এই আমাদের দেশঃ এই আমাদের চিন্তা

Sep 12, 2020 | ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-রাজনীতি | 0 comments

শিল্পোন্নত দেশ জাপানে স্বল্প বা দীর্ঘ দূরত্বে যাত্রা করার জন্য গাড়িতে উঠলেই ছোট সাইজের মুদ্রিত বই বা পাঠক-বান্ধব সাইজের পত্রিকা পড়া শুরু করে দেন যাত্রী। কথা কম, পড়া বেশি। আর আমরা? কথা এত বেশি শব্দে বলি যেন যানবাহনটা পাবলিক নয়, প্রাইভেট! তাছাড়া সবচেয়ে বেশি মূল্যছাড় বা ডিসকাউন্ট (ক্ষেত্রভেদে ৪০-৬০%) দিয়েও বই বিক্রি করতে পারেন না প্রকাশক! যদিও বই কিনে কেউ দেউলিয়া হন না, সবাই জানি!

থাইল্যান্ডসহ উন্নত দেশগুলোতে ধুমপায়ীদের জন্য নির্ধারিত ধুমপান অঞ্চল বা এটিএম বুথের সাইজের কিছু নির্দিষ্ট স্থান আছে। বাইরে কোথাও ধুমপান করলেই জরিমানা। আর আমাদের দেশে যেখানে সেখানে তো আছেই, সাম্প্রতিককালে আইন দ্বারা নিষিদ্ধ হওয়ার পরও পাবলিক প্লেস বা পাবলিক যানবাহনেও ধুমপায়ীদের নিশ্চিন্ত স্থান! কে দেখে? বড়দের সামনে ছোটদের ধুমপানের (অ)শিষ্টাচারের কথা বলার যুগ তো প্রায় শেষই! হায় মানুষ!

নিউজিল্যান্ডসহ উন্নত দেশগুলোতে হাইড্রোলিক হর্ণ শুধু রাতে নয়, দিনেও নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে সবার আগে গাড়ির হর্ণ ঠিক করতে হয়। অবশ্য, এত বেশি হর্ণ বাজে, পথিকও হর্ণ মানে না! তো, তাদের কি দোষ, হয়ত বলবেন, বিকল্প না পেয়ে এম্বুলেন্সের হর্ণ বাজায়! যদ্দেশে যদাচার!

অনেক দেশ রয়েছে যেখানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বা রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে অটো সিগনাল বাতিই যথেষ্ট। ফলে, কোন চালকের দোষে দুর্ঘটনা হলে চালকের প্রথম কাজ থাকে আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেয়া। অতঃপর, নিজের যাত্রা। আর ছোটকাল থেকেই যা দেখে আসছি এ দেশে, তা হল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালক মাশাল্লাহ অক্ষত থাকে। তারপর? হয়ত গাড়ি ফেলে পালায় না হয় গাড়ি নিয়ে আরো কিছু দুর্ঘটনা ঘটিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচায়! হয়ত বলবেন, “আগে জান, তারপর জাহান”! তাছাড়া, যতই ডিজিটাল হই না কেনো, অনেক ক্ষেত্রেই ট্রাফিক পুলিশের দুই হাত অার চার পকেটেই বেশির ভাগ আইন জমা থাকে! (কাউকে আঘাত করার জন্য বলা হয় নি)।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী যখন লিফটের জন্য লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করেন কিংবা পাবলিক বাসে চড়ে অফিস যান, আমাদের দেশে তখনো বস বা কর্তাগণ লাইনে দাড়াতে হবে বলে জনসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ অতিরিক্ত “ভিভিআইপিদের জন্য অতিরিক্ত লিফট” এর ব্যবস্থা থাকে, অপচয় “রোধে” দিনে এক বা দু’বার যা ব্যবহৃত হয়! কিংবা ভিভিআইপিগণ বিশেষ নিরাপত্তায় Wrong সাইডে বীরদর্পে হর্ণ দিয়ে চলে! তাদের সময়ের মূল্য অনেক!

পাবলিক সার্ভিস মানেই অনেক দেশে হোম সার্ভিসের মত! বিদ্যুৎ বিহীন সময় মানে মনে রাখার মত বিরল দিবস! আর আমরা যদি বলি আমাদের দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছে বা ব্যবসায় প্রতিষ্টানে ব্যবসায়বান্ধব উদ্যোগ হিসেবে গ্যাস-বিদ্যুৎ বা ওয়াসা ইপিজেড বা শিল্প জোনে গিয়ে সংযোগ দেয়ার জন্য হাজির হবে -তখন আমার চিন্তাকেই অদ্ভুদ হিসেবে আখ্যা দিবে! কারণ আমরা চিন্তাও করতে পারিনা সার্ভিস কি??

যে দেশ যে কাজে সমৃদ্ধ বা যে দেশের অর্থনীতি যে সেক্টরের উপর নির্ভরশীল, সে দেশে সে সেক্টরের উপর বিশেষায়িত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্টান বা সাজানো গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী করার ব্যবস্থা থাকে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে খনিজসম্পদ বা মাইনিং এর উপর, জাপান-চীনে ষ্টীল স্ট্রাকচার বা গাড়ি নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশনের ব্যবস্থা অাছে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বিশেষায়িত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও তা অপ্রতুল! নদীমাতৃক বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে সেতু-কালভার্ট নির্মাণে কিংবা বঙ্গোপসাগরের তেল-গ্যাস উত্তোলনের জন্য বছরে কোটি কোটি টাকা বা ডলার বিদেশী বিশেষজ্ঞগণ বেতন হিসেবে নিয়ে গেলেও সে বিষয়ে কোন বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় বা ডিগ্রির ব্যবস্থা নেই। প্রথাগত প্রচলিত এ শিক্ষাব্যবস্থার কল্যাণে (!) নিজ দেশের উচ্চশিক্ষিতগণের অনেকে বেকার হওয়া সত্ত্বেও বিদেশী “দক্ষ” কর্মীর সংখ্যা এ দেশে কম নয়! চলে যাচ্ছে
প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও।

অনেক দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ফায়ার ড্রিল (আগুন নেভানো), সাঁতার কাঁটা, আত্মনিরাপত্তা, পারিপাশ্বিক নিরাপত্তা বা নিত্যপ্রয়োজনে বিদ্যুৎ-গ্যাসের ছোট খাটো কাজ, কিছু দক্ষতা, স্কিলস শেখানো হয় স্কুলেই- যা তাদের ছোট বেলা থেকেই আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। আর আমাদের দেশে বড় কর্পোরেট হাউজগুলোতে স্নাতকোত্তর পাশ করা উচ্চশিক্ষিত নির্বাহী, কর্মী-কর্মকর্তাদের ফায়ার ড্রিলিং কিংবা ২০ /২৫ বছরের যুবককে আলাদা করে সাঁতার শেখাতে হয়!

সে শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে? কতদিনে?

কখন বোধোদয় হবে আমাদের? দেশের? দেশের মানুষের?

———

মোঃ নাজিম উদ্দিন
nazim3852@gmail.com
১৫-০২-২০১৮

লেখাটি লিখেছেন