ইতিহাসের প্রতাপশালী, প্রতাপশালীর ইতিহাসঃ সমকালীন ভাবনা

Sep 12, 2020 | গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস | 0 comments

এককালে যে জায়গায় আলো ছিলোনা, আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে সেখানে আলোকিত প্রাঙ্গণ; অঘাট ঘাট হয়, আর…
কেউ সম্পদ-সম্পত্তির খুব আস্ফলন বা উল্ল্ফন, কেউ দাবি করে ভাগ্যের আবেদন- কেউ নিজেদের চেষ্টাকে তুলে ধরেন; আর অন্যদিকে, একসময়ের নবাব, প্রভাব সময়ের বিবর্তনে পথের ফকিরও হয়ে পড়ে।
তখন নিজেদের ভুল, কারো অভিশাপ কিংবা ভাগ্যের নির্মম পরিহাসকেই দায়ী করেন, আপেক্ষিকতায়।  ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা নাকি, ”ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেন না”..

সেদিন একজন সাবেক বড়-জমিদারের বর্তমানে নাজুক অবস্থায় পড়া ৩য় প্রজন্মের একজন উত্তরসূরিকে দেখলাম; খুব তাচ্ছিল্য, অবহেলা পাওয়া সেই জনের কিঞ্চিৎ পরিচয় দেয়াতে আমার সাথে থাকা সফরসঙ্গী তো তাজব! বললাম, সময়ের আঙ্গুর অসময়ে রূপ-রসহীন ‘কিসমিসে’ পরিণত হয়! ‘grapes turn to raisin”!
আবার, তার বিপরীত চিত্রও দেখবেন আশেপাশেই।

বিশ্ব অর্থনীতির ঘূর্ণায়মান চাকায় কেউ নিচে পড়লে অন্য কেউ উপরে উঠবেই- এই চিরায়ত সত্য যত আগে বুঝা যায়, জীবন ও জগৎ সম্পর্কে আপনার আমার ধারণা তত স্বচ্ছ হয়।

দেখবেন, হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে নব্যধনী আমাদের  চারপাশ ছেয়ে গেল যেন! চেষ্টা-সাধনায় মানুষ বড় হবেন, উপরে উঠবেন; কিন্তু কিছু মানুষের এমন উল্ল্ফন হয়ে পড়ে চোখে পড়ার মতো, সবার কাছে অতি-পরিচিত হতে এমন সব কান্ড করে বসবে, আপনি তা দেখে কি করবেন, ভেবে পাবেন না…

কিছু এলাকায় দেখবেন, অন্য স্থান থেকে আসা লোকজন নিজের সদ্য করা ‘তাজমহল’ প্রদর্শন করতে মেজবানসহ কত আয়োজন করে, তার ইয়ত্তা নাই! নব্য বাংলাভাষা শেখা বিদেশি যেমন পত্রিকায় ”মন্ত্রীরাও হিমশিম খাচ্ছে” পড়ে নিজে ও হিমশিম কেনার জন্য দোকান খুঁজে, তেমনি সদ্য লুঙ্গি থেকে উত্তরণ করা সেসব নব্য ধনীও ধূতি-কোট-স্যুট থেকে শুরু করে কত বাহারি পোশাকই সুচারুভাবে পড়তে না জানলেও পরিধান করতে চায়!!

এক অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম- বাংলার এক সময়ের রাজার ৪র্থ/৫ম উত্তরসূরি জুতা পালিশ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন- খবরটির সত্যতা না জানলেও এটি সত্য উত্থানের পর পতন, পতনের পর উত্থান- এটিই সভ্যতার ধর্ম, যদি তারা জানতেন! জুতা পালিশের কাজকে কখনো ছোট করে দেখছি না, কোন কাজই ছোট নয়- তবে তাদের এক সময়ের দম্ভের কথা ভেবে চলে আসে বিষয়টি!

‘Nothing is permanent, but change’ পরিবর্তনই স্থায়ী- এটা আমরা বুঝি কম! দিনের বেলায় কেউ হয়ত ভাবেন, এভাবেই আঁধারহীন রাত থাকবে, আর অমাবস্যার অমানিশার, রাতের আঁধারে দিনের আগমন- কিন্তু কেউ কদাচিৎ ভুলে বসতে পারে- স্বাভাবিক।

অর্থনীতির এক অমোঘ সত্য সূত্রে, যে কোন অতি-ধনী তাদের দম্ভ-অহংকার, প্রকৃত দানহীনতা,অপচয়, চেষ্টার কমতি, কর্মে অবহেলা, কারো অভিশাপ কিংবা ভাগ্যের লিখনে এক সময়ের প্রতাপশালী নিরুত্তাপ, বিত্তহীন,  নিঃস্ব হয়ে পড়ে, প্রায় ক্ষেত্রেই।

ভবিষ্যৎ আশঙ্কার কথা আমাদের কি মনে থাকে?? হিরো জিরো হওয়ার আশংকা কমই করে! কিংবা মধ্যযুগীয় ‘Free Will আর Destiny’ এর মধ্যকার দ্বন্ধের কথা কয়জনের মনে থাকে?

তবে জিরো থেকে হিরো হওয়ার আশা, মোটিভেশন নিয়ত, অজস্র…
আশার ভেলায় ভাসি সমুদ্র-ভবে…..
But, pride goes before fall.


—-
মোঃ নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম
nazim3852@gmail.com
১৩-১২-২০১৮

লেখাটি লিখেছেন