বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবসঃ প্রসঙ্গকথা
ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হোসেন
————
আজ বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস।
প্রতিবছর ২৮ সেপ্টেম্বর এ দিবস পালিত হয়।
জলাতঙ্ক রোগ একটি ‘জুনোটিক’ রোগ অর্থাৎ প্রাণী দেহ থেকে মানব শরীরে রোগ সৃষ্টি করে। জলাতঙ্ক রেবিস ভাইরাস দিয়ে হয়। সাধারণত রেবিস আক্রান্ত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বাদুর, বেজি, বানরের কামড় বা আঁচড় থেকে লালার মাধ্যমে প্রাণী শরীর থেকে মানব শরীরে ভাইরাসটি প্রবেশ করে। কামড়ের স্থানে লালা নিঃসৃত ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে নার্ভ বা স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এবং মস্তিষ্কেও বংশবৃদ্ধি করে প্রদাহ বা ইনকেফালাইটিস করে। সেখান থেকে ভাইরাস নার্ভের মাধ্যমে লালাগ্রন্থিতে প্রবেশ করে ও লালার মাধ্যমে নিসৃত করে। রেবিস আক্রান্ত মানুষ অন্যজনকে কামড়ালে রেবিস হতে পারে।
রেভিস ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করার পর এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে অনেকসময় লাগে। এই ভাইরাসের ইনকিবেশন পিরিয়ড অর্থাৎ রোগ প্রকাশের লক্ষণ ২-৩ মাস তবে ১০দিন থেকে ১বছর পর্যন্ত হতে পারে। এর অর্থ হলো ১বছর আগে কামড় দিলেও এর লক্ষণ একবছর পর দেখা দিতে পারে।
জলাতঙ্ক প্রাণঘাতি রোগ তবে আশার বিষয় এটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। বাংলাদেশে জলাতঙ্কের ৯০% ই কুকুরের কামড়ে হয় এবং শিশুরাই প্রধানত কামড়ের শিকার হয়। ভেকসিন বা টিকা নিয়ে এরোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
কুকুরে কামড়কে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে হয় –
ক্যাটাগরি – ১:
শুধুমাত্র লালা লাগলে – ১৫ মিনিট ধরে কাপড় কাঁচার সাবান বা ডিটারজেন্ট বা পভিডন আয়োডিন দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ক্যাটগরি – ২:
হালকা কামড় বা আচঁড় – প্রথম ক্যাটাগরির মতো ধুয়ে ফেলতে হবে সাথে ভেক্সিন বা টিকা নিতে হবে।
ক্যাটাগরি – ৩:
গভীর ক্ষত সৃষ্টিকারী দুই বা ততোধিক কামড় থাকলে ক্যাটাগরি ২ এর মতো ভেক্সিন এবং সাথে রেভিস ইম্যিউনোগ্লোবিউলিন নিতে হবে।
জলাতঙ্কের লক্ষণ:
** কুকুরের কামড় দেয়ার ইতিহাস থাকবে
** জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া
** হাইড্রোফোবিয়া বা জল আতংক। পানি পান করার সময় শ্বাসতন্ত্রের মাংসপেশী ও কন্ঠনালীর তীব্র ব্যাথাযুক্ত সংকোচনের কারনে রোগি পানি খেতে পারেনা এবং পানি দেখলে ভয় পায় সেজন্য এই রোগকে হাইড্রোফোবিয়া বলে।
** অশান্ত আচরণ
** খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
** শ্বাস নেওয়ার মাংসপেশী প্যারালাইসিস বা অসাড় হয়ে মৃত্যু।
সাধারনত লক্ষণ প্রকাশের ৫-৭দিনের মধ্যে মৃত্যুবরন করে।
চিকিৎসাঃ
জলাতঙ্ক রোগের কোনো চিকিৎসা নেই, এইরোগ হলে মৃত্যু অনিবার্য। টিকা বা ভেকসিন নিয়ে এই রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়।
প্রতিকারঃ
জলাতঙ্ক থেকে বাঁচতে নিম্নোক্ত সচেতনতামূলক প্রতিকার ব্যবস্থা জরুরীঃ
১) কুকুর, বানর, বিড়াল, বেজি, শিয়াল, বাদুর এসমস্ত প্রাণ কামড় দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে।
২) গর্ভাবস্থায় বা দুগ্ধপান করানো মায়েদের জন্য ও ভেকসিন নিরাপদ।
৩) ইঁদুর,খরগোশ, কাঠবিড়ালী, গুইসাপের কামড়ে রেবিস ভেকসিনের প্রয়োজন নাই।
শেষকথা:
কথায় আছে, Prevention is better than cure. জলাতঙ্ক রোগের ক্ষেত্রেও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, উচিত সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা। শুধুমাত্র তখনই আমরা মুক্ত থাকতে পারবো এ ভয়ানক রোগের কবল থেকে।
————————————-
ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হোসেন
এমবিবিএস, বিসিএস
মেডিক্যাল অফিসার
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।