চাপটা সামাজিক- সমস্যা শতাধিক!
———–
পারিপার্শ্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশটা কিংবা সামাজিক চাপটা সচরাচর এমনভাবে পরিলক্ষিত হয় যে,
কেউ যদি ভাল থাকতে চায় এবং সেভাবে দিনাতিপাত করে, তবুও মন্দ লোক, এমনকি ‘অ-ভাল’ লোকজনের চাপে ভালজনের আর দীর্ঘস্থায়ী ভাল থাকা হয় না! সে তখন ‘ভালা’ থাকেনা, যেন ‘ভালা’ লইয়া থাকে!
কেউ যদি উদারমনা থাকতে চায় এবং সেভাবে জীবনযাপনও করে, তবে চারপাশের সংকীর্ণমনাদের অতি-সংস্পর্শ ও চাপ থাকলে, প্রভাবটা এমনও হতে পারে, কোন এক সুদূরে উদারমনস্ককেও সংকীর্ণমনাদের দলে দেখা যাবে!কু-জনের কুঅভ্যাসে স্বজনেরা সুজন থাকতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করলেও অনেক সময় সুস্থির থাকা হয়ে উঠেনা!
বঙ্গদেশে তা আরো কঠিন..
বঙ্গ পুরুষ-নারীদের একটা অংশ, আবারো বলছি, “একটা অংশ”
অপ্রাপ্তিকেই শুধু সামনে নিয়ে আসে আর পরিপূর্ণভাবে প্রভাবিত করে যেন অপরকে অনুসরণ করে!
কিছু টিভি সিরিয়েলে চরিত্রসমূহের ভঙ্গি বা অপচয় কিংবা সমাজ-ভঙ্গনের কাজ যেভাবে বঙ্গসমাজের মানুষ, বিশেষত কিছু শ্রদ্ধেয় ললনাগণ অনুসরণ কর থাকে, সেভাবে দেশেপ্রেম, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, দায়িত্ববোধ ইত্যাদি কখনোই খেয়াল করে না! কেউ স্রোতের বিপরীতে নতুন কিছু করতে গেলেই কেল্লা ফতে!
আমেরিকাকে ধনী দেশ হিসেবে কিংবা নিউজিল্যান্ডকে অপরূপ সুন্দর স্বাস্থ্যকর দেশ হিসেবে দেখতে খুবই পছন্দ করে সত্য, সে দেশের নাগরিকগণ যেভাবে একটা ব্যবহৃত কাগজও নিজ হাতে বা পকেটে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলে, রাতের কম যানজটহীন রাস্তায় সড়কবাতির সংকেতসমূহ মেনে চলে, তা বঙ্গবাসী ভাবতেও পারে কি? বরং কেউ নিয়ম মানতে চাইলে তাকে চতুর্মাত্রিক অপমান সইতে হয়!
অনেক ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধ নিয়ে কেউ বাঁচতে চাইলে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ জনের মনস্ত্বাত্তিক চাপে তা ব্যাহত হয়। ব্যাপারটা স্মার্টফোনের পরিবর্তে ম্যানুয়াল ফোন ব্যবহারকারী থেকে নিজের ফ্ল্যাটহীন ভাড়াটিয়া ~ সব পর্যায়ে অনেকটা সমমাত্রিক!
“আপনি খেয়েছেন কি না? ” সে প্রশ্ন করবেন না যে প্রতিবেশি, তিনিই আপনাকে ‘অতি-আন্তরিকতা’ ও ‘আবদারে’ জিজ্ঞেস করবেন, ”বাড়িটা করে ফেলছ না কেন?” চাপটা সামলানো যায়? বরং সামলাানো দায়।
বাসে ঝুলে পথ পাড়ি দেয়া ছাড়া যার উপায় নেই, তাকেও চাপে ফেলবে কেউ কেউ- সামনে না পারলেও পেছন থেকে বলবে, ‘এখনো বাসে চড়ে চলে সে! এত টাকা কে খাবে?’ নিজে কোনদিন সহায়তা না করলেও ‘আজ বাজারে যাননি? কিংবা এতটুকুতে কি হবে?’ অথবা ঈদ-পার্বনে জিজ্ঞাস করবে: তো, জামা কয়টা নিয়েছেন? ‘আমার মেয়ে এবার ঈদে পাঁচটা জামা পেয়েছে, জানেন?’ ইত্যাদি!
মধ্যবিত্ত ছাত্রের আর্থিক সংকটের ছাত্রজীবনে একটা টিউশনির খোঁজও যে দিতে পারে নাই, সে ‘স্বজন’ই অধ্যয়ন সমাপনে তাকে জিজ্ঞাসা করবে, এত পড়াশুনা করে এখনো কোন চাকুরি জোগাড় করতে পারো নি??”- ইত্যাদি….
নিজের প্রয়াত মুরুব্বিদের কবর জেয়ারত কস্মিনকালেও যে উত্তরসুরী করে না, তিনিও আপনাকে দেখলে বলবেন, ‘তোমার বাবা-দাদাদের জন্য বছরে একটা মেজবান তো করতে পারো! তারা তো তাদের এত সম্পত্তি নিয়ে যেতে আসবেনা!!’ অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপদেশদাতার নিজের বেলায় সে ‘উপদেশ’ নেই!
এবার আসেন বিয়ে শাদির বেলায়: নব চাকুরে বা সদ্য ক্যারিয়ার শুরু করা বিবাহে আগ্রহী যুবককে বলা হয়: ‘বিয়ে কি জীবনে বারবার করবে? মেহেদি অনুষ্টানে এত খরচ না করলে লোকে কি বলবে?’, ‘সবাইকে একই রংয়ের জামা না দিলে কেমন দেখায়? এত ছোটসংখ্যার কাবিন’ বা এত কম স্বর্ণ দিলে কি হয়?’ – এসবে প্রশ্নবান করে যুবকটিকে শেষমেষ ঋণে জর্জরিত করে দাম্পত্য জীবনে শান্তির চেয়ে কিস্তি পরিশোধের সংকটই মুখ্য থাকে।
এভাবে ‘ঊন’ বা ‘অ-সামাজিক’ কপট লোকের সামাজিক চাপের চিত্রসমূহ এক লেখায় তুলে ধরা কঠিন!
সব চাপিয়ে নিজের জন্য যেটা উত্তম, নিজের সাধ্যের অধীনে যে সাধ, সে অনুযায়ী-ই কাজ করা সর্বোত্তম।
সবাইকে খুশি করতে গিয়ে নিজে ঋণগ্রস্থ হওয়া যেমন বুদ্ধিমানের কাজ নয়, তেমনি সবার কথামত কাজ করতে গিয়ে ক্যারিয়ার বা সামাজিক চাপে, নানান কাজে লিপ্ত হওয়াও যুক্তিগত হতে পারে না।
—-
মোঃ নাজিম উদ্দিন