বুক রিভিউঃ শেয়ারিং উইথ আদার্স
—
“অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী স্মারকগ্রন্থ”ঃ Interim পাঠক প্রতিক্রিয়া
————
“Thus I entered, and thus I go!” রবার্ট ব্রাউনিং এর Patriot কবিতার লাইনটি মনে পরে গেলো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে যে ক’জন বরেণ্য শিক্ষাবিদ প্রারম্ভিক বিভাগগুলো প্রতিষ্ঠিত করার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী তাঁদের অন্যতম। তিনি এসেছিলেন বীরদর্পে। সুদীর্ঘ কর্মজীবনে ভিন্ন ভিন্ন প্রশাসনিক অবস্থান থেকে–প্রথমে ইংরেজি বিভাগের সভাপতি, পরবর্তীতে কলা অনুষদের ডিন, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য হিসেবে – তাঁর নানান গঠনমূলক দিকনির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয় সমৃদ্ধ হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির প্রতিথযথা প্রফেসর সুজিত দত্ত স্যার “অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী স্মারকগ্রন্থ” তাঁর লেখা এভাবেই শুরু করেছেন।
“A Homage to Professor Mohammad Ali, an Unsung Hero of His Time” শিরোনামের প্রফেসর চৌধুরী মোহাম্দ আলী স্যার প্রয়াত Legendary Oxford Scholar প্রফেসর মোহাম্মদ আলী স্যারের জীবন ও কর্ম তুলে ধরে লিখলেন কীভাবে স্যারের কর্ম ও কীর্তি Unsung রয়ে গেলো, রয়ে গেলো Unrecognized!
গতমাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট এর শিক্ষক ও সাবেক পরিচালক, আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক প্রফেসর সাইফুল ইসলাম স্যারের কাছ থেকে উপরোক্ত স্মারকগ্রন্থটি সংগ্র করে পড়া শুরু করলাম। আমাদের ‘দাদা শিক্ষক’ (শিক্ষকগণের শিক্ষক) আলী স্যারের বর্ণিল, জ্যোতির্ময় জীবন ও কর্মের এতো সুক্ষ্ম, সরল, প্রাঞ্জল এবং সবচেয়ে বড় কথা, গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাময় লেখাসমূহ একের পর এক নিয়ে যাচ্ছে ভাবনার গহীনে।
যে যুগে ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ বললে শুধু কাজি কাদের নেওয়াজের ‘বাদশাহ আলমগীর, কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলবি দিল্লির..’ কবিতাটি ছাড়া তেমন শ্রদ্ধা, সম্মান এবং ভালোবাসার কথা শোনা যায়না, সে যুগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপকগণ নিজেদের শিক্ষকের প্রতি, বিভাগের প্রতিষ্টাকালীন সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার যে সমৃদ্ধ, জ্ঞানগর্ভ স্মারক জাতিকে উপহার দিয়েছেন, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে বহুকাল।
অনার্য প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ৪০০ শতপৃষ্টার এ গ্রন্থে রয়েছে বাংলা ও ইংরেজি দু ভাষায় মিলে ৫৪ টির এর অধিক জ্ঞানগর্ভ লেখা: দেশবরেণ্য প্রফেসর এবং আলী স্যারের সহপাঠী সিরাজুল ইসলাম স্যারের স্মৃতিলেখা দিয়ে শুরু হওয়া স্মৃতিলেখাসমূহের সাথে রয়েছে আলী স্যারের জীবনী, এলবাম ইত্যাদি।
ইতোমধ্যে প্রায় ২০ টির মতো লেখা পড়া সমাপ্ত করেছি। সাহিত্যগুণ বিচারে অসাধারণ এ সাহিত্যকর্ম শুধু লেখকদের কলমের কালিতে একাডেমিক জীবনে সব পরীক্ষায় প্রথম হওয়া আলী স্যারের জীবন, শিক্ষাজীবন, প্রশাসনিক দক্ষতা, লেখনি ইত্যাদিই উঠে আসেনি, বরং রূপক, উপমার গাঁথুনি দিয়ে নির্মিত হয়েছে এক অসামান্য স্মারকগ্রন্থ, যার প্রতিটি লেখায় রয়েছে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মালা, সম্মান ও স্বীকৃতির স্তম্ভ, তৎকালীন শিক্ষা ব্যবস্থার খন্ডচিত্র এবং সাথে সাথে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য “শিক্ষকের প্রতি প্রতিষ্টিত ছাত্রদের” শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর এক অনন্য উদাহরণ।
বইটি প্রতিটি সাহিত্য সচেতন পাঠকের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ ও সংগ্রহ হিসেবে মূল্যায়িত হবে বলে আমার এ পর্যন্ত পড়ার পর দৃঢ় বিশ্বাস। বইটি পড়া শেষে পুনরায় কিছু লেখার সাহস করবো ইনশাআল্লাহ।
আমি বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি।
—
মোঃ নাজিম উদ্দিন
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