জুমা দিবসের ভাবনা-১৫: অহংকার পতন ও ধ্বংসের মূল

Nov 22, 2024 | গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস, ধর্ম, জীবন এবং জীবনভাবনা | 0 comments

View : 12
 

জুমা দিবসের ভাবনা-১৫:
অহংকার পতন ও ধ্বংসের মূল

অহংকারঃ
অহংকার এমন একটি বিশেষণ যা শুধুমাত্র মহান আল্লাহরই প্রযোজ্য; তিনি কোন নবী রাসূল এমনকি সৃষ্টিকে এ গুণটি দেননি, বরং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের জন্য অহংকার একটি দোষ, মহা পাপ।।
আধুনিক সমাজে রূপ সৌন্দর্য ধন সম্পদ জ্ঞান সন্তানাদি বংশপরিচয় সবকিছু নিয়েই মানুষ অহংকার করে; যেন অহংকার করলেই তার ব্যক্তিত্বের গরিমা ফুটে উঠে!

আত্মগৌরব বা অহংকার করা শুধু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে ব্যক্তি এ গুণ নিয়ে আল্লাহর সঙ্গে টানাটানি করে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন; তার প্রভাব, প্রতাপ, প্রতিপত্তি নস্যাৎ করে দেন এবং তার জীবনকে সংকুচিত করে দেন।

কেন মানুষ অহংকার করে?ঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করে, যখন সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে।’ (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ৬-৭)

কোরআন ও হাদিসে অহংকারীদের নিয়ে উক্তিঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সে (ইবলিশ সম্মানিত আদমকে সিজদার মাধ্যমে সম্মান করতে) অস্বীকার করল এবং অহংকার করল, পরিণতিতে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩৪)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিনটি বস্তু মানবের ধ্বংসের কারণ—প্রবৃত্তি বা নফসের পূজা, লোভ ও আত্ম-অহংকার। তিনি আরও বলেন, ‘অহংকারই হলো সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক।’।

কোরআনে হুশিয়ারীঃ
অহংকারী সম্পর্কে কোরআন কারিমে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলেন, ‘পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণ করো না, নিশ্চয় তুমি ভূপৃষ্ঠকে কখনোই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি পর্বত সমান হতে পারবে না।’ (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৭)

অহংকারীদের শাস্তি ও চূড়ান্ত পরিণামঃ

পবিত্র কোরআনে এসেছে,
অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণে মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর নিচু করো, নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৮-১৯)

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অহংকার আমার সম্মানের উত্তরীয় আর সম্মান হচ্ছে আমার গৌরবের পোশাক; যে ব্যক্তি এ দুটির কোনো একটি নিয়ে আমার সঙ্গে টানাটানি করে, আমি তাকে আজাবে নিক্ষেপ করি।’ (আবু দাউদ: ৪০৯০)
প্রিয় নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসলিম: ৯১)

দুনিয়াতে অহংকারের পরিণতি হলো লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। যার অন্তরে যতটুকু অহংকার সৃষ্টি হবে, তার জ্ঞান ততটুকু হ্রাস পাবে। যদি কারও অন্তরে অহংকার স্থিতি লাভ করে, তবে তার জ্ঞানচক্ষু অন্ধ হয়ে যায়, বোধশক্তি লোপ পায়; সে অন্যের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। তার চেহারায়, আচরণে, চলনবলনে ও কাজকর্মে অহংকারের দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত: ৪০২৯)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামিদের বিষয়ে খবর দেব না? তারা হলো বাতিল কথার ওপর ঝগড়াকারী, হঠকারী ও অহংকারী।’
(বুখারি, মুসলিম, মিশকাত: ৫১০৬)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।

——————
সংগ্রহ ও সংকলনে~~~~
মোঃ নাজিম উদ্দিন
নভেম্বর ২২, ২০২৪

(পুনশ্চঃ “জুমা দিবসের ভাবনা” লেখাগুলো কারো প্রতি ইঙ্গিত করে নয়। প্রায় সব সংকলন করা হয়েছে। নিজের উপলব্ধি ও সংশোধনের জন্য মাত্র)