“আয়না দিয়া চাইয়া দেখি পাকনা চুল আমার”…
কোন্ রাত পার হয়ে ভোর হবেনা -সেটা জানেননা বলেই দীর্ঘদিন বাঁচার স্বপ্নসৌধ রচনা করে মানুষ;
সে আশা করে, রাত শেষে আগামীকালের প্রভাতের সাথে তার সাক্ষাত হবে, কচিকাঁচা, সতেজ ভোর পৌঁছাবে মধ্যাহ্নের তেজদীপ্ত যৌবনে; কিংবা মধ্যবয়সী ঝিমিয়ে পড়া অপরাহ্নের সাথে মিতালি ঘটবে শান্ত স্নিগ্ধ গোধুলির, tranquil twilight এর!
কিন্তু পথোমধ্যেই যাত্রাভঙ্গ হয় কত যাত্রীর, কিংবা সঙ্গী-সাথী-সারথির! কখনো দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়ার মন্থর-সন্ধ্যায় পৌঁছে ছন্দহীন শেষের কবিতা গেয়ে বলে উঠে- “রাত পোহাবার কত দেরি, পাঞ্জেরি?
কিংবা অযুত নিযুত সাহস-শক্তি সঞ্চয় করে বিদ্রোহী কবির ভাষায় গেয়ে উঠে-
“লঙিতে হবে রাত্রি নিশীতে
যাত্রীরা হুশিয়ার।”
হ্যাঁ, লঙিতেই হবে, এ-ই তার প্রতিজ্ঞা।
কিন্তু মুহূর্তেই “নেই” হয়ে যেতে পারে যে নিঃশ্বাস-
পলকেই “হীন” হয় যখন বাঁচার আশা-বিশ্বাস,
তখন আরো একটি হিজরী বছর, আরো এক দরিদ্রের হজ্জ্ব (জুমাবার) শেষ হওয়ার পথে- এ তথ্য ক’জনে রাখি?
ক’জনে মনে রাখে সেসব ইতিহাস, ক’জনে করে, কত প্রান্তর?
কত বদর-উহুদ-খন্দক-কারবালা?
ইমাম হোসাইনের যন্ত্রণায় দীর্ঘশ্বাস, কিংবা কে পড়ে হোসাইন-পুত্র ৬ মাসবয়সী আলী আসগরকে নৃশংস হত্যার বিষাদ সিন্ধু?
সব বাদ দিলেও কয়জনই বা কোন মুহুর্তে সে বিচ্ছেদ বা যবনিকা পাতের কথা স্মরি?
সে কথা খুব কঠিন ঠেকে -জানি….
তবুও,
“যার বিচ্ছেদ মুহূর্তে মৃত্যু,
যার নিদ্রাস্থল মাটির শয্যা,
যার প্রিয় সঙ্গী সাপ-বিচ্ছু,
যার সহচর মুনকার-নকীর,
যার বিশ্রামাগার ভূগর্ভ,
যার প্রতিশ্রুতি স্থান কিয়ামত এবং
জান্নাত বা জাহান্নাম যার অবতরণস্থল,
তার জন্য মৃত্যু ব্যতীত অন্য কিছু চিন্তা করা,
অন্য কিছুর আলোচনা মোটেই শোভনীয় নয়।”
(সূত্র: মৃত্যুর আগে ও পরে, ১ম অধ্যায়:
লেখকঃ ইমাম গাজ্জালী রহঃ)
সময় বড় নিষ্ঠুর যাঁতাকলে ফেলে আমাদের। Andrew Marvel এর ভাষায়, ‘At my back, I always hear/ Time’s Wing’d chariot hurrying near”..
বিদগ্ধ লেখক হুজ্জাতুল ইসলাম
হযরত ইমাম গাজ্জালী (রঃ) তাঁর “মিনহাজুল আবেদীন” গ্রন্থেও লিখেছেন, “…. তার উপর আবার মানুষ খুব দুর্বল, কালচক্র কঠিন; দিনের কাজ বিস্তর; কিন্তু অবকাশ কম; কর্তব্যকর্ম অনেক, কিন্তু পরমায়ু ক্ষীণ। এই ক্ষুদ্র সময়ের মধ্যে ইবাদত আর দ্বীনের কাজ যতোটুকু যাই-বা হচ্ছে, তাতে ত্রুটির অন্ত নেই। …… সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে প্রতি পলে পলে।”
যৌবন বৃদ্ধে শ্রান্ত হয়, সৌন্দর্য বার্ধক্যে, কালো চুল সাদা বা ধূসর রঙে রঙিন হয় সর্বদা…. সময়ও যেন বিস্ময়ে সে পংক্তি আওড়ায়- “আয়না দিয়া চাইয়া দেখি পাকনা চুল আমার”…
—
মোঃ নাজিম উদ্দিন
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
#undefined #thoughts!