“না” সমাচার
—–

নিজের নামটার মূল অংশ “না” দিয়ে শুরু বিধায় না শব্দটা কত সহস্রবার লিখতে হয়েছে, তার ইয়ত্ত্বা নেই। জীবনে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দগুলোর একটিও হয়ত এই “না”-ই। জীবনে “না” শব্দটার প্রভাব কেমন? দেখা যাক।

ছোট শিশুকে করা যাবে “না” বলে অনেক কিছু থেকে বারণ করতে হয়, বারণ করি, নিরাপত্তা, শিখন ও সুশৃঙ্খলতার স্বার্থে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যদি অন্যক্ষেত্রেও সে “না” দৃষ্টিভঙ্গি বলবৎ থাকে, তবে “হ্যা” ধীরে ধীরে দূরেই চলে যাবে।

কন্যাশিশুকে রান্নার সরঞ্জামের খেলনা দিয়ে যদি বলি, গাড়ি খেলনা শুধু পুত্রসন্তানের জন্য, তবে কি ছোটবেলায় কন্যাসন্তানের মাথায় তার জীবনের আকাশ সীমাত করে দিচ্ছি না?

ক্রিকেটার বালক। ব্যাটিং করতে চায়, বড়ভাইরা টপ অর্ডারে ব্যাট করতে দেয়না তাকে।বলে, তুই ব্যাটিং পারবি “না”। সিনিয়রদের ব্যাটিং এর সময় প্রথম প্রথম সে দোয়া করে, তারা দ্রুত আউট হয়ে যাক! ধীরে ধীরে সে হারায় ব্যাটিং কনফিডেন্স।
পরে বড়রা বলে, তুই ফিল্ডিং শিখ, বোলিং শিখ। বোলিং-এও দেখা যায়, বড় ভাইয়েরা বলে, তুই পরে বোলিং করিস। এভাবে সে কোনদিকেই উৎকর্ষতা অর্জনে সক্ষম হয় “না”।

আমরা আমাদের ভগিনী, আমাদের বালিকাদের বলি, তুই বিজ্ঞানে নয়, মানবিক বিভাগে পড়বি। বিজ্ঞান কঠিন, তুমি পারবে “না”। এ নেতিবাচকতা তাকে মানবিকেও ভাল করার ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক ভূমিকা রাখে।

“তুমি পড়াশুনা শেষ করে ভাল চাকরী করবে”- এ কথা মাথায় ঢুকিয়ে দেয় পরিবার, সমাজ, পারিপার্শ্ব। ফলে, চাকুরি না পেলে তার মধ্যে কাজ করে বিষণ্নতা আর হতাশা। অনেক ধনীর দুলালকে দেখি, শুধু ভাল পাত্রী পাওয়ার আশায় বিভিন্ন প্রতিষ্টানে চাকুরি নেন, কনের বাবা ভাবেন,ভাল চাকুরেকে কন্যা সম্প্রদান করা গেল!
৫/৬ লক্ষ টাকা খরচ করে ১৫/২৫ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করার জন্য বিদেশ পাড়ি দিতে যুবককে আর্থিক সহায়তা দেন অনেকে, “দুবাইওয়ালা” পাত্রও অনেকের পছন্দ বিয়ের বাজারে, কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হতে চাইলে নাক সিটকানোর লোকের অভাব নেই। কারণ সে মহা-নেতিবাচকতা ‘ব্যবসা তোমাকে দিয়ে হবে’ না”!

কিছু করতে চান। বুদ্ধি নিতে যান। বলবে, “না” এটা সহজ “না’- কিন্তু অনেকে নিজে সেকাজ যুগযুগ করলেও অন্যকে বলে-না, একাজ সহজ না! নতুন কিছু তারা করতেই দিবে “না”! আর আপনিও ভাববেন, এ অবাধ্যতা কেমনে করি-“পাছে” তারা কিছু বলে!
আবার,
বিয়ে করবে যুবক। স্বজন-সমাজ কিংবা তার পরোক্ষভাবে তার কাঁধে ৫/৭ লক্ষ টাকার ঋণের বোঝা তুলে দেই-স্বর্ণ, বাজার, ডেকোরেশনসহ অপ্রয়োজনীয় সব খরচে উদ্বুদ্ধ করে বলে, জীবনে বিয়ে তো একবারই আসে! সে একবারের বোঝা টানতে না পারে নিজের নবসঞ্চয় শেষ করে ক্রেডিট কার্ড, পার্সোনাল লোনের কিস্তি বীভৎস করে অনেককে দাম্পত্য জীবনের প্রারম্ভটা; কারণ অপ্রয়োজনীয় উৎসাহে সে বলতে পারে “না” শব্দটি।

সব “না” নেতিবাচক নয়। যাকে অর্থ ধার দিলে ফেরৎ পাওয়া দুস্কর বা অসম্ভব, সেখানে কী বলবেন, হ্যা, নাকি না?

আকদ, মেহেদি, বিয়ে, বৌভাত, ফিরাফিরি -এক বিবাহানুষ্ঠানে ৫টা দাওয়াত। প্রতিটাতে কমপক্ষে ৩ ঘন্টা ধরলে মোট ১৫ ঘন্টা সময় দিবেন, নাকি মূল প্রোগ্রামে গিয়ে বাকিগুলোকে “না” বলবেন, বিষয়টা আপনার, মূল্যবান সময়টাও যেহেতু আপনারই-অসামাজিক উপাধীটা গায়ে নিতেও হতে পারে বৈ কি!

সমাজে ধর্ষণ নামক হীন কাজের ছড়াছড়ি। যদি বলি, আপনার মেয়েকে কারাতে বা আত্মরক্ষার কৌশল শেখান- তখন বলবেন-না, সমাজ কী বলবে? সেখানে ধর্ষণের বিচার চাইতেও লজ্জিত আপনি, সমাজে মুখ দেখাবেন কীভাবে? পুত্রদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দিন। প্রয়োজনে প্রহার-শাস্তি দিতে না বলবেন না। আবর দোষ যদি আপনার মেয়ে না করে থাকে, তাহলে জোটবদ্ধ হোন, সবাই এগিয়ে আসবে-ধীরে ধীরে নরপশুগণ পালাবে, নচেৎ সমাজ নিম্নগামী হবে দিনদিন।

যে সকল কাজে করা আপনার মূল্যবান সময় যাবে মনে হয়, মনের আগ্রহ-ইচ্ছা নেই, সেটাকে ভদ্রভাবে “না” বলুন- আপনিই জিতবেন কিন্তু!
কোথায় “না” পরিহার করতে হবে, কোথায় সজ্ঞানে “না” যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে- তা অর্জন করার চেষ্টাই বিশাল অর্জন-মনে করি।

বলছিলাম, নিজের নামের আদ্যাক্ষর “না” নিয়ে- ভাবলাম, সেই “না” কাটলে তো “জিম” মেরে ঝিমিয়ে পড়তে হবে- তখন জীবনের চলার পথে অপ্রয়োজনীয় “না” বাদদ দেয়ার প্রশিক্ষণ নিই, প্রয়োজনে সে “না”-কেই ব্যবহার করা শিখি!!

***************
মোঃ নাজিম উদ্দিন
nazim3852@gmail.com
০৫-০৪-২০১৮

লেখাটি লিখেছেন