শ্রদ্ধেয় মাওলানা হাফেজ আহমদ হুজুরঃ অনেক ভাল থাকুন, সবসময়

Jul 10, 2021 | ধর্ম, জীবন এবং জীবনভাবনা | 0 comments

Post View : 8
 

শ্রদ্ধেয় মাওলানা হাফেজ আহমদ হুজুরঃ অনেক ভাল থাকুন, সবসময়

*****
আমাদের মক্তবে অধ্যয়নের সময়ে বাল্যবেলায় যে ক’জন শ্রদ্ধেয় হুজুর বা ধর্মীয় শিক্ষক আমাদের কোরআন শিক্ষাসহ ধর্মীয় শিক্ষাদানে করেন, হাফেজ আহমদ হুজুর তাদের মধ্যে অন্যতম স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।

শ্রদ্ধেয় নুরুল ইসলাম হুজুর (বানু হাজির বাড়ি), ইসহাক হুজুর, ফেনির হুজুর (সে নামেই সবাই ডাকতাম)। শিক্ষাদানে শৈশব আলোকিত করেছেন মৌলানা আবদুল বারী, মৌলানা আবদুল কুদ্দুস, মৌলানা আবদস সালাম, মরহুম মাওলানা এখলাস হুজুর, মৌলানা ইউসুফ, হাফেজ মহসীন প্রমুখ। শ্রদ্ধার সাথে উনাদের স্মরণ করছি।

আমরা রাউজান মোহাম্মদপুরে তৎকালীন মক্তবে (বা তৎকালীন ভাষা ”ফন্না”) পড়েছিলাম সে ছোটবেলায়। তখন সকালে সূর্য ওঠার আগেই পৌঁছাতে হতো মক্তবে।
কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিলো সেসব দিন।

শ্রদ্ধেয় হাফেজ আহমদ হুজুরের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালি। তবে তিনি থাকতেন আমাদের বাড়ির অদূরে রমজান আলী হাট সংলগ্ন মঙ্গলখালীতে। সেজন্য আমরা অনেকেই মঙ্গলখালীর হুজুর বলেও ডাকতাম।

আহমদ হুজুরের মক্তব পাঠদানে ছিল বিশেষ সাপ্তাহিক রুটিন ব্যবস্থা। সারা সপ্তাহে কোরআন পড়া শেখানো যেমন থাকতো, তেমনি থাকতো বৃহস্পতিবার থাকতো নামাজ শিক্ষাসহ প্রয়োজনীয় সূরা-দোয়া-দরুদ শেখানোর বিশেষ ব্যবস্থা। প্রথমে তাত্ত্বিক বিষয়গুলো শেখানোর পর দাড়িয়ে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের ব্যবহারিক শিক্ষা দিতেন সবাইকে। দোয়া কুনুত মুখস্থ করা ছিল আমার জন্য খুব কঠিন; বেশ কয়েকবার এটা স্মরণে রাখতে না পারার ব্যর্থতায় বেত্রাঘাত সয়েছি বহুবার।

লম্বা বেত, গম্ভীর ভাব নিয়ে অনেকটা বেরসিক বদনে দুদিকে চলার সে নিরলস পরিশ্রমেও ক্লান্ত হতেন না আমাদের প্রিয় শ্রদ্ধেয় হাফেজ আহমদ হুজুর। তবে মাঝেমধ্যে হাসি ও আনন্দে মুখরিতও থাকতেন।

তবে সামাজিক কু-প্রথা কিংবা অশ্লীলতার বিরূদ্ধে হুজুরের ছিল কঠোর অবস্থান। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাজারে (কাছের রমজান আলী হাটে) যাওয়ার ব্যাপারে ছিল এক অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা; আর সন্ধ্যার পর কারো বাজারে যাওয়া ছিল অনেকটা শাস্তিযোগ্যও। চায়ের দোকানে বসে কিছু খাওয়া তো অনেক দূরের।

তবে, আনন্দ, প্রণোদনা আর বৈচিত্রেও ভরপুর ছিল সে সব দিনগুলো; ভালো দিন হিসেব করে অনেকে নতুন ছিপরা নিত, কেউ আমপারা নিত, কেউ বা পদোন্নতি পেয়ে কায়দা ছিপরা নিতো। আর্থিক সামর্থ্যভেদে পরিবারের পক্ষ থেকে মক্তবে পাঠানো হতো টিনের বক্স করে মুড়ি, খই, মোআ, কলা ইত্যাদি। মক্তবে সে দিনটি থাকতো এক অপেক্ষিত, কাঙ্খিত। আর সর্বোচ্চ পদোন্নতি যেমন পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শুরু করা বা প্রথমবার কোরআন পড়ে সমাপন (বাল্যবেলার ভাষায় ‘কোরআন খতম’) উদযাপিত হতো আরো আড়ম্বরে; মুড়ির সাথে থাকতো হয়তো জিলাপি, মিষ্টি, পেরা (বিশেষ মিষ্টান্ন) ইত্যাদিও।

আর সেদিন হুজুর থাকতেন খুব ভাল বা খোশমেজাজে; হয়তো তাঁর কঠোর নীতি, সাধনা ও প্রচেষ্টার চূড়ান্ত লক্ষ্য সেটাই থাকে; হয়তো তিনি তখন তৃপ্ত হতেন প্রিয় নবীর সে উল্লেখযোগ্য হাদিছ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন- “তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে নিজে কোরআন পড়ে এবং অন্যকেও শেখায়”।

সাদাসিদে চালচলনে সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হুজুর সকালে মক্তবে পড়ান্রর পাশাপাশি রমজান আলী হাটে একটি চায়ের দোকান চালাতেন। করতেন কঠোর পরিশ্রম।

সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী মরহুম আলহাজ্ব এম, এ সালাম প্রধান পৃষ্টপোষকতায় পরিচালিত তৎকালীন মক্তব তৎকালীন রাউজান মোহাম্মদপুর ফোরকানিয়া মাদ্রাসা নামে (পরবর্তীতে মোহাম্মদপুর স্যাটেলাইট স্কুল ও এমএ সালাম ফ্রি ফাইডে ক্লিনিক) এ পড়ানোর বেশ ক’বছর আহমদ হুজুর জীবন জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান।

সম্প্রতি গ্রামের বড় ভাই ফোরকান ভাইয়ের সহায়তায় হুজুরের মোবাইল নং নিয়ে যোগাযোগ করার সুযোগ হয়েছে। তিনি খুবই খুশী হয়েছেন প্রায় ২ যুগ পর কথা বলতে পারায়। সেই আগের আন্তরিকতার কিছুই কমেনি, কমেনি আগের মতো পরিবারের সকলের কুশলাদি নেয়ার হৃদ্যতাও। দেশে আসলে সাক্ষাত হলে সামনাসামনি সালাম করে দোয়া নেয়ার প্রত্যাশায় আছি।

আল্লাহ শ্রদ্ধেয় হাফেজ আমহদ হুজুরকে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু দান করুন।


মোঃ নাজিম উদ্দিন
১০ জুলাই ২০২১