লেখার শিরোনাম- জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসঃ প্রসঙ্গকথা

Sep 7, 2020 | গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস | 0 comments

Post View : 4
 

এক সময়ের বাংলা চলচ্চিত্র অভিনতা ইলিয়াস কাঞ্চন। ছোটবেলায় দেখা অনেক চলচ্চিত্রে নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন অনেক সিনেমায় শেষ দৃশ্যে ভিলেন সাথে মারপিঠ করে জয়লাভ করার দৃশ্য অনেক, কিন্তু বাস্তবে ঢাকাই সিনেমার নায়কদের ভূমিকা কতটুকু
সে প্রশ্নের জবাবে ইতিবাচক চিত্র আজ কিছুটা দেয়া যায়।

সড়ক দুর্ঘটনায় অতি আপনজন হারানোর পর থেকে বাংলাদেশে গত একযুগেরও অধিক সময় বিভিন্নভাবে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন করে দেশব্যাপী সচেতনতা তৈরীর কাজে সফল ব্যক্তিত্ব ইলিয়াস কাঞ্চন ও তার সহযোদ্ধাদের দীর্ঘ পথচলার ফসল প্রথমবারের মত অক্টোবর ২২, ২০১৭ জাতীয়ভাবে উদযাপন হতে যাওয়া “জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস”।
অভিনন্দন সংশ্লিষ্ট সকল কুশীলবদের। দুঃখজনক অকালে মৃত্যু বা অঙ্গহানির যন্ত্রণা থেকে রক্ষার সুকঠিন কাজটিতে কিছুটা গতি আসবে -এ আশাবাদ সবার।

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে শনিবার দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রীও সবার সহায়তা কামনা করেন। দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদ্যাপন করা হচ্ছে এবছর। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সাবধানে চালাবো গাড়ি, নিরাপদে ফিরবো বাড়ি।’ প্রতিবছর এ শ্লোগান টা যুগোপযোগী করা হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইউনাইটেড নেশান্স ডিক্যাড অব অ্যাকশান ফর রোড সেফটি ২০১১-২০২০ এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০-এর অনুসমর্থনকারী হিসাবে গোল -৩.৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্যে অ্যাকশান প্লান প্রস্তুত করে বাস্তবায়নাধীন আছে।

একটা সূত্র মারফরত জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের উদ্যোগে প্রথম পর্যায়ে ১ লক্ষ দক্ষ চালক তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জাতীয় পর্যায়ে।
এত কিছুর পরেও, দেশে নিরাপদে সড়কে চলাচলে আমরা ব্যক্তিগত লেভেলে কী কী ব্যবস্থা নিতে পারি? জীবনটা আপনার, আপনার অকাল মৃত্যু বা অঙ্গহানি আপনার ও আপনার পরিবার-স্বজনদেরও প্রভাবিত করবে অনেকভাবে।
সেরূপ সচেতনতামূলক কিছু কাজের দিকে সকলের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টায় কি কি করা উচিত বা উচিত নয়য়- কি কি সাবধানতা অবলম্বন জরুরী, তার কয়েকটা  তালিকাভুক্ত করা যাক, যেমনঃ

১) সড়ক বা রাস্তা পারাপারের পূর্ব হতে পারাপার শেষ না হওয়া পর্যন্ত মোবাইলে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন, যত জরুরি কল হোক না কেন..
২) রিক্সায় করে চলাচলের সময় ফোনে কথা বলা থেকে যতটুকু সম্ভব বিরত থাকা; কথা বলতে হলেও দ্রুত জরুরি কথা শেষ করা।

৩) কোন গাড়িতে উঠা বা গাড়ি থেকে নামার সময় ভাল করে দেখে শুনে নামা।
৪) গাড়ি পার্কিং করার সময় দেখা উচিত গাড়ি পার্কিং এর জায়গাটা ব্লক হয়ে যাচ্ছে কি না। পারলে চোখে পড়ে এমন স্থানে আপনার মোবাইল নং টি সেটে রাখুন। রাস্তা প্রতিবন্ধক হলে কেউ আপনাকে কল দিবে- তা সে কার-সিএনজি হোক বা মোটর সাইকেল হোক।
৫) ভুল সাইডে বা রং সাইডে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকুন। যদি নেহাৎ সড়ক বিভাগ রাস্তার কাজ-সংস্কারে চালাতে অনুমতি দেয়, তখনো লাইট বা হর্ণ দিয়ে চলুন। নচেৎ বিপরীত দিক হতে আসা গাড়ি দ্বারা দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।

৬) রাস্তা পারাপারে প্রথমে ডান পাশে এবং অতপর বামপাশ হতে গাড়ি আসছে কি না দেখে পার হোন। জেব্রা ক্রসিং এর উপর বা ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করুন।

৭) দ্রুত চালানোর অাগে চিন্তা করা উচিত মাত্র কিছু সময় বাঁচানোর জন্য গাড়ির ক্ষতি, নিজের ক্ষতি এবং দুর্ঘটনা হলে চালক বা পথচারী বা উভয়ের যে অপূরণীয় ক্ষতি, নিজের এবং পরিবার-স্বজনের দীর্ঘস্থায়ী সংকট হয়, তার চেয়ে কাছু সময় বেশি লাগার ক্ষতি কিছুই নয়।
মোটর বাইক চালকদের জন্য কথাটি বেশি প্রযোজ্য।

৮) সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয় ওভারটেকিং এবং মোড়ে গতি না কমিয়ে গাড়ি চালানোর ফলে। ওভারটেকিং এর প্রয়োজন হলে বিপরীত দিক হতে গাড়ি কোন গতিতে আসছে তা দেখেই আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে করা উচিত, সবসময়ই ।

৯) মোবাইলে কথা বলে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খুব বেশি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের ফলে এটি ঘটে। প্রাইভেট গাড়ি হলে নিজে তা থেকে বিরত থাকুন আর লোকেল গাড়িে চালক মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় গাড়ি চালালে তা প্রতিরোধ করুন। নিজের জীবনের জন্য সাবধানতা নিজেদেরই অবলম্বন করতে হবে।
১০) আপনি খুব ভাল গাড়ি চালালেও অন্য ‘চালক’ প্রকৃত চালক না হয়ে হেলপার হলে বা খামখেয়ালিভাবে চালালে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আপনারো থাকবে। তাই নিজে সাবধানে চালানোর সাথে সাথে অন্য চালকের অসতর্ক চালানো থেকে নিরাপদে চলাচল করুন।
তাই, নিজে সাবধানে থাকুন, ছোটদের সড়ক চলাচলে সাবধানতা শিখান, সুস্থ থাকুন।

সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী, কিংবা একটি দুর্ঘটনা, সারা জীবনরর কান্না- এ কথাগুলো প্রতিদিন দেখছি বলে হয়ত গুরুত্ব দেই না অনেকসময়!

কিন্তু যে বা যারা দুর্ঘটনায় স্বজনহারানোর বেদনায় ক্লিষ্ট, তারা শব্দগুলোর প্রকৃত অর্থ বোঝেন, কিন্তু তখন কিছু করার থাকে না।

আসুন, নিজেরা সটেতন হই, অপরকে সচেতন করি।

******
মোঃ নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম
nazim3852@gmail.com
২২ অক্টোবর ২০১৭