অপরূপ চাঁদ, চাঁদনী রাতে গ্রামে ভ্রমণঃ বিচ্ছিন্ন শব্দমালা
—
(১)
স্রষ্টার সৃষ্টির অপরূপ সৌন্দর্যের একটি পুর্ণিমার চাঁদ। অমাবস্যার ঘুটঁগুটে অন্ধকারের বিপরীতে জ্যোৎস্না রাত বা চাঁদনী রাতের ফকফকা আলো শুধু মন জুড়ায়না, জুড়ায় হৃদয়ও।
সূর্যের আলোর পার্থিব বা দৃশ্যমান উপকারিতা আছে। চাঁদের আলোর ততটা উপযোগিতা নেই৷ যৎসামান্য আছে, তা ভোগের চেয়ে উপভোগ করতে হয় বেশি; দেখার চেয়ে উপলব্ধি করার তাগিদও বেশি। অবশ্য এসব কথার মাঝেও কবিতা খুঁজতে যাবেন কবিতাবিদ্বেষীজনেরা!
বার্ষিক পরীক্ষা শেষে মেয়েকে নিয়ে ছোটবোনের শ্বশুর বাড়ি আনোয়ারার গ্রামের বাড়ি এসে একদিন সে চাঁদের দেখা, স্পর্শ, উপলব্ধি -সবই যেন একসাথে পেয়ে গেলাম।
গ্রামের অনেক মানুষ সন্ধ্যার সময় পাখির মতো ঘরে ফিরে… বনলতা সেনবাবুর ভাষায় এ যেন-
“সব পাখি ঘরে আসে—সব নদী—
ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;”
(২)
এমন চাঁদের হাতছানি বাবা মেয়েকে নিয়ে গেলো গ্রামের সুন্দর সাঁজে, ঝিঁঝি পোকার হৃদয়ছোয়া শব্দে, আঁধারের মাঝে উঁকি দেয়া পুর্ণিমার চাঁদে। মেয়েকে পরিচিত করালাম কিছু গ্রামীণ উপকরণ, প্রকৃতি, প্রতিকৃতির সাথে। তাকে সবসময় বলি, দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ, প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস। আমি নিজেও গ্রামেই বড় হয়েছি। গ্রামের মানুষের জীবন, জীবিকা, আচার আচরণ, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ইত্যাদি বাদ দিয়ে এদেশের মানুস কখনোই এগুতে পারবেনা। তাদের ‘গেঁয়ো’ বলে ছোট না করে, বাংলার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক ভাবা উচিত।
কুইজ্জ্যা, দইরজ্যে, উঁইরজেসহ অনেক কিছুর সাথে পরিচিত হলো সে, জানলো আমাদের শৈশবে ডাকা “চাআন্নি ফঅর” বা চাঁদনী রাতের দৃশ্যের সাথে। সে কী অপরূপ দৃশ্য!
(৩)
আরব একটা প্রবাদ আমাকে খুব নাড়া দেয়। “No is able to make the female a queen except her father…” আসলে তাই। আমিও ভাবি,
সেও যেন বলে – I am a princess not because I have a prince, but because my father is a king.
In fact, we cannot always make huge money, much assets or riches, but we may make memories, memories that can ignite minds lifetime….
(৪)
ক্ষুধার রাজ্যে পুর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো
রুটিইঃ তবু প্রতীক বাদ দিলে সর্বশক্তিমান সুনিপুণ সব সৃষ্টির স্রষ্টা মহান রবের এমন সুন্দর অনিন্দ্য অপরূপ সব সৃষ্টি দেখে মন থেকে উচ্চারিত হয় সে অমোঘ কথামালাঃ
‘আল্লাহ ওই সত্তা, যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান এবং চাঁদকে আলোকময় বানিয়েছেন এবং তার জন্য মঞ্জিলসমূহ নির্ধারিত করেছেন, যাতে তোমরা বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব বস্তু অযথা সৃষ্টি করেননি, তিনি এই প্রমাণসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন ওইসব লোকের জন্য যারা জ্ঞানবান।’ (সুরা ইউনুস : ৫)
‘সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মানজিল, অবশেষে ওটা শুষ্ক বক্র পুরনো খেজুর শাখার আকার ধারণ করে। সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া এরং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা; এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটে।’ (সুরা ইয়াসিন : ৩৮-৪০)।
চাঁদ-সূর্য আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির অন্যতম সৃষ্টি-নিদর্শন। এসব সৃষ্টি দেখে হৃদয় থেকে অজান্তেই ভেসে আসে বিস্ময়- সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি কত সুন্দর!
—
মোঃ নাজিম উদ্দিন
ডিসেম্বর ৮, ২০২২