নাজাতের শেষদশকঃ প্রসঙ্গ: ইতিকাফ ও এর গুরুত্ব

May 3, 2021 | ধর্ম, জীবন এবং জীবনভাবনা | 0 comments

View : 116
 

নাজাতের শেষদশকঃ প্রসঙ্গ: ইতিকাফ ও এর গুরুত্ব

রমজানের শেষ দশদিন খুবই তাৎপর্যময়। এ দশককে বলা হয় ‘নাজাত’। শবে কদর, ইতিক্বাফ, শেশ জুমা ইত্যাদি এ শেষ দশকে রয়েছে
ইতিকাফ, লাইলাতুল কদরসহ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

ইতিকাফ কী? ‘ইতিকাফ’ একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশক বা অন্য কোনো দিন জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহকে রাজি করার নিয়তে পুরুষের জন্য মসজিদে বা মহিলাদের ঘরে নামাজের নির্দিষ্ট একটি স্থানে ইবাদত করার উদ্দেশ্যে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলা হয়।

ইতিকাফ প্রসঙ্গ পবিত্র কোরআনের আয়াতে সূরা বাকারা : ১৮৭নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে: আর তোমরা মসজিদে এতেকাফ কালে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না নবীজি ইতিকাফকে খুব গুরুত্ব দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশক (মসজিদে) ইতিকাফ করতেন। এ আমল তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত কায়েম ছিল।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতেকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আলাল কিফায়া। সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া মানে হলো, একটি মহল্লা বা এলাকার সবার পক্ষে অন্তত একজন আদায় করতে হবে। না হয় পুরো এলাকাবাসীর গুনাহ হবে।

ইতিকাফ আদায় করা বা সহিহ হওয়ার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে:
১. পুরুষের মসজিদে এবং নারীদের জন্য ঘরে অবস্থান করা।
২. ইতিকাফের নিয়ত করা
৩. বড় না পাক থেকে পাবিত্রতা অর্জন করা এবং
৪. রোজা রাখা।

ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ইতেকাফ কী? মসজিদুল হারামে আদায়কৃত ইতিকাফ ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ইতেকাফ। তারপর মসজিদে নববীর ইতিকাফ এবং তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস। তারপর উৎকৃষ্ট ইতেকাফ হলো- কোনো জামে মসজিদে ইতিকাফ করা যেখানে রীতিমতো জামায়াতে নামায হয়। এরপর মহল্লার মসজিদে।
একজন মুসলিম ইতিকাফ করবেন?

১) আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা
২) মানবীয় পাশবিক প্রবণতা এবং অহেতুক কাজ থেকে দুরে থাকা
৩) শবে কদর তালাশ করা।

মহানবী (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা লাইলাতুল কদরকে অর্জন করতে চায়, তারা যেন শেষ দশকে এতেকাফ করে।
৪) মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তোলা।
৫) দুনিয়ামুখি মানসিকতা ত্যাগ ও বিলাসিতা থেকে দুরে থাকা।

এতেকাফের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজার শেষ ১০ দিন এতেকাফ করবে, সে ব্যক্তি দু’টি হজ্ব ও দুটি ওমরার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।
(বুখারি ও মুসলিম)।

কীভাবে ইতেকাফ করতেন রাসুল [সা.]?

১. আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ দশ দিনে এতেকাফ পালন করেছেন। [বোখারি : ২০২৬।] ২. এতেকাফরত অবস্থাতেও রাসুল পাক-পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন।
৩. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যবশ্যকীয় কোন কারণ ব্যতীত এতেকাফগাহ হতে বের হতেন না। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুল এতেকাফরত অবস্থায় কোন কারণ ব্যতীত গৃহে প্রবেশ করতেন না। [বোখারি : ২০২৯।]

মসজিদবিমুখ মানুষকে মসজিদের সাথে সুদৃঢ় সম্পর্ক স্থাপনসহ মানুষকে তাকওয়া তথা খোদাভীতিতে পরিপূর্ণ করতে এবং সর্বোপরী হাজার রাতের চেয়ে উত্তম লাইলাতুল কদর অন্বেষণ বা তালাশ করার ক্ষেত্রে ইতিকাফ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মহান আল্লাহর নির্দেশনা, প্রিয় নবীজীর আদর্শ বাস্তবায়নে সকলে দায়িত্ববান হওয়া উচিত।
আল্লাহ আমাদের ভাল কাজ করার তৌফিক দান করুন। আমিন

(অধিকাংশ তথ্য সংগৃহীত)..

——
মোঃ নাজিম উদ্দিন