তবুও লিখি, তবুও লিখুন
—–
পেশায় যারা লেখক নন, যারা কবি বা সাহিত্যিক নন, তাদের অধিকাংশই পাঠক বা ফলোয়ারের কাছে সহজে পার পান বলে মনে হয় না। আলোচনা, সমালোচনা, কটু কথার অবজ্ঞা ইত্যাদি থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে নিতান্ত মনের আনন্দে যারা লেখাকে একান্ত নিজের করে নিতে পারেন, বেলাশেষে তারা চষে বেড়াতে পারেন এ উর্বরা মাঠে, দীর্ঘদিন..
প্রথমতঃ এক শ্রেণির মানুষ আপনাকে খুব অবজ্ঞা করেই বলবেন, কি লেখক ভাই! কি কবি ভাই! কেমন আছেন? কিংবা সুন্দর প্রাকৃতিক আবহ দেখে বলবেন, বসে এখানে একটা কবিতা লিখে ফেলেন! এ কথা যে মোটেও উতসাহ দিয়ে বলা হয়নি তা বুঝামাত্র আপনি চুপচাপ বসে এড়িয়ে যাবেন। সর্বোচ্চ হয়তো রাগে ক্ষোভে তাকে আনফ্রেন্ড করবেন। কষ্ট তবুও থেকেই যায়!
আর এক শ্রেণির মানুষকে পাবেন, যারা প্রথমেই বলবেন, ধূর! কোন কাজ না থাকলে যা হয় আর কি। বলেন, আজকাল কবিও অনেক বেড়ে গেছে! এখন না পড়েও অনেকে লিখেন!
অন্য কিছু মানুষ আছেন, যারা বলবেন, আচ্ছা, এই লোক এত সময় কীভাবে পান? আমরা তো কোন ভাবেই সময় ম্যানেজ করতে পারিনা! এত ব্যস্ত থাকি! ইত্যাদি!
আরেক শ্রেণির মানুষ পাবেন যারা নিজের গৌরবের সাহিত্য ইতিহাস তুলে ধরবেন। আমি আগে প্রায় লিখতাম। পত্রিকায় ও লেখা আসতো। এখন ভাই বিভিন্ন টেনশনে আর লিখতে পারিনা! কেমন এক পিকুলিয়ার ভাবসাব!
আরেক শ্রেণির মানুষ আপনার সামনে কিছু বলবেন না। পেছনে অপরজনকে বলেন, ভাই, তার কোন কাজ কর্ম নাই! সব কিছু লিখে জানাতে হয়! লিখায় লাইক বা কমেন্ট তো করবেনই না, বরং ভুল ধরার কাজে থাকবেন!
এ সবের মাঝেও কিছু ইতিবাচক মানুষ আপনাকে উৎসাহিত করবেন নিয়মিত। অনিচ্ছাকৃত বানান ভুল সংশোধনে আপনাকে কমেন্টে বা ইনবক্সে জানাবেন। আপনার লেখা পড়ে মতামত দিবেন। এ রকম মানুষ সংখ্যায় কম হলেও Quatity betters much more than quantity। কথাটা সত্য।
কিছু মানুষ অন্যের সামনে আপনার লেখার প্রসৃশা করবেন। ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করতে পারার বিষয়টা নিয়ে আপনাকে আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানাবেন।
আপনি যদি মনে করেন, উপরোক্ত দুই শ্রেণির মানুষের জন্য আপনি লিখেন, তাহলে আপনি আসলে লেখালিখিকে নেশা হিসেবে নিতে পারেন নি। আপনার লেখা যদি আপনাকে আনন্দ দেয়, তাহলে কোন পাঠক নেতিবাচক কি বলছেন, তা আপনাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করতে পারবেনা। তেমনি অতি প্রসংশায় আবেগতাড়িতও করবেনা আপনাকে।
পড়া ও লেখালেখি দুটোই আনন্দদানের উদ্দেশ্যেই হওয়া উচিত। যে কাজে আনন্দ নেই, সে কাজ সফল হয়না। এ আনন্দ আপনার নিজের ভেতর থেকে আসতে হবে। আপনার এ লেখা, আপনার মনের ভাবের পরিচায়ক। আপনার ভাব কারো সাথে মিলবেনা। স্বাভাবিক। আপনার সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা ইত্যাদি স্বতন্ত্র।
আপনার লেখা আপনার যুগকে প্রতিবিম্ব করবে, করবে প্রতিনিধিত্ব, অনাগত কালেও, অনাগত পাঠকের কাছেও। আজকের পাঠকের কাছে আপনার লেখা ভালো নাও লাগতে পারে। তবে অনাগত পাঠক তা সমাদর করবে, যদি।তেমন লেখা হয়।
বিশ্বকবির ভাষায়, “আজ থেকে শত বর্ষ পরে, কে তুমি পড়েছো বসি, আমার কবিতাখানি, কৌতুহলভরে..”
আপনার ভাবাবেগ,অনুভুুতির প্রকাশ, জানা বিষয়, অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয় প্রকাশের আকাঙ্খা আপনাকে লেখার জন্য তাড়িত করলেই আপনার লেখা সার্থক হবে। স্বতঃফূর্ত হবে। প্রাণবন্ত হবে।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামও জানিয়েছেন তার লেখা কথা বা গানের মূলমন্ত্র। কবির ভাষায়:
বনের পাখির মতো স্বভাব আমার গান করায়। কাহারও ভালো লাগিলেও গাই, ভালো না লাগিলেও গাহিয়া যাই। বায়স-ফিঙে যখন বেচারা গানের পাখিকে তাড়া করে, তীক্ষ্ণ চঞ্চু দ্বারা আঘাত করে, তখনো সে এক গাছ হইতে উড়িয়া আর গাছে গিয়া গান ধরে।
তাহার হাসিতে গান, তাহার কান্নায় গান। সে গান করে আপনার মনের আনন্দে, যদি তাহাতে কাহারও অলস-তন্দ্রা মোহ-নিদ্রা টুটিয়া যায়, তাহা একান্ত দৈব।”.
মনের আনন্দে বা আবেগে নিজের কথাগুলো প্রকাশ করাই যদি হয়ে থাকে আপনার লেখার মূল চালিকাশক্তি, মূল উৎসাহ, মূল অনুপ্রেরণা, তবে আপনার কলম থেমে যাওয়া সমীচিন নয়।
—
মোঃ নাজিম উদ্দিন
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২২