কিশোর অপরাধঃ আদনান ও কিছু কথা

Sep 12, 2020 | তারুণ্য, ক্যারিয়ার, সাফল্য | 0 comments

Post View : 4
 

গ্যাং, গ্রুপ, কাকা, বড়ভাই, মামু, লিডার, সিনিয়র – ইত্যাদি শব্দগুলো আবারো আলোচিত হয়ে উঠেছে।

Juvenile Delinquency বা কিশোরর অপরাধ নিয়ে একসময় অনুচ্ছেদ লিখার জন্য পরীক্ষায় প্রস্তুতি নিতে হতো ছোটবেলায়। আমরা যারা ১৯৯০/৯১ বা কৈশোরে পা রেখেছিলাম, তাদের কিছু স্মৃতি সমবয়সী অনেকের সাথে মিলে যাওয়ার কথা। তবে অধুনা “Juvenile Politics” শব্দদ্বয় বা অমুক ভাইয়ের আস্থাভাজন শব্দগুলোর দৌড় বা বেগ অনেক!

দলবেঁধে পুকুরে গোসল-সাঁতারে নামলে অনেকক্ষণ পরও পুকুরে থেকে না উঠলে আমাদের মায়েরা বলতেন, “খোরশেদকে বলব?” পরক্ষণেই সবাই ডাঙায়। একই পরিবারের কেউ ছিলেন না খোরশেদ ভাই, বরং আমাদের বাড়ির বড়ভাই ছিলেন মাত্র। আদর-স্নেহের পর শাসনে তিনি সবার ভয়ের কারণ ছিলেন। খোরশেদ বদ্দা কাউকে শাসন করলে সে কিশোরের মা-বাবাকে অভিযোগ করতে পারতাম না কৈশোরে। বরং মা-বাবারা খোরশেদ ভাইকে যখন যেখানে প্রয়োজন শাসন করতে বলতেন। আর আজ? কারো সন্তানকে পরিবারের বাইরের কেউ শাসন করতে গেলেই অনেক ধনী/সচ্ছল পরিবারের অভিভাবক বলেনঃ আর ছেলেকে শাসন করার সে কে?” আর দরিদ্র অভিভাবকের অাবেগী অজুহাত: “আমরা গরীব বলে শুধু আমাদের ছেলেকেই দেখে”…এভাবে সমাজে শাসন করার অধিকার কেন্দ্রীভূত হতে থাকে…

সপ্তাহে দুই দিন হাট বসত অামাদের রমজান আলী হাটে সপ্তাহের শনিবার ও বুধবারের সাপ্তাহিক “হাটবার” ছাড়া অন্যান্য দিনগুলোতে সন্ধ্যার পর বাজারে কেউ দেখলেই পরের দিন ঘরে অভিযোগ চলে আসতো। তাতে বুঝা যায়, সন্ধ্যার পর কিশোরের বাজারে বা দোকানে যাওয়া কতটা restricted বা নিয়ন্ত্রিত ছিল! আর আজ?

সকালে সূর্য উঠার আগেই মক্তবে (আরবি শিক্ষার জন্য) প্রবেশে ব্যর্থ হলেই শাস্তির ব্যবস্থা অনেকের মনে থাকার কথা। পরপর কয়েকদিন অনুপস্থিত থাকলেই মক্তবের হুজুর দুই বা তিনজন সিনিয়র ছাত্রকে পাঠাতেন অনিয়মিত সে ছাত্রকে ঢেকে আনতে। অতঃপর, সে কী শাস্তি! যার অভিজ্ঞতা নেই, সে বলতে পারবেনা! পরিবারের অভিভাবকের কোন অভিযোগ তো নয়ই, বরং সম্মানসহ বাহবা কুড়াতেন মক্তবের সম্মানিত হুজুর। সন্ধ্যার পর কোন মেলায় বা বর্তমানে অপ্রচলিত ভিসিআর (সিনেমা দেখার সেকালের ডিভিডি) দেখার খবর পেলেই পরেরদিনের অনেক শাস্তির মধ্যে একটা ছিল চক দিয়ে মেঝেতে টানা দাগ মুছা, বেত্রাঘাত ইত্যাদি।

সাইকেলে ছড়ে বাজারে যেতে চাইতোনা আমাদের সময়ের কিশোরেরা, কারণ গ্রামের সিনিয়র আর মুরুব্বিদের দেখলেই সাইকেল থেকে নেমে যেতে হতো! তার চেয়ে বরং হেঁটেই পৌছা যেত আগে! মোটর বাইক যখন কিশোরের নিত্য সঙ্গী, তখন মুরুব্বীদের দেখে নেমে সম্মান করার কথা গল্পই ঠেকবে!

মোবাইল এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো কিশোরকে অতি অসামাজিক করে তুলছে, ফলতঃ পরিবারের বাইরে সমাজের বা বাড়ির অন্য বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধার ভয় ইত্যাদি তাদের কাছে কিছুই না!
তাই-

পেরিয়ে আসা সাদা-কালো যুগের এই ‘সাবেক’ কিশোর বর্তমান ‘রঙিন’ ডিজিটাল যুগের অধিক ‘স্মার্ট’ কিশোরদের শ্রদ্ধেয় অভিভাবকগণকে দু-একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছিঃ

১) আপনার সন্তান সন্ধ্যার পর কোথায়-কেন-কার সাথে বাইরে থাকে – তা দেখুন এবং নিয়ন্ত্রণ করুন।

২) আপনার অাশপাশের, সমাজে বসবাসরত আপনার কিশোর সন্তানের বয়োজ্যেষ্ঠদের অনুরোধ বা আহবান করুন আপনার সন্তানের খেয়াল রাখতে। প্রয়োজনে শাসন করার অধিকার দিন।

৩) খুব প্রয়োজন না হলে কিশোর বয়সে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে দিবেন না।

৪) কিশোরের দৈনন্দিন খরচে নজর রাখুন। গতিবিধিও…আপনার কিশোর সন্তানের ভবিষৎ আপনার পর্যবেক্ষণ-শাসন-আদরের উপরও অনেককটা-ই নির্ভরশীল…

মো. নাজিম উদ্দিন:

Nazim3852@gmail.com