ডঃ আকবর আলী খানঃ এক নক্ষত্রের বিদায়
ডঃ আকবর আলী খান। আমাদের প্রজন্মের তারুণ্য যে কজন জীবন কিংবদন্তি, সত্যিকারের মেধাবীজন, কীর্তিমান দেশপ্রেমিকের কর্মময়, জ্যোতির্ময় জীবন ও কর্মকে আদর্শ, শক্তি সামর্থ্যের রোলমডেল হিসেবে সম্মুখে রেখেছি, তাদের মধ্যে অন্যতম ডঃ আকবর আলী খান। বিচারপতি হাবিবুর রহমানের পর যে কজন বুদ্ধিভিত্তিক লেখক বুদ্ধিজীবি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, অবসর গ্রহণের পরও রাষ্ট্রের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন সততা, নিষ্টা, বিচক্ষণতা ও নিরপেক্ষতা দিয়ে, সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদের লেখনির দ্বারা, ‘পরার্থপরতার অর্থনৈতিক’ ডঃ আকবর আলী খান সামনের সারির একজন।
জানা যায়, ইতিহাস বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স দুটাতেই প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হওয়া এ মেধাবী তরুণ প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন, মৃদু ছাত্র ইউনিয়ন করা আকবর আলী খানকে পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে দেওয়া হয়নি।
পরবর্তীতে কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি স্নাতকোতর। তারপর পিএইচডি।
গানিতিক অর্থনীতিটা শিখেছেন পদার্থবিজ্ঞানের এককালের তুখোড় ছাত্রী তার স্ত্রী হামীম খানের কাছ থেকে।
ইতিহাসের ছাত্র আকবর আলী খান তাঁর বর্ণিল জীবনে রচনা করেছেন স্মরণীয় অনুকরণীয়। ১৯৬৭ সালের দিকে তৎকালীন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস উত্তীর্ণ হয়ে হবিগঞ্জের এসডিও হিসেবে যোগ দেন। চাকুরির ঝুঁকি নিয়ে অকপটে সাহায্যে করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের।।সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। কথিত আছে, ‘৭১ এ হবিগঞ্জের ডিসি থাকাকালীন অস্ত্রাগারের সব অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে দেন ব্যাংকের ভোল্ট খুলে দেন টাকা।
সিএসপি জনাব খান সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েও যোগদান করেননি। সচিবালয়ের চাকরি ছেড়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন শিক্ষকতা করতে। বঙ্গবন্ধু এই রত্নকে চিনতে ভুল করেননি, চাকরিতে ফিরে আসার সুযোগটা না থাকলে বাংলাদেশ হয়তো আজকে এই আকবর আলী খানকে পেতো না।
ইআরডি,পরিবেশ, পানিসম্পদ, দীর্ঘ সময়ের অর্থসচিব,আমলাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদ মন্ত্রীপরিষদ সচিব হওয়া হতো না। যদিও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতেই চেয়েছিলেন।
দূর্বল অর্থনীতির সবল গবেষক আকবর আলী খানকে নিয়ে লিখে শেষ করা যাবে না। শেষ কয়েকবছর অত্যন্ত কষ্টে বুকের পাজর জ্বালিয়ে বেঁচেছিলেন, একমাত্র মেয়ে নেহরীন খানকে ভুল চিকিৎসায় হারিয়ে, প্রিয়তমা স্ত্রী যার হাতে গানিতিক অর্থনীতির প্রাথমিক পাঠ নিয়েছেন তাঁকে হারিয়ে।
শতবর্ষী শাশুড়ী জাহানারা রহমান ও ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের সাথে প্রায় চলতশক্তিহীন হয়ে আমাদের জন্য লিখে গেছেন অসামান্য কিছু বই। বেঁচে থাকলে এ জাতিকে মুগ্ধ করার মতো আরও কিছু বই দিতে পারতেন সন্দেহ নেই।
স্বীকৃতি, সম্মাননার তালিকা তাঁর হয়তো দীর্ঘ নয়। তবে নিজের কর্মময় জীবন ও নির্মোহ দেশপ্রেম, অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পাওয়া, পরপারে থেকেও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট।
ক্ষণজন্মা এ কীর্তিমানের সত্যিকারের মৃত্যু নেই। আপনার কাজ ও বই এর মাধ্যমে আপনি বেঁচে থাকবেন বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে আরও অনেক দিন।
মহান আল্লাহতাআলা ডঃ খানকে বেহেশত নসীব করুন, আমীন।
—
বিভিন্ন প্রকাশনা, পোস্ট অবলম্বনে সংকলন করলাম।
—
মোঃ নাজিম উদ্দিন
সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২