একক থেকে সমষ্টি, সামষ্টিক থেকে এককে!

Mar 12, 2023 | আত্মউন্নয়ন ও মোটিভেশন, গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস

View : 47
 

একক থেকে সমষ্টি, সামষ্টিক থেকে
এককে!

জোট থেকে জোট জোটান্তরে….
ছুটছে মানুষ কেমন করে!

মানুষ বড় বিচিত্র! তারা একসময় নিজেদের প্রয়োজন বা আনন্দের জন্য একত্রিত হয়; পরে নিজেদের সিদ্ধান্তেই বিচ্ছিন্ন হয়! প্রথমে প্যান্ডেলে থাকে, পরে প্যান্ডেল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছাতায় থাকে!
আদিম যুগ থেকেই প্রকৃতির বৈরিতা থেকে বাঁচতে একত্রিত হয় মানুষ; পরবর্তীতে নিজেদের অর্থনৈতিক প্রয়োজনে হয় সমাজবদ্ধ; পূর্ণ করে নিজেদের সামাজিক চাহিদাও..

এক সময় মৌলিক চাহিদা পূর্ণ করতেই যে মানুষ লাজ-লজ্জার বলি দিতো, সে মানুষই একসময় চাহিদার শখকে প্রাধান্য দিতে থাকে; Maslow’র তত্ত্ব মতে, social need থেকে self actualization নিয়ে ভাবতে শুরু করে.. কি বিচিত্র!

বিশ্বাসের ভিত্তিতে নিজেদের অধ্যাত্ম ভাবনার সৃষ্টি হয়। একেশ্ববাদ থেকে বহুশ্ববাদ– কত মত, পথ! আবার একই ধর্ম বিশ্বাসেই কত উপদল! মজার ব্যাপা হচ্ছে, প্রত্যেকেই নিজেদের শ্রেষ্টত্ব দাবি করে!
যখন সমাজ উত্তীর্ণ হয়ে মানুষ রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে ভাবা শুরু করেছে, তখন শুরু হলো আরেক শ্রেণিবিভাজন- তন্ত্র, মন্ত্র, ism, -cy, কত কী! গণতন্ত্র পন্থীরা তাদের সেরা দাবি করে, আবার সমাজতন্ত্রবাদীগণ নিজেদের সাম্য ও সুশৃঙ্খলতার প্রতীক ভাবে।।

সমাজবদ্ধ মানুষ নিজেদের সমমনা, স্বজন, পরিচনদের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে লাগলো, লাগলো নিজেদের সুখে দুখে পাশে দাড়াতে। তাদের সাথে দেখা হয়, সাক্ষাত হয়, হয় কথা, বন্ধন, হৃদ্যতা…. পেছন ফেরা, শেকড়ের পানে ছুটে চলার প্রবণতা
লাগলো বাড়তে। শুরু হলো প্রাক্তণি, এলামনাই ইত্যাদি। সময়ের প্রয়োজনে বড় প্লাটফর্ম থেকে ছোট প্লাটফর্মে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজতে থাকে মানুষ। তবে ধীরে ধীরে নেতৃত্বের সংকট বেড়ে যেতেথাকে। শুরু হয় উপগোত্র চালু হওয়া। যেমন, যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তণি থাকে, সেখান শুরু হয়েছে বিভাগের প্রাক্তণিগ্রুপ; তারপর ব্যাচের গ্রুপ, তারপর ইউনিট বা সেকশনের গ্রুপ! যত সুচারুভাবে আলাদা থাকা যায়! ইউনিটের সদস্য বা নেতৃত্ব আর মূল বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্বে আগ্রহের জোয়ার দেখেনানা! কারণ তারা
হয়তো জন মিল্টনের Satan চরিত্রের মতো ভাবে, “It’s better to reign in hell than to serve in heaven”

সভ্যতা যখন আরো উন্নতির শীর্ষে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যখন উৎকর্ষের চূড়ায়, তখন সমাজে শুরু হয় সামাজিক মাধ্যম।

