উপদেশ অপেক্ষা দৃষ্টান্ত শ্রেয়

Dec 6, 2020 | গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস | 0 comments

উপদেশ অপেক্ষা দৃষ্টান্ত শ্রেয়

——-

উপদেশ অপেক্ষা দৃষ্টান্ত শ্রেয়: Example is better than precept- বাক্যটি স্বতঃসিদ্ধ। জীবনে অনেক উপদেশ আমরা দৃষ্টান্ত থেকে পেয়েছি, হয়েছি সমৃদ্ধ।

দেখবেন, কখনো কাউকে দু’টাকার বাদাম কিনা খাওয়ান না, তেমন মানুষকে দেখবেন, বন্ধুবান্ধব বা পরের জন্য ব্যয় করার উপদেশ দিতে!

কিছু (কিছু মানে কিছু-ই) চিকিৎসক দেখবেন, নিজে সিগারেটের অভ্যাস বহাল রেখে রোগীকে চিরতরে সিগারেট বন্ধ করার পরামর্শ দেন!

নিজে পাঁচ ওয়াক্ত “ফরজ” নামাজ পড়ে না তেমন ‘পরহেজগার’ দেখবেন- শুক্রবার কোন কারণে মসজিদে পৌঁছাতে দেরী হলে বলে উঠবে-“জুমার দিন প্রথম কাতারে বসলে….সওয়াব”! কেমন লাগবে আপনার তখন!

অনেক ‘সমাজকর্মী’ ‘পরমহৈতষী’কে দেখবেন, যারা ছাত্রকালীন সময়ে অনেকদিনের দেনা পরিশোধ করেননি; আজ স্বাবলম্বী হওয়ার পরও সে অর্থ পরিশোধ করে না; তবে সমাজের উন্নয়নে এখন রাত-দিন “দান” করার চেষ্টায় কিংবা ফেসবুকে সমাজকর্মের মহড়া দিতে তাদের জুড়ি নাই!

অনেক সমাজবাসীকে দেখবেন, কেনার সামর্থ্য থাকার পরও দশজনের হক ‘ভোগ’ করতে আনন্দ পান (তোষামুদিদের বদান্যতায়)-আর বাইরে দানের মহড়া দেখাতে ব্যস্ত!

নিজে ১০ টাকা অনুদান দেন না তেমন মানুষ কোন সামাজিক অনুষ্টানে বাজেট বড় করে অন্যের ঘাড়ে বড় অংকের “চাঁদা” তুলে দিতে সিদ্ধহস্ত!
অতএব, সাধু সাবধান!

কোন আত্মীয় পরিজনের সামাজিক অনুষ্টানে নিজে উপস্থিত থাকেন না তেমন “আত্মীয় ” দেখবেন নিজের ঘরের কোন আয়োজনে সব আত্মীয়ের উপস্থিতি খুব আশা করেন- অন্যের সামর্থ্যের কথা বাবেচনা ব্যতিরেখে!

নিজে ফোনে কালে ভাদ্রেও কারো খবরাখবর রাখেন না, তেমন মানুষ দেখবেন আপনি কল করামাত্রই উল্টা প্রতি-উত্তরে বলবেন, ভাই, কেমনে আমাদের কোনদিন ফোন করেও খবর নেন না”?! ভাই, কলটাওতো তিনিই করেছেন!

কত কী ঘটছে চারপাশে!

কী হওয়ার কথা আমাদের অভ্যাস?!

একদা এক দরিদ্র মাতা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর নিকট এক আর্জি নিয়ে হাজির হলেন। সে মহিলার ছেলে মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করতো এবং প্রতিদিনই তার মায়ের কাছ বায়না করত মিষ্টি খাবার জন্য। অভাবের সংসারে দরিদ্র মাতার পক্ষে প্রতিদিন মিষ্টি যোগাড় করা ছিল অসম্ভব। এর সমাধানের জন্য তিনি নবীজির কাছে গেলেন যাতে তিঁনি তার ছেলেকে মিষ্টি খেতে বারণ করেন। নবীজি বিস্তারিত শুনে পরের দিন আসতে বললেন। মহিলা পরের দিন নবীজির কাছে আসলে তিনি তাকে আবারো পরের দিন আসতে বললেন। এই ভাবে পর পর কয়েক দিন আসার পরে নবীজি দরিদ্র মাতার ছেলেটিকে বললেন, তুমি আর তোমার মায়ের কাছে প্রতিদিন মিষ্টি খাবার বায়না করো না। ছেলেটি নবীজির কথায় সায় দিলো এবং মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিলো।
দরিদ্র মাতা তার ছেলের মিষ্টি খাবার বায়না থেকে রেহাই পেলেও একটি কথা তার মনে ঘুরপাক খেতে লাগলো। নবীজি কেন তাকে এই সামান্য কথাটি বলার জন্য বারে বারে আসতে বললেন। একদিন তিনি আবার নবীজির দরবারে হাজির হয়ে তার মনের মাঝে উদয় হওয়া প্রশ্নটি করলেন। “নবীজি আপনি আমার ছেলেকে মিষ্টি খেতে বারণ করায় সে এখন আর মিষ্টি খাবার জন্য বায়না ধরেনা। তবে এই কথাটি বলতে আপনি কেন এত দিন সময় নিলেন?” নবীজি কি উত্তর দিয়েছিলেন তা আপনাদের সবার জনা।

নিজে যা করেন না, তা কখনো অন্যকে করার উপদেশ দিতেন না প্রিয় নবীজি।
বড় বড় কথা বলা বা লোকদেখানো যখন তাদের নিয়মিত অভ্যাস, তখন
“Speak less than you know
Have more than you show.”
নাট্যকার Shakespeare (Hamlet নাটকে বর্ণিত) এ কথাগুলোর মাঝেও সে একই শিক্ষা, একই সুর!
তবুও কী আমরা মানতে চাই?


মোঃ নাজিম উদ্দিন

লেখাটি লিখেছেন