আগে চিনি নিজের গাঁও: ঐতিহ্যের রাউজান

Feb 4, 2022 | ভ্রমণ বিচিত্রা | 0 comments

View : 70
 

আগে চিনি নিজের গাঁও: ঐতিহ্যের রাউজান: ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া..’

২২ জুন ১৯৩২। বঙ্গদেশীয় পুলিশ বিভাগের ইনসপেক্টার জেনেরালের নির্দেশানুযায়ী সাঁটানো হয়েছে বিজ্ঞাপন। ছবিতে প্রদর্শিত ফেরারি আসামিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ হাজার টাকা পুরষ্কার প্রদান করা হবে। ব্যক্তিটির পরিচয়ে অন্যান্য তথ্যের মধ্যে আরো জানানো হয়েছে, তাঁর নাম সূর্যকুমার সেন ওরফে মাস্টারদা, গ্রাম নওয়াপাড়া, থানা রউজান, জেলা চট্টগ্রাম, বয়স প্রায় ৪০ বৎসর.. ইত্যাদি।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বস্থানীয় বীরপুরুষ মাস্টারদা সূর্যসেনের ব্যাপারে কথাগুলো বলতে বলতেই মাস্টারদার জন্মস্থান নোয়াপাড়া পাড় হচ্ছিলাম; ইনশার রাউজান সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেশ বাড়লো। ব্রিটিশ বেনিয়াদের অস্ত্রাগার লুট এবং পরবর্তীতে ফাঁসিতে আত্মদানের মাধ্যমে উপমহাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় বিপ্লবী মাস্টারদা তো আছেনই, আরো কত প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তিত্বের জন্মস্থান রাউজান- বলে একে একে জানালাম কবি নবিনন চন্দ্র সেন, দৌলত কাজীসহ অনেকের নাম।

সংগ্রামী সূর্যসেন যখন ব্রিটিশ পুলিশের আড়ালে থেকে কাজ করছিলেন, তখন, ১৯৩২ সালেই রাউজানে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে মতান্তরে ২ বা ৩ দিন অতিথি হিসেবে থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতির উর্বর ভূমি রাউজানকে সমৃদ্ধ করছিলেন বিদ্রোহী কবা কাজী নজরুল ইসলাম। অনুষ্টানস্থল ছিলো ঢেউয়া হাজি পাড়া। একই সময়ে সংবাদ প্রকাশ, রাউজানের কৃতী সন্তান, স্বাধীন বাংলার প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক সাহেবের ‘একুশে পদক’ প্রাপ্তির কথা।
পাশে ছোট নদী, ঘাটে বাঁধা নৌকা, সবুজ ধানক্ষেত, বালকদের খেলাধুলা এসব দেখতে দেখতে
কখন যে গাড়ি রাউজানের অন্যতম প্রসিদ্ধ স্থান আজিমের ঘাট এলাকায়
পৌঁছালো, তা বুঝতেই পারিনি ততটা। এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীর পাড়ে নির্মিত শিশুপার্ক, বেড়িবাঁধ ইত্যাদি যেন এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করলো। ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দু পা ফেলিয়া..’ কথাগুলো যেন আমাদেরও ইঙ্গিত করে। কত কাছেই কত সুন্দর প্রাকৃতিক রূপ লাবণ্য! অথচ কখনো সময় করে যাওয়াই হয়নি।
তারপর শুরু ক্ষণিকের নৌকা ভ্রমণ।
এ পাড়ে রাউজান, ওপারে হাটহাজারী – মাঝি এপার থেকে ওপারে পার করতে নেন প্রতিজন ১০ টাকা। কয়েকমিনিটের নৌকাভ্রমণ শেষে নেমে পড়লাম।
হাঁটতে লাগলাম দাদার বড়বোন ওমদা খাতুনের বাড়ির সড়কে। পথেই জেলেপাড়া। ছোট খেঁজুর গাছ দিয়ে বানানো জলঘাট দিয়ে নামছে কিষাণী। ব্রিকসড়ক দিয়ে হেঁটে পৌঁছালাম আবদুস সালাম চাচা প্রতিষ্টিত আবদুস সালাম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। পাশে কবরস্থানে শায়িত দাদার বড়বোন ওমদা খাতুন, মরহুম সেকান্দর সারাং, বশর চাচা, চাচী সহ অনেক স্বজন।
চাচাদের ঘর চিনালাম ইনশাদের। চাচার সন্তানেরা সবাই শহরে। প্রায়ই আসেন গ্রামে। সে বাড়ি পাড় হয়ে ছোট সহজগম্য সাঁকো এবং সরু সড়ক পার হয়ে পৌঁছালাম ফুফুর বাড়ি।

ফেরার পথে কাকতাড়ুয়া দেখে ইনশার সে কী বিস্ময়! বাবা মরয়ে নেমে পড়লাম কাছ থেকে দেখার জন্য। কিছু ছবিতো তুলতেই হয়।
এভাবে শেষ হলো আজকের ভ্রমণ।
সে এক দারুন অভিজ্ঞতা।

মোঃ নাজিম উদ্দিন

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২