বুক রিভিউঃ “রাসূলের চোখে দুনিয়া”

Oct 13, 2020 | বইমেলা, বুকরিভিউ, সম্মাননা | 0 comments

বুক রিভিউঃ “রাসূলের চোখে দুনিয়া”

কিছু কিছু বই মানুষের মন-মনন-অধ্যাত্ম ভাবনার উৎকর্ষতা অর্জনে সহায়তা করে, করে জীবনবোধ গঠনে সহায়তা। তেমন একটি বই আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে- যার নাম “রাসূলের চোখে দুনিয়া”। বাংলাসহ বহুভাষায় অনূদিত বইটির মূল রচয়িতা হযরত ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রঃ)।
এ “কিতাবুয যুহুদ” গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন জনাব জিয়াউর রহমান মুন্সী।

মূলতঃ আজ থেকে প্রায় ১২০০ বছর পূর্বে ইমামুস সুন্নাহ আহমাদ ইবনু হাম্বাল রহিমাহুল্লাহ রচিত ‘কিতাবুয যুহ্‌দ’-এর প্রথম অংশের অনুবাদ ‘রাসূলের চোখে দুনিয়া’ বইটি।

বইয়ের প্রচ্ছদের রূপ ততটা আকর্ষণ করেনি, তবে গোলকের আবর্তে দুনিয়ার স্বরূপ মূল প্রচ্ছদে আনার প্রয়াস ছিল, তাতে সন্দেহ নেই।

বাংলায় অনুদিত বইটির অাকার এবং কাগজের স্পর্শ আপনাকে বইয়ের ভেতরে আকর্ষণ করবে নিঃসন্দেহে। ধীরে ধীরে পড়া শুরু করলে একের পর এক এক মোহনীয় আবেশে বশীভূত হবেন সচেতন পাঠক। আপনি বুঝতে শুরু করবেন এ দুনিয়ার অস্থায়িত্ব, গুরুত্বহীনতা আর তার ঠিক বিপরীতে পরকালীন চিরস্থায়ী জগতের সত্যতা, বিশালতা।

আপনি যদি বিচ্ছিন্নভাবেও এই কিতাব থেকে একটি হাদিস পড়েন, তবে তি আপনার অন্তরকে নাড়িয়ে দেবে। বুকের ভেতরে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করবে। দুনিয়াবি যত পেরেশানি, দুশ্চিন্তা, অশান্তি—সব তুচ্ছ মনে হবে। অন্তরে এনে দেবে প্রশান্তি। বাসায় প্রতিদিন তালীম করার মতো বই এটি।

কত মহব্বতের এ দুনিয়া! সারাদিন দৌড়ে বেড়াই এর পেছনে। নিজের মূল্যবান সময়গুলো ব্যবহার করি এই দুনিয়ার মোহে পড়ে। কিন্তু যার পেছনে পড়ে জীবনটাকে কয়লা করে ফেলি, সে দুনিয়ার মূল্য কতটুকু?

“একবার ভাগাড়ে পড়ে-থাকা একটি মৃত ভেড়ার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রাসূল স. তাঁর সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তো এটি (মৃত ভেড়াটি) তার মালিকের নিকট কতটা তুচ্ছ?”
সাহাবিরা বললেন, “হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল!”

তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, “তাঁর শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! (ভাগাড়ে) ফেলে-দেওয়ার সময় মালিকের নিকট এ ভেড়াটি যতটা তুচ্ছ মনে হয়েছে, আল্লাহ তাআলার নিকট এই দুনিয়া তার চেয়েও অধিক তুচ্ছ।” [রাসূলের চোখে দুনিয়া, হাদীস: ১১৯]।

বইয়ের প্রত্যেক পরতে পরতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের বাণী, বিভিন্ন সহীত হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রজ্ঞাবান লেখক পাঠকের সামনে উপস্থাপন করদে সমর্থ হয়েছেন এ দুনিয়া এক মিথ্যা মোহ, যা মহান রবের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না; পরকালের জীবনই আসল ও স্থায়ী জীবন। আর অসল জীবনের জন্য যারা প্রস্তুতি নেন, প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকেন, তাদের জন্য রয়েছে নিরন্তর।
যেমনটি বলা হয়েছে,
“যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় মাসজিদে আসা-যাওয়া করে, তার প্রত্যেক বার আসা-যাওয়ার সময় আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি করে আবাস প্রস্তুত করে দেন।”
রাসূলের চোখে দুনিয়া, পৃষ্ঠা : ১৮
(হাদীসটি বুখারি, ৬৬২ এবং মুসলিম, ৬৬৯/২৮৫-এও বর্ণিত হয়েছে)।

সত্যিকার অর্থে, দুনিয়াটা সত্যিই এক রহস্যঘেরা জায়গা। এখানে প্রতিনিয়ত মানুষ আসে। তারপর আস্তে আস্তে শৈশব, কৈশোর, যৌবনের সিঁড়ি বেয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে। এরপর একদিন হঠাৎ  প্রস্থান! পাড়ি জমায় পরকালের পথে।
আর যে পরকালের পথে মানুষের গন্তব্য, সেই পরকালের তুলনায় এই দুনিয়াটা কতটুকু গুরুত্ব রাখে?
উদ্ধৃত হয়েছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই না। যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্যে পরকালের জীবনই অধিক কল্যাণময়। তবুও কি তোমাদের বোধোদয় হবে না?” [সূরা আল-আনআম, (০৬) : ৩২ আয়াত]।

এ দুনিয়াটা ধোঁকার এক জগৎ। এটা এমন ইন্দ্রজাল বিছিয়ে রেখেছে যে, পথিককে তার আসল গন্ত্যবের কথায় ভুলিয়ে দিয়েছে। আর ভুলিয়ে দিয়েছে তার প্রধান লক্ষ্যকে। আচ্ছা, এই খেল-তামাশার দুনিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? কোন দৃষ্টিকোণ থেকে এই দুনিয়াকে দেখা উচিত? আর রাসূল স.-এর চোখেই-বা এই দুনিয়াটা কেমন ছিল?

এরূপ শত প্রশ্নের উত্তর জানতে
পড়ুন ‘রাসূলের চোখে দুনিয়া’ বইটি;
যা আপনার সামনে দুনিয়া সম্পর্কে নববি দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে। সাথে সাথে এই দিকটাও স্পষ্ট হবে যে, প্রিয় নবিজি এই দুনিয়ায় কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন উম্মাহর ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের জন্যে।

চট্টগ্রামের “বাতিঘর”, আন্দরকিল্লার প্রসিদ্ধ লাইব্রেরিসমূহে ক্ষেত্রবিশেষে ৩/৪০০ টাকা থেকে ৫/৬০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে বইটির মূল্য।
তবে বইয়ের মূল্য আরো কম হলে সকল স্তরের পাঠকের কাছে তা সহজে পৌঁচানো যেত, হেদায়তের বার্তা পৌঁছাত সুলভে।

বইটি সচেতন পাঠকের হৃদয়ে দাগ কেটে ক্ষণিক এ জগতের মোহ থেকে নিজেকে মুক্ত করে পরকালীন জীবনের মূল লক্ষ্যে ধাবিত করবে, এ আশা করি।
অসাধারণ সব সংকলন, সম্পাদন..
নবীজীর জীবনচরিতপাঠ যেন খুলে দিবে ছোট মনে বিরাট জানালা..

——
মোঃ নাজিম উদ্দিন
lekhokbangladesh.com.
লেখকবাংলাদেশ.কম
০৮- জানুয়ারী-২০২০

লেখাটি লিখেছেন