুযোগ: অধুনা সৃজিত নির্ধারিত গাইড বই বা শ্রেণিশিক্ষকের কাছে আবশ্যিক প্রাইভেট পড়তে দেয়না: ফলতঃ জিপিএ -৫ এখন ধনীর শো-কেইসের শোভা বর্ধনকারী ক্রেস্টের মতোই: গেঁয়ো-ছাত্র তা দূর থেকে দেখেই ‘মহান’ ভাবে!
দারিদ্র্য আজ অবমূল্যায়িত। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, গৃহকোণ বা ভোজনালয়ে- আজো দারিদ্র্যের কষাঘাতে, দীর্ঘদিন উনুনে খাবার না চড়ার কষ্টে মৃত্যুতে নীরবে সত্ত্বর আলিঙ্গণ করতে চায় কত গেঁয়োবধু- সেখানে দারিদ্র্য ‘খ্রীষ্টের সম্মান’ বয়ে আনবে না ‘ধুরধুর অপমান’ বয়ে আনবে, তা ধর্তব্য। তাহলে কি দারিদ্র্য একটি অভিশাপ
(৪)
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক অমীয় বাণী:
“অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তবে ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে ”
একালে এমন মহান উক্তি কে কাকে বলবে? কে বলবে, তুমি প্রতিবাদী হও, সৎ হও, অন্যায় সহ করোনা….
যেখানে পাড়ার মোড়ে মোড়ে নব্য ইভটিজার বা বাহারি হেয়ারকাটের “কিশোর গ্যাং” চোখের সামনে তুই তোকারি করে, ভ্রাম্যমাণ দ্রুত বিচারের মঞ্চ বানিয়ে মুহুর্তেই নাজেহাল করে শত ‘সুশীল’কে, প্রায়শই উন্নয়নশীল দেশে PGP (‘Present Govt.Party’!) এর উদীয়মান উর্ধ্ব বা অনুর্ধ্ব ১৮ (!) টিমের সদস্যদের মোটা ঘাড় আর চোখ রাঙানিতে অসহায় গ্রাম্য মোড়লকেও মাথা নিচু করে পায়ের নখ দেখে সম্মুখে যেতে হয়, পাছে, আগামীর নেতৃত্বের বিরুদ্ধাচারণ হয়ে রোষানলে পড়তে হয়, সেখানে কে বলবে -অন্যায়কারী আর অন্যায় সহ্যকারী সমান অপরাধী?
—–
মোঃ নাজিম উদ্দিন
মে ২১, ২০২১