সমাজে যখন আরো উন্নতির দিকে ধাবিত হয়, তখন মানুষ আরো অধিক সমমনা মানুষের সাথে জোটবদ্ধ হতে চায়। একচুয়েল জগতের তথ্য নিয়ে ভার্চুয়েল জগতেও তারা পদার্পণ শুরু করে। অতপর শুরু হয় আপনি থেকে তুমি আর শেষার্ধে তুই। এ ভার্চুয়েল জগতের বন্ধুত্বের মধ্যে একাংশ হৃদ্যতায় পূর্ণ হৃয, আরেকাংশ পূর্ণ হয় খানিক বিশ্বাস, খানিক শটকা, সন্দেহ আর সংশয়ের মাঝে। কদাচিৎ দেখা হয়। আড়ম্বরে, অনাড়ম্বরে।

সমমনা মানুষ, বন্ধুদের সাথে ভালো সময় কাটাবে বলে মানুষ ভার্চুয়েল গ্রুপেও মানুষ একত্রিত হয়, সমাজবদ্ধ হয়, “গ্রুপ” এ গ্রুপিত হয়;
থাকে অতি উত্তেজিত, রোমাঞ্চিত, শিহরিত, আবেগতাড়িত!

এদিকে আবার কিছুদিন পর, সে সমমনাদের প্লাটফরমেও তৈরি হয় ভালো খারাপ ধারণা, এলিট-নন-এলিট ধারণা, ধনী-গরীব বা অভিজাত-অনভিজাত ধারণা।
এ ধারণা বৃহত্তর সমাজ বা গ্রুপকে বিচ্ছিন্ন করে তোলে; ভালো বলে অনেককে যুক্ত করলেও একসময় তারা “ভালো”দের আলাদা করতে গিয়ে আস্তে আস্তে তৈরি হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপদলে বিভক্ত হয়।

এ পর্যায়ে মানুষ হয়ে পড়ে কিছুটা একচোখা, একরোখা, একপেশে,
কিছুটা orthodox!
তাদের নিজস্ব উপদলে তারা মগ্ন থাকে; যত ক্ষুদ্রই হোক, যত আলোচিত-সমালোচিতই হোক, নতুস দল গড়ার স্বপ্নেই যেনো বিভোর থাকে একেক স্বপ্নবাজ! একসময় এ স্বপ্নে উর্বরতা দেয় আঞ্চলিকতা, একসময় নিজস্ব ধ্যানধারণার বা ‘বিত্ত’এর মানুষেরা এবং এক সময় আরো কিছু সংকীর্ণতা!
এরপর শুরু হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা। একসময় যাদের সাথে ছিলো উঠবস, তারাই পরবর্তীতে হয়ে পড়ে অদেখা, অস্পৃশ্য এমনকি শত্রুর মতোও! কী অদ্ভদ! কি বিচিত্র!
এভাবে ভাঙ্গা-গড়া থেকে সম্পর্ক রূপ নেয় গড়া-ভাঙ্গায়!
হৃদ্যতা, আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রূপ নেয় প্রতিহিংসা, দম্ভ, আত্মম্ভরিতা, পরশ্রীকাতরতা, শত্রুভাবাপন্নতা এবং ন্যাক্কারজনক প্রতিদ্বন্ধিতায়।

কী নিদারুন বাস্তবতা!
সম্পর্কের কী বিচিত্রতা! তিক্ততা!
এ দৃশ্য গ্রাম, শহর, নগর, সর্বত্র!

এর শেষ কোথায়?
শেষ কী হবে আদৌ?!
জিজ্ঞাসিব জনে জনে।

তবে এ কথা সত্য যে, প্রত্যেকে এক সময় ভাবে, আহা, যদি একসাথে
আগের মতো থাকা যেতো!
কিন্তু এক অদৃশ্য আত্মম্ভরিতা বা অহংবোধ হয়তো তাদের দূরে ঠেলে দেয়, বহুদূরে…..

বিচ্ছিন্ন ভাবনা


নাজিম
মার্চ ১২, ২০২২