সেকালের কথা, কিন্তু ‘সেকেলে’ নয়….

Mar 17, 2022 | আত্মউন্নয়ন ও মোটিভেশন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-রাজনীতি | 0 comments

সেকালের কথা, কিন্তু ‘সেকেলে’ নয়….

ভাবছেন, রোজ খুব সকালে আপনার পরিজন বা প্রতিবেশি মসজিদে নামাজ শেষে হাঁটছে, নির্মল বাতাসে প্রাতঃভ্রমণ শেষ করছে, আর আপনি তখন আরামে বিছানায় এলার্ম ঘড়ির কাঁটা আরো এক ঘন্টা পিছিয়ে জয় করে ফেলেছেন সময়কে, বিলাসী ঘুমের পানে আবারো! কী শান্তির ঘুম!
তখনো বুঝেন নি, সকালের স্বর্গীয় বায়ু ভোরে শয্যাত্যাগীর আয়ু স্বাস্থ্যকর রাখছে বহুদিন বাঁচার তরে, আর আপনি, এক দীর্ঘ ক্লান্তির সময় শেষে বয়স্কালে ডাক্তারের ‘নির্দেশে’ অনন্যোপায় হয়ে শুরু করেছেন নিরোগ লাভের আশায় প্রাতহাঁটা!

পাশের ঘরের যে শিক্ষার্থী তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে সকালে অধ্যয়নের জন্য, তাকে আপনি সেকেলে ভাবেন, অন্যদিকে আপনি যত বুদ্ধি সব জড়ো করে নির্ঘুম দীর্ঘরাত পড়ার ‘ভান’ করেন।

তেমনি ‘সেকেলে’ জন যখন সকালে ঘুম থেকে উঠে সব কাজ-পড়া শেষে তার দিনের ঘন্টা তিন-চারেক সত্যিকার উপভোগ-জ্ঞানার্জনে কাটালেন আর ধীরস্থিরভাবে যাত্রা শুরু করেন, তখন আপনাকে তাড়াহুড়া করে ‘স্মার্টলি’ নাস্তা না করেই ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে! বারোটা টা বাজালেন নিজেরই স্বাস্থ্যের, ঘুমের সময় না ঘুমিয়ে, সবচেেয়ে বেশী যখন খাবারের প্রয়োজন, সে সকালের নাস্তাই না করে ; তৈরী করলেন দীর্ঘস্থায়ী রোগ, ‘স্মার্টলি’!

কোন খাবার বা পানীয় দিলেই সাথে সাথে দাড়িয়ে ডান-বাম হাতে খেয়ে / পান করে ফেলেন ‘আধুনিকভাবে’; আর ধর্মমতে বসে কয়েকবারে আস্তে আস্তে খাওয়ার ‘সেকালের’ অভ্যাসটিই কিন্তু বাঁচিয়ে দেয় বিভিন্ন রোগ থেকে, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান তা-ই বলে।

বড়দের সবাইকে সালাম দেয়া, মাথা নিচু করে হাঁটার নির্দেশ পালন, কিংবা ভদ্র ব্যবহারের অন্যথা হলে পড়শি বা বড়জন নিজেই শাস্তি দিত এককালে, ফলে সামাজিক শৃঙ্খলা, সম্মান-স্নেহের ব্যবস্থাপনা ছিল অনন্য, যা সামাজিক ব্যাধী, ইভ টিজিং সহ বদ অভ্যাস রুখে দিত। আধুনিকমনা সমাজে সব ভাল অভ্যাস পুরোপুরি উঠে যায় নি সত্য, কিন্তু আপনার নিজের ছেলেকে শুধু নিজেই শাসন করবেন আর অন্যেরা শাসন করলে “সে কি কারো খায় না পড়ে..” প্রকৃতির “আদর” নষ্ট করবে আপনার সন্তানকে।

সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফেরার বাবা-মা’র নির্দেশ মেনে বাড়ি ফেরা, খুব ছোট বেলায় সন্ধ্যায় যার যার দুয়ারে ‘আল্লা, বাবারে ফানা দে…” ( ‘আল্লাহ বাবাকে রক্ষা কর”..এরূপ প্রার্থনার শিক্ষা আজকের মডার্ন তরুণ বা শিক্ষার্থীর কাছে ‘পশ্চাদপদতা’ ঠেকতে পারে, কিন্তু এর বিপরীতটাই ভয়ানক নৈতিক বিপর্যয়, সামাজিক অবক্ষয় বা ‘কথিত গ্যাং বা গ্রুপ’ সৃষ্টির মূল সময়। আলোর বিপরীতে যা হয়!

সবসময় গাছের মগডালেই সবকিছু নয়, শিকড়েও আছে অনেক সার-মজ্জা, অনেক গুণাগুণ।
সব ‘#সেকালের’ অভ্যাস কিন্তু ‘#সেকেলে’ নয়, বৎস!


মার্চ ১৭, ২০২২

লেখাটি লিখেছেন