শীতের গ্রাম: গ্রামের শীত: শীতবস্ত্র।

Nov 24, 2021 | আত্মউন্নয়ন ও মোটিভেশন, গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস, মানুষ মানুষের জন্য | 0 comments

View : 106
 

শীতের গ্রাম: গ্রামের শীত: শীতবস্ত্র।

গ্রামের নভেম্বর ডিসেম্বর মানে শীতের উৎসব, সবেমাত্র বার্ষিক পরীক্ষা শেষে দুরন্তপনার প্রতীক্ষা। আর ধান কাটার পর খোলামাঠ যেন সে প্রতীক্ষা দূরীকরণে সহায়ক।
অগ্রহায়ণেরর শেষ বা পৌষের শুরু যেন নবান্নের নব ধান্যে কৃষক বা জমিদারের গোলা ভর্তি হওয়ার প্রাপ্তির অনুসর্গ।
ধান কাটার সময়, বিশেষ করে
সুগন্ধি ধানের ক্ষেতে ধান কাটার সময় জাল দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ধরা হত বাডই নামক ছোট বিরল পাখি, যা রান্নার পর খুবই সুস্বাদু হত, প্রবাদ ছিল – ‘এক বাডই তের মুলা….’; অর্থাৎ একটা বাডই তেরটা মুলা দিয়ে রান্না করলেও স্বাদ তার অতুলনীয়।
ধান কাটার পর মাঠে ইঁদুরের গর্তে থাকত বেশ কিছু ধানের শিষসমেত ধান। দুষ্টু বালকেরা দল বেঁধে কোদাল দিয়ে সে গর্ত কুঁড়ে ধান বের করত আর জমা করে রাখত মোলা মুড় কেনার জন্য। এক সের ধান দিয়ে সাইজ ভেদে ৪-৫ টি মোলা ( মুড় বা চিড়া দিয়ে তৈরী) ক্রয় করতে পারত। ছিল খেজুর রস চুরির জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠার প্রতিযোগিতা!

ধনী গরীব নির্বিশেষে সবার বাচ্চাদের একই সাথে, একই গ্রুপে খেলা-দুষ্টামি বা ঝগড়া- বিত্তের প্রসংগ আনতো না কভু।

খেলার মাঠ প্রস্তুত হওয়ার আগে ধানের মাঠের ‘নাড়া’ (ধান গাছ কাটার পর অবশিষ্টাংশ) কাটত সবে স্কুল বা পরীক্ষামুক্ত হওয়া ছেলে মেয়েরা। কনকনে শীতের রাতে সবাই চাঁদা তুলে খোলা মাঠে প্যান্ডেল করে পিকনিকের আয়োজন হত, সে কী আনন্দ!
শীত থেকে মুক্তির জন্য জমানো নাড়া মাটিতে বিছিয়ে গরমকরার ব্যবস্থা করা হত। এর পর মাইক ভাড়া করে সন্ধ্যার পর থেকে তাদের অপেশাদার কন্ঠে অসম্পূর্ণ গানের কলি, বিরক্তির উদ্রেক করত ঘুমন্ত গ্রামবাসীর, কিন্তু বালকদের আনন্দের কি সীমা আছে, না আছে ক্লান্তি।
শীতের সকালে উঠোন পেরিয়ে রাস্তা বা বিলের ধারে কাঠ বা খড়কুটা দিয়ে আগুন জালানো হত, ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন শীত কমার আগ পর্যন্ত। আর বালক যুবা বৃদ্ধা আগুনের চারদিক থেকে হাত পা গরম করত।
শীতের বিকালটা খুব ছোট বলে দুপুরে খাওয়ার পরই শুরু হত খেলার প্রস্তুতি। ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু ইত্যাদির আসন্ধ্যা ব্যস্ততা বালক থেকে যুবা অনেকের। তবে সন্ধ্যায় পুকুর ঘাটে পা রাখতেই অতি শীতের পানির ‘কামড়’ যেন সবার আতংকের।
শীতের রাত ছিল খুব কষ্টের। বলছিলাম আমাদের বাল্যবেলার কথা, আজ থেকে প্রায় ২০-২৫ বছরেরও আগেকার গ্রামের অপ্রতুলতার কথা, অসচ্ছলতার কথা। কনকনে শীত নিম্নমধ্যবিত্তের বেড়ার ফাঁকে ঘরে ঢুকে যেন অত্যাচার করে প্রতি রাতে।কাপড়ের দুস্প্রাপ্যতা বা অভাবের অাধিক্যের সে যুগে শীত থেকে বাঁচার জন্য ঘরের মায়েদের শাল (কাপড়) দেখা যেত অসচ্ছল পুরুষের গায়ে, আড্ডাময় চায়ের দোকানে,বাজারেও। মায়েরা, মেয়েরা সবসময় যেন ত্যাগের প্রতীক, নিশ্চুপ কষ্ট সয়ে যেত তখনো।
গ্রামের সেই স্মৃতিগুলো আজো মনে করিয়ে দেয় কষ্ট-আনন্দমিশ্রিত গ্রামের জীবনধারার, শ্বাশত বাংলার।

আজকের উদ্যোগী তরুণদের মত সে সময় শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ বা অবস্থা ছিলনা, তবে সচ্ছল গ্রামবাসী তাদের প্রতিবেশিদের সাহায্য করত, বিভিন্নভাবে। গ্রামের বড় ভাই পাশের ঘরের অসচ্ছল ছোটভাইকে তার অতিরিক্ত কাপড়টা পড়তে দিত।
আজ বিদ্যুৎ,প্রযুক্তি,ফেইসবুকও গ্রামে, গ্রামেও পাশাপাশি বসেও দু বালক নিজ নিজ ফেইসবুকিং এ ব্যস্ত দেখা যায়।
আজ সচ্চলতা অনেক, মাশাল্লাহ,দানের ক্ষেত্রেও উদারতা লক্ষণীয়।

তবে চ্ট্টগ্রাম বা জেলাশহর বা শহরতলী তো আর সারা বাংলা নয়, বাংলাদেশের অনেক এলাকা এখনও দরিদ্রক্লিষ্ট, যেখানে শীতবস্ত্র যেন অধরা বিলাসিতা, অন্নজুটানোই যেখানে কষ্টকর।

আহবান করব, যে যার অবস্থান থেকে যথাসাধ্য সম্ভব দান করে শীতের কষ্ট লাগবে অসচ্চলদের পাশে দাড়ানোর।
এই শীতে আমরা শহর থেকে শুধু ১০০ বা ২০০ টাকা দিয়ে একটা শীতের কাপড় কিনে অন্তত একজন শীতক্লিষ্টের পাশে দাড়ালেও অনেক।


মোঃ নাজিম উদ্দিন
নভেম্বর ২৪, ২০১৫